হুমায়ূন আহমেদের যেসব গানের জাদুতে মুগ্ধ শ্রোতারা

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৩৬ পিএম, ১৯ জুলাই ২০১৯

একজন সাহিত্যিক হয়েও হুমায়ূন আহমেদের পরিচয় বা গ্রহণযোগ্যতাটা এসেছ তার বহুমাত্রিক বিকাশে। তার কথাসাহিত্য যেমন পাঠকের মন জয় করেছে তেমনি তার নাটক সিনেমাও দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। তার লেখা বেশ কিছু গান এখনও ঘুরে ফিরে বেড়ায় মানুষের মুখে মুখে। গানগুলোর জনপ্রিয়তা যেন একটু বেশিই। 

এসব গানে এসেছে মাটি ও মানুষের গল্প, প্রেমের হাহাকার, জল, জোছনা, কদম, বর্ষা! তারমধ্যে সুপারহিট হলো ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবির ‘একটা ছিলো সোনার কন্যা’ গানটি। শুরুর দিকে রীতিমত জাতীয় গানে পরিণত হয়েছিলো গানটি। 

এরপর ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’, ‘ও কারিগর দয়ার সাগর’, ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়’, ‘চাঁদনি পসরে কে’ গানগুলো জয় করে নিয়েছে বাংলা গানের শ্রোতাদের মন। হারিয়ে যাবার নয় ‘যদি মন কাঁদে’, ‘বরষার প্রথম দিনে’, ‘আমার ভাঙ্গা ঘরে অবাক জ্যোৎস্না ঢুইকা পড়ে’, ‘আমার আছে জল’ ‘তোমার ঘরের সামনে ছোট্ট একটা ঘর বানাব গো’ গানগুলোও। প্রথমে শহুরে শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় হলেও দিনে দিনে ‘যদি মন কাঁদে’ গানটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছেই।

বিরহকাতর সুরেও যে প্রেমের কথা বলা যায়, তা বাঙালিকে প্রথম শিখিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ-এরপর হুমায়ূন। ‘যদি মন কাঁদে’ সেই গান। যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো, চলে এসো এক বরষায় ... যদিও আকাশ থাকবে বৈরী / কদমগুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি... নামিবে আঁধার বেলা ফুরাবার ক্ষণে / মেঘমল্লার বৃষ্টিরও মনে মনে... কদমগুচ্ছ খোঁপায় জড়ায়ে দিয়ে / জলভরা মাঠে নাচিব তোমায় নিয়ে... হুমায়ূনের লেখা এই গানটিকে অনেকেই মনে করেন রবীন্দ্রসঙ্গীত।

হুমায়ূন আহমেদের লেখায় সবসময় প্রাধান্য পেয়েছে ফোক আর রোমান্টিসিজম, এসেছে সুফিবাদও। তার গানগুলোতেও সেই ছাপ পাওয়া যায়। ভাটি গানের ভাব বা আধ্যাত্মবাদ তাতে প্রভাব ফেলেছে হুমায়ূনের গানে। তিনি মূলত এই দুই ধরনের গানই লিখেছেন। গীতিকার হবার শুরুর দিকে তিনি ভাববাদী গানই লিখেছেন। রোমান্টিক গান লেখা শুরু করেছেন শাওনের সঙ্গে প্রেম হবার পর।

তবে না বললেই নয়, হুমায়ূন আহমেদের গানের সফল দুই কারিগর হলেন মকসুদ জামিল মিন্টু এবং পরবর্তীতে এসআই টুটুল। হুমায়ূন আহমেদের কথায় সুর-তাল মিলিয়ে সবগুলো গানকে শ্রোতাদের কাছে সহজভাবে তুলে ধরতে পারতেন তারা।

হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘মাথায় পড়েছি সাদা ক্যাপ’, ‘যদি ডেকে বলি এসো হাত ধরো চলো ভিজি আজ বৃষ্টিতে’, ‘নদীর নাম ময়ূরাক্ষী’, ‘যে থাকে আঁখি পল্লবে তার সাথে কেন দেখা হবে’, ‘চলো না যাই বসি নিরিবিলি’, ‘না মানুষী বনে’, ‘হাবলঙ্গার বাজারে’ ইত্যাদি গানগুলো সবসময় শ্রোতাদের মন ভরাবে।

গীতিকার ও গানের মানুষ হিসাবেও হুমায়ূন আহমেদ স্বতন্ত্র ছিলেন আর অন্যসব কিছুর মতো। তিনি যেখানে চলতে চেয়েছেন নিজের মনের মতো করে আপন বলয় তৈরি করতে চেয়েছেন। আর তিনি সেটা পেরেছেন দুর্দান্তভাবে। নানা বয়সের মানুষের জন্য তিনি নানারকম সৃষ্টি রেখে গেছেন। 

বলা হয়ে থাকে মধ্যবিত্ত জীবনের সুখ-দুঃখের বাহক তিনি। তবে পৌঁছে গিয়েছেন সব শ্রেণির পাঠক-দর্শক-শ্রোতাদের কাছে। এপার-ওপার দুই বাংলাতেই হুমায়ূনের জনপ্রিয়তা শীর্ষে। তার সাহিত্য নিয়ে যেমন মাতামাতি চলে তেমনি তার চলচ্চিত্র নিয়ে হয় আলোচনা। আর তার গানগুলো বিনোদনের জোছনা হয়ে নামে।

এমএবি/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।