যে কারণে মান্নার ‘আম্মাজান’ ছবিটি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শাবানা

মাসুম আওয়াল
মাসুম আওয়াল মাসুম আওয়াল , স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: ০৫:১৮ পিএম, ২৫ জুন ২০১৯

‘আম্মাজান’ ছবিটি নির্মাণের প্রস্তুতি পর্বেই এই ছবির নির্মাতা কাজী হায়াতের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিল। সিনেমাটি সুপারহিট হয়েছে। ছবিটি নিয়ে কাজী হায়াৎ যেমন গর্ব করেন তেমন ছবিটি নিয়ে কিছু আক্ষেপও রয়েছে তার মনে।

২০ বছর আগে আজকের এই দিনে (২৫ জুন) মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। এই উপলক্ষেই ছবিটি নিয়ে কথা বলেছেন নির্মাতা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের শ্রদ্ধেয় অভিনেত্রী শবনম এই ছবিতে আম্মাজান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন তিনি। মুগ্ধ করে দিয়েছেন দেশের দর্শকদের। এতগুলো দিন পেরিয়েও শবনম ‘আম্মাজান’ হিসেবে সবার মনে অন্যরকম জায়গা নিয়ে আছেন।’

তবে মজার বিষয় হলো আমি প্রথমে ছবিটিতে আম্মাজান চরিত্রে আমাদের কিংবদন্তি শাবানাকে চেয়েছিলাম। তাকে মেকআপ রুমে বসে ছবির গল্পটাও শুনিয়েছিলাম। ছবির গল্প শুনতে শুনতে কেঁদেছিলেন শাবানা।

ছবির জন্য শিডিউল দেবেন বলে কথাও দিয়েছিলেন। কথা বলে আসার পরদিন হঠাৎই উনি না করে দিলেন।

আমাকে ডেকে বললেন, ‘হায়াৎ আমার ছবিটা করা হবে না। আমি বললাম কেন? উনি বললেন, এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইবেন না। শুধু শোনেন আমি যাদের সঙ্গে নায়িকা হচ্ছি তারা কেউ চায় না আমি এই ছবিতে অভিনয় করি। তারা আপত্তি জানিয়েছে বলেছে, আপনি যদি মান্নার মা হন, তাহলে আমাদের সঙ্গে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করবেন কীভাবে!

আপনি সব সময় আদর্শ নারীর চরিত্রে অভিনয় করেন, কেন হঠাৎ ধর্ষিতা নারীর চরিত্রে অভিনয় করবেন?’ আমি বললাম সব যুক্তিই এই গল্পের কাছে হার মানবে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। শাবানার ইচ্ছা থাকার পরও এই ছবিতে অভিনয় করা হয়নি তার।

এরপর ছবিতে শবনমকে নেওয়ার গল্পও শোনান কাজী হায়াৎ। তিনি বলেন, ‘শাবানা না করে দেওয়ার পরে সেই সময়ের সাংবাদিক আজাচৌ, ফটোগ্রাফার বেলাল, আওলাদ হোসেন আমাকে পরামর্শ দিলেন মায়ের চরিত্রে শবনম ম্যাডামকে নেওয়ার ব্যাপারে। শবনম ম্যাডামকে গল্প শোনালাম। উনি একবাক্যে রাজি হয়ে গেলেন।’

কাজী হায়াৎ বলেন, ‘আরও মজার গল্প আছে ছবিটি নিয়ে। এ ছবির প্রযোজক ছিলেন ডিপজল। উনি সেন্সর হওয়ার পর ছবি দেখে বললেন ছবিটা চলবে না। কারণ হিসেবে বললেন এ ছবিতে তো কোনো অ্যাকশন নেই। আমি বললাম, অ্যাকশন নাই মানে! মারামারি করাই কি শুধু অ্যাকশন।’

ছবিটিতে নায়ক হিসেবে মান্নাকে নিতেও আপত্তি জানিয়েছিনে প্রযোজক ডিপজল। তাদের মধ্যে সেই সময় সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিলে। হুমায়ুন ফরিদীকেও নেওয়ার কথা হয়েছিল। এর আগেই আমার অনুরোধে মান্না সম্পর্ক ভালো করে ফেললো ডিপজলের সঙ্গে, অনেকটা নিজে পরাজয় স্বীকার করেই। পরে ডিপজল নিজেই মান্নাকে নিলো।

কালজয়ী এই ছবি মুক্তি পেতেও নানা ঘাত প্রতিঘাত পার করতে হয়েছে। কাজী হায়াৎ বলেন, ‘ছবিটা ছয় মাস সেন্সরে আটকে ছিল। কী কারণে আটকে রাখা হয়েছিল আজও আমি বুঝতে পারিনি। একটি ছবি বিভিন্ন কারণে আটকানো হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তদবিরে এই সিনেমার মুক্তির ব্যবস্থা করেছিল ডিপজল।

৪০ বছরের চলচ্চিত্র জীবনে প্রতিনিয়ত আমি বিভিন্ন তীর দ্বারা বিদ্ধ হয়েছি। চলচ্চিত্রের মানুষদের কাছে হিংসা, পরশ্রীকাতরতা, ঈর্ষার তীরে আমি জর্জরিত হয়েছি।’

সফলতার গল্পটি কেমন? কাজী হায়াৎ বলেন, ‘ছবির ৬০টা প্রিন্ট করা হয়েছিল। আমার জীবনের মিরাকেল এই ছবিটি। এটা যেদিন মুক্তি পায় তার আগের দিন টেবিল মানি ও গান বিক্রি করে ছবির প্রযোজক ১ কোটি চার লাখ টাকা নিয়ে ঘরে ফিরতে পেরেছিল।

ছবির খরচ ছিল ১ কোটি ২ লাখ টাকা। মুক্তির আগে ২ লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। আর ‘আম্মাজান’ মুক্তির পরের কথা তো সবার জানা। মাসের পরে মাস হলে চলেছে। ছবিতে আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া ‘আম্মাজান’ গানটি পানির স্রোতের মতো ভাসিয়ে নিয়ে গেল দর্শক-শ্রোতাদের।

বাংলাদেশে কালজয়ী ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হয়ে আছে ‘আম্মাজান’, এটা আমার গর্ব।

এমএবি/এলএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।