সিনেমার লোকসানের কান্না থামাতে পারে ই-টিকিটিং

মাসুম আওয়াল
মাসুম আওয়াল মাসুম আওয়াল , স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: ০৫:০৮ পিএম, ০২ জুলাই ২০১৯

ঢাকাই সিনেমার কোনো বক্স অফিস নেই। তাই দেখা যায় ঢাকাই কোনো সিনেমা মুক্তির পরের সব হিসাব লুকানো থাকে কোনো এক ধোঁয়ার কুণ্ডুলির মধ্যে। এখানকার সিনেমার হিট কিংবা ফ্লপের ব্যাপারটা নির্ভর করে সিনেমার আওয়াজের ওপর।

যেসব সিনেমা নানা প্রচারণার মধ্য দিয়ে আলোচনায় থাকে সেসব সিনেমাকে ব্যবসাসফল হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। আবার প্রযোজক বা ওই সিনেমা সংশ্লিষ্টদের ঘোষণা অনুযায়ী অনেক ব্যবসা সফল সিনেমার নাড়ি নক্ষত্রের খোঁজ নিতে গেলে হতাশাজনক খবরের সন্ধান মেলে। বাইরে সিনেমার হিট হিট রব উঠেছে এদিকে সেই সিনেমার লগ্নিকারক প্রযোজকের হয়তো মন খারাপ!

সিনেমার মানুষদের চোখে দেখা খুব পরিচিত একটি দৃশ্য হলো- এখানে প্রযোজকরা হাসতে হাসতে আসেন, ফিরে যান কাঁদতে কাঁদতে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে সিনেমার প্রযোজক হতে এসে ব্যবসার মূলধন হারিয়ে পথে বসার রেকর্ডও কম নয়। সিনেমা ভালো ব্যবসা করার পরও সিনেমা হলে দুর্নীতিসহ সুক্ষ নানা কারণে ঠিক মতো লভ্যাংশ বুঝে পান না প্রযোজকরা।

এই চিত্র বদলাতে আলোচনায় উঠে আসছে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা। সিনেমার মানুষদের অনেকেই ভরসা রাখতে চাইছেন ই-টিকেটিংয়ের ওপর। সিনেমার ভাগ্য ফেরাতে এখন ই-টিকেটিং প্রয়োজন বলে মন্তব্য করছেন অনেক প্রযোজক ও পরিচালক নেতারাও।

সম্প্রতি ‘দাগ হৃদয়ে’ সিনেমার প্রযোজক কামাল আহমেদ বলছিলেন তার সিনেমায় ১ কোটি ২০ লাখ  টাকা খরচ করে বানানো সিনেমা থেকে পুরো ১ কোটি টাকাই লস হয়েছে। ৪০ হলে সিনেমা মুক্তি দিয়ে ঠিকমতো টাকা বুঝে পাননি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, ই-টিকেটিংয়ের ব্যবস্থা থাকলে এতটা মন্দ অবস্থায় পড়তে হতো না তাকে।

এ বিষয়ে প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা সিনেমা রিলিজের সময় হলে প্রতিনিধি পাঠাই। কোনো কোনো সময় শতাধিক প্রতিনিধি নিযুক্ত করা হয়। এতোগুলো লোকের মধ্যে সবাই তো আর ভালো হয় না, অসাধুও থাকে। তারা হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোহসাজশ করে আমাদের সঠিক সেলের হিসাব দেয় না।

দেখা যাচ্ছে এক লাখ টাকা আয় হয়েছে বলছে ৬০ হাজার। ই-টিকেটিং হলে অনেক ভালো হবে। এতগুলো প্রতিনিধি রাখার প্রয়োজন হবে না। সব দিক থেকেই প্রযোজক লাভবান হবেন।’

‘২৭ জুলাই প্রযোজক সমিতির নির্বাচন। আমরা জয়ী হলে তিনটি কাজ করবো। বাংলাদেশে সরকারিভাবে ৫০০ সিনেপ্লেক্সের প্রজেক্টের কাজ বেগবান করতে সচেষ্ট হবো। এছাড়া তথ্য মন্ত্রণালয় ৬৪টি জেলায় ৬৮টি তথ্যকেন্দ্র করবে। ৬৮ তথ্যকেন্দ্রের সঙ্গে ৬৮ সিনেপ্লেক্স যোগ করা হয়েছে। ৪৪৪টি উপজেলায় বিনোদন কেন্দ্র হবে সেই বিনোদন কেন্দ্রে একটি করে সিনেপ্লেক্স হবে। সবগুলোতেই ই-টিকেটিং যেন চালু করা হয় সেই ব্যবস্থা করবো’- যোগ করেন খসরু।

তিনি আরও বলেন, ‘এখন যেসব হল আছে সেগুলোতে যেন মিনিমাম ২কে রেজুলেশনের প্রজেক্টর বসানো হয় সেই ব্যবস্থা করবো। সাত বছর ধরে প্রযোজক সমিতি নেই। প্রযোজক সমিতি কমিটি গঠন হলে আমরা এই কাজগুলো ঠিক মতো বাস্তবায়ন করতে পারবো বলে আশাবাদী।’

মধুমিতা হলের মালিক ও প্রযোজক নেতা ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘ই-টিকিটিং তো অবশ্যই ভালো। এটা মডার্ন কনসেপ্ট। তবে এর মাধ্যমে চুরি কতোটা বন্ধ করা যাবে আমি জানি না। যে চোর সে যে কোনো মাধ্যমেই চুরি করবে।

ই-টিকেটিং হলে সিনেমা হলের মালিকদের কিছু খরচ বাড়বে। কারণ এটা কম্পিউটারের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে। দক্ষ লোকও প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে কিন্তু লাভও আছে। সেটা হচ্ছে টিকিট প্রিন্ট করার ঝামেলা থাকবে না কোনো। আমার মনে হয় ই-টিকিটিং চালু হওয়াই জরুরি। প্রযুক্তির এই সময়ে তো এটা দরকারও। তাছাড়া কোন সিনেমার কী অবস্থান সেটাও জানা যাবে কোনে রকম মিথ্যাচার ছাড়াই।’

জুলাই-আগস্ট মাসের মধ্যেই মধুমিতা সিনেমা হলের ওয়েব পেজ ও ই-টিকিটিং একসঙ্গে চালু হবে বলে নিশ্চিত করলেন ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ।

এমএবি/এলএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।