ঢাকাই ছবিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে চাই
তার পুরোনাম নুসরাত ফারিয়া মাজহার। টোল পড়া গালের মিষ্টি হাসি আর লাবন্যমাখা গ্ল্যামারের বদৌলতে খুব স্বল্প সময়েই মডেলিং এবং উপস্থাপনায় তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তিনি। পড়াশুনা করছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ-তে। সম্প্রতি দেশের শীর্ষ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার হাত ধরে তার অভিষেক হয়েছে চলচ্চিত্রের রঙিন দুনিয়ায়।
প্রথম ছবিটি মুক্তি পাওয়ার আগেই বলিউডের সুপারস্টার ইমরান হাশমির নায়িকা হওয়ার খবরে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন ফারিয়া। এদেশের শোবিজে এখস সর্বত্রই তার গল্প।
ক্যারিয়ারের এই সুযোগটিকে কীভাবে দেখছেন নায়িকা নিজে? কী-ই বা তার আগামী দিনের পরিকল্পনা? পাশাপাশি প্রথম চলচ্চিত্র ‘আশিকী’তে কাজের অভিজ্ঞতাসহ নানা বিষয় নিয়ে নুসরাত ফারিয়া আলাপে মেতে উঠেছিলেন জাগো নিউজের সাথে। সঙ্গে ছিলেন নাহিয়ান ইমন
জাগো নিউজ : প্রথমেই জানতে চাই বলিউডের ছবিতে ডাক পাওয়া প্রসঙ্গে...
ফারিয়া : ভারতে যখন আশিকী ছবির শুটিং করি তখন সেই সেটে বিষ্ণু দত্তের ছবি ‘গাওয়াহ : দ্য উইটনেস’র কাস্টিং পরিচালক অপূর্ব জোসেফ উপস্থিত ছিলেন। এরপর আমার পারফর্ম করা একটি গান দেখে তিনি পছন্দ করেন এবং ছবির কাজের ব্যাপারে আমাকে অফার করেন। বললেন, ছবির নায়ক ইমরান হাশমি ও নওয়াজ উদ্দিন সিদ্দিকী। ওপারের পায়েল থাকবে। আমি ইমরানের বিপরীতে কাজ করবো। শুনেই আমি তো চমকে উঠি! জানাই সুযোগ পেলে অবশ্যই কাজ করবো। পরে তিনি বলেছিলেন পরিচালকের সাথে কথা বলে আমাকে কনফার্ম করবেন। অবশেষে আমার জন্মদিনের দিন তিনি আমাকে সারপ্রাইজটি দিলেন। অবশ্য তিনি জানতেন না যে ওইদিন আমার জন্মদিন ছিলো।
জাগো নিউজ : ছবির গল্পটি সম্পর্কে কিছু জানেন?
ফারিয়া : এটি থ্রিলিং ধরণের ছবি হবে। এখানে ইমরান হাশমি একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তার বিপরীতে থাকবো আমি। গল্পটি বেশ জমজমাট মনে হয়েছ। থ্রিল আছে, ভালোবাসার ফিল আছে।
জাগো নিউজ : কবে নাগাদ শুটিং হবে বলতে পারেন?
ফারিয়া : আমাকে বলা হয়েছে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী নভেম্বর মাসেই এ ছবির কাজ শুরু হবে।
জাগো নিউজ : ‘গাওয়াহ: দ্য উইটনেস’ ছবিটিতে অভিনয়ের জন্য আপনি পারিশ্রমিক হিসেবে নাকি ২৫ লাখ রুপি (বাংলাদেশি টাকা প্রায় ৩০ লাখ) পাচ্ছেন?
ফারিয়া : প্রাথমিক কথাবার্তা এমনটিই হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে বলিউডের মতো এত বড় জায়গায় নতুন হিসেবে আমাকে তারা যথাযথ সম্মানই দিচ্ছেন। আমার জন্য ওখানে সুযোগ পাওয়াটাই বড় কথা। টিকে থাকেলে খ্যাতি-অর্থ আপনাই ধরা দিবে। আপাতত আমি নিজেকে প্রমাণ করতে চাই। তাছাড়া বডিউডের ছবিতে আমার অভিনয়; পারিশ্রমিক- এ সবকিছুই দেখাশোনার দায়িত্বে আছে বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া।
জাগো নিউজ : বলিউডে ইমরান হাশমি ‘সিরিয়াল কিসার’ হিসেবে খ্যাত। তার সব ছবিতেই নায়িকাদের সাথে ঘনিষ্ট হয়ে চুমুর দৃশ্য দেখা যায়। এবার তো আপনার পালা....
ফারিয়া : আসলে এখন পর্যন্ত আমি গল্প যতোটা শুনেছি সেখানে এমন কোনো দৃশ্যের কথা শুনিনি। কিন্তু ফিল্মে অনেক কিছুই হয়। আর সেখানে কাজ করতে গেলে তা মেনেও নিতে হয়। তাই ইমরান হাশমির সঙ্গে চুম্বন দৃশ্য নিয়ে আপাতত কোনো মাথা ব্যাথা নেই। যত ভাবনা এ ছবিতে নিজের চরিত্র কীভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়, সেটা নিয়ে।
জাগো নিউজ : অন্য ভাষার ছবি। সমস্যা হবে না?
ফারিয়া : একদমই না। কারণ ওরা আমার অডিশন নিয়েছে। সেখানে আমি হিন্দী ভাষাতেই সংলাপ বলেছি। সব দেখেশুনেই তারা আমাকে কনফার্ম করেছে।
জাগো নিউজ : এবার জানতে চাই ‘আশিকী’ ছবিটি নিয়ে কি ভাবছেন?
ফারিয়া : এটি আমার জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র। এছাড়া দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত বিগ ধামাকা। এ ছবিটির জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করেছি, অনেক নিয়ম-কানুনের মধ্যে চলেছি। সেইসাথে ছবিটির জন্য আমাকে বিভিন্ন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এটি নিয়ে আমার অনেক প্রত্যাশা। দর্শকরা ছবিটিকে ভালোভাবে গ্রহণ করলেই আমার সকল শ্রম সার্থক হবে।
জাগো নিউজ : নায়িকা হিসেবে প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিলো?
ফারিয়া : অতীতে আমি প্রায় হাজারবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি। তবে নায়িকা হিসেবে ক্যামেরার সামনে ‘আশিকী’তেই প্রথম দাঁড়ালাম। এটা বলবো না যে প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে নার্ভাস ছিলাম। আমার সাথে যারা ছিলেন তারা সবাই খুব হেল্পফুল ছিলেন। সবমিলিয়ে বলবো দারুণ অভিজ্ঞতা ছিলো। এছাড়া ছবিতে অনেক বড় মাপের অভিনেতারা কাজ করেছেন। তাদের সঙ্গ পাওয়াটাও অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। আমি সেটা পেয়েছি।
জাগো নিউজ: ছবিতে আপনার চরিত্র সম্পর্কে বলুন...
ফারিয়া : ‘আশিকী’তে আমার চরিত্রের নাম শ্রুতি। একজন বাংলাদেশি মেয়ে কিন্তু লন্ডনে বড় হয়েছে। বিদেশে বড় হলেও বাঙালি কৃষ্টি-কালচার তার ভিতরে সে লালন করে। কোনো দম্ভ থাকে না। ছবিতে একদিকে সে তার পরিবারকে যেমনভাবে ভালোবাসে ঠিক তেমনই সে তার ভালোবাসার মানুষকেও ভালোবাসে।
জাগো নিউজ : সেই পরিবার, প্রেম-গতানুগতিক ভাবনা। দর্শক ‘আশিকী’ ছবিটি কেনো দেখবেন?
ফারিয়া : মানুষ মনের মধ্যে একটু আনন্দ-বিনোদনের রসদ খুঁজে পাবার জন্যই ‘আশিকী’ দেখবে। আবহ এক হলেও রোমান্টিকতা, অ্যাকশান, কমেডির ভিন্নতা- সব মিলিয়ে ছবিটি একটু পরিপূর্ণ প্যাকেজ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। দর্শকদের ভালো লাগবে।
জাগো নিউজ : আপনার কাছে সুপারহিট ছবির সংজ্ঞা কী?
ফারিয়া : ভালো ডিরেকশন এবং প্রডাকশন হাউজ, হৃদয় ছোঁয়া গল্প, হিরো-হিরোইনসহ সকলের অভিনয় দর্শকদের কাছে ভালো লাগা এবং প্রেক্ষাগৃহে শো-চলাকালীন হাউজফুল থাকা। কিংবা সব শ্রেণির দর্শক সমাদৃত ছবিই সুপারহিট ছবি।
জাগো নিউজ : জাজের বাইরে অন্যদের ছবিতে আপনাকে দেখা যাবে?
ফারিয়া : কেনো নয়? যদি ব্যাটে-বলে টাইমিং হয় অর্থাৎ আমি যেমনটি চাই যদি তেমন কোনো ছবির অফার আসে তবে অবশ্যই দেখা যাবে। জাজ মাল্টিমিডিয়া থেকে আমাকে এমন কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি যে তাদের ছবি ছাড়া অন্যদের সাথে কাজ করতে পারব না।
জাগো নিউজ : মাহিকে জড়িয়ে বাজারে আপনাকে নিয়ে অনেক কথাই শোনা যায়। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
ফারিয়া : বাজারে অনেক কথাই রটে। সব কান দিতে নেই। আমি কারো প্রতিদ্বন্দ্বী নই। কারো শত্রুও নই। মাহি ও আমি দুজনেই শিল্পী। কাজ করাই আমাদের উদ্দেশ্য। চলচ্চিত্রে ও আমার সিনিয়র। ওর কাজ আমার নিজেরও ভালো লাগে। বর্তমানে প্রতিযোগিতার বাজার। এখানে যে ভালো করবে সেই টিকে থাকবে। আমি সবসময় যে কাজটি করি সেটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেই। জাজে এসেছি এটা আমার কাছে একটি মিশন স্বরূপ। এখানে আমি নিজের যোগ্যতা দিয়ে এসেছি। যোগ্যতা দিয়েই টিকে থাকতে চাই।
জাগো নিউজ : বাংলা চলচ্চিত্রে কাউকে ফলো করেন?
ফারিয়া : না, সেভাবে কাউকে ফলো করি না। তবে অনেকের কাজ ভালো লাগে।
জাগো নিউজ : অভিনয় নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
ফারিয়া : সবে তো রূপালি পর্দায় কাজ শুরু করলাম। জানিনা কতদূর যেতে পারবো। ইচ্ছা আছে বছরে যাচাই-বাচাই করে দুই-তিনটা ছবিতে কাজ করবো। তবে আমার বিশ্বাস দর্শকদের ভালোবাসা থাকলে আমি আগামীতে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে পারবো। মনে প্রাণে আমি বাংলা চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে চাই। আর এটি হবে একজন বাংলাদেশি শিল্পী হিসেবে আমার জীবনের সেরা অর্জন।
এনই/এলএ