নায়করাজ চলে যাওয়ার দুই বছর

বিনোদন ডেস্ক
বিনোদন ডেস্ক বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:২৩ এএম, ২১ আগস্ট ২০১৯

পশ্চিম বাংলার এক যুবক ১৯৬৪ সালে ঢাকায় পা রেখেছিলেন পরিবারের হাত ধরে। কে জানতো ভাগ্য তার জন্য এখানে এত সাফল্যের গালিচা বিছিয়ে রেখেছে।

ক্যারিয়ার শুরু করেন সহকারী পরিচালক হিসেবে। সেই তিনি হুট করেই হাজির হন নায়ক হয়ে। অধ্যাবসায় আর ভাগ্যদেবী তাকে দু হাত উজাড় করে দিয়েছে। একের পর এক উপহার দেন সুপারহিট সব সিনেমা।

কলকাতায় যখন উত্তম-সৌমিত্ররা সুচিত্রা-সুপ্রিয়া-অপর্ণা-শর্মিলাদের নিয়ে দর্শক মাতাচ্ছেন এপার বাংলায় তখন সুচন্দা-কবরী-শাবানা আর ববিতাদের নিয়ে দর্শক মনে আনন্দ বিলিয়েছেন তিনি। রোমান্স, একশনে দিনে দিনে হয়ে উঠলেন তিনি এদেশীয় সিনেমার রাজা। তিনি নায়করাজ রাজ্জাক।

আজ নায়করাজের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তী অভিনেতা রাজ্জাক। তার মৃত্যুতে চলচ্চিত্র অঙ্গন তথা সারাদেশে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। সেই শোকের দাগ এখনো রয়ে গেছে দর্শকের অন্তরে অন্তরে।

নায়করাজ রাজ্জাকেরর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, পরিচালক সমিতিসহ নানা সংগঠনের পক্ষ থেকে দিবসটিতে নায়করাজ রাজ্জাকের সমাধিতে ফুল দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হবে। রয়েছে স্মরণ সভার কর্মসূচিও। বিটিভি এবং বেসরকারি বিভিন্ন টেলিভিশন দিবসটিতে নায়করাজ অভিনীত চলচ্চিত্র সম্প্রচার করবে বলে জানা গেছে।

নায়করাজের পরিবারের পক্ষ থেকেও কবর জিয়ারত ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

নায়করাজ একাধারে ছিলেন অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক। দুই বাংলাতেই তিনি পেয়েছিলেন জনপ্রিয়তা৷ বাংলা চলচ্চিত্র জগতে দীর্ঘ সাড়ে ছয় দশক এই জনপ্রিয় অভিনেতা দাপটের সাথে কাজ করেছেন। প্রখ্যাত সাংবাদিক আহমদ জামান চৌধুরী তার কাজের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাকে নায়করাজ উপাধি দেন। এরপর এই উপাধির স্বীকৃতি মিলে যায় সবখানে। দল মত নির্বিশেষে তিনি ছিলেন সবার প্রিয় নায়করাজ।

১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে সরস্বতি পূজা চলাকালীন মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের জন্য তার শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাকে বেছে নেন। এতে তিনি নায়ক অর্থাৎ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। শিশু-কিশোরদের নিয়ে লেখা এ নাটকের শিরোনাম ছিল ‘বিদ্রোহী’। এতে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই নায়করাজের অভিনয় জীবন শুরু।

১৯৬৪ সালে রাজ্জাক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। চলচ্চিত্রকার আবদুল জব্বার খানের সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে ‘তের নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ ছবিতে ছোট একটি চরিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। এর পর ‘কার বউ’ ও ‘ডাক বাবু’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

নায়ক হিসেব তার প্রথম চলচ্চিত্র হচ্ছে জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা ’। সেই থেকে তিনি ৩ শতাধিক চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন।

এর বাইরে প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন ১৬টি চলচ্চিত্র। তিনি সাতবার চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার, চলচ্চিত্রের জন্য আজীবন সম্মাননাসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন।

ব্যক্তিজীবনে রাজলক্ষীর সঙ্গে সুখের দাম্পত্যে রাজ্জাক ছিলেন তিন পুত্র ও দুই কন্যার জনক। তার দুই পুত্র বাপ্পারাজ ও সম্রাটও বাবার মতোই নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত৷

শেষ জীবনে নানা অসুখে আক্রান্ত ছিলেন নায়করাজ। মৃত্যুর পর তাকে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। বাপ্পারাজ, সম্রাট, জায়েদ খান ও শাকিব খান- এই চার নায়কের কাঁধে চড়ে শেষ নিদ্রায় যান ঢাকাই সিনেমার রাজা রাজ্জাক।

এলএ/এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।