অভিনয় ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না


প্রকাশিত: ১২:৩০ পিএম, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

উপমহাদেশের কিংবদন্তী অভিনেতা ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্ব সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ৮২ বছর বয়সেও তিনি সজীব। বয়সের ভারে তিনি নুয়ে পড়েননি। অভিনয়-লেখালিখি-আবৃত্তি সবখানে রয়েছে তার সমান পদচারণা।

গুণী এই শিল্পী গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশ নিতে বাংলাদেশে এসেছেন শুক্রবার। খ্যাতিমান এই অভিনেতা শনিবার সকালে জাতীয় নাট্যশালার সেমিনারকক্ষে সাংবাদিক ও নাট্যকর্মীদের মুখোমুখি হন।

প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপি প্রাণবন্ত আড্ডায় অনেক কৌতূহলোদ্দীপক প্রশ্নের উত্তর দেন এবং বর্ণাঢ্য জীবনের নানা বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেন তিনি। আলাপচারিতার একফাঁকে উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তার দীর্ঘ পঞ্চান্ন বছর অভিনয় ক্যারিয়ারের নানা অজানা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘সেই শৈশব কাল থেকে আজ অবধি অভিনয় ছাড়া আমি অন্য কিছু ভাবিনি। অভিনয়টা সবসময় বুকের মধ্যে লালন করতাম। অন্য যা কিছু করেছি সবই ছিল ভালো লাগার বহিঃপ্রকাশ।’

সাংবাদিকদের পাশাপাশি সৌমিত্রকে প্রশ্ন করেন সৈয়দ হাসান ইমাম, কেরামত মওলা, ড. ইনামুল হক, মোহাম্মদ বারী, জাহিদ রিপন, চন্দন রেজাসহ নাট্য, সংস্কৃতি কর্মীরা।

এছাড়া সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তার অভিনয় জীবনের শুরু, সুদীর্ঘ কর্মজীবনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

নিজের অভিনয় শুরু নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাবা একজন সংস্কৃতিমনা মানুষ ছিলেন। অভিনয় ও আবৃত্তির প্রতি ঝোঁক ছিল তার। কিন্তু তখনো অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়ার প্রশ্নটি ওঠেনি। সে কারণেই হয়তো বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে ওকালতি পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। কিন্তু একান্ত নিমগ্নতায় বাবাকে অভিনয় আর আবৃত্তিটাই করতে দেখেছি। এ সব দেখেই এক সময় অভিনয় ও আবৃত্তির প্রতি আগ্রহ বাড়ে। বাবা আমাকে বোঝাতেন কীভাবে অভিনয় করতে হয়, আবৃত্তি করতে হয়। এভাবে চিন্তার ক্রমাগত উৎকর্ষতায় পরবর্তীতে কলকাতায় শিশির কুমার ভাদুরীর অভিনয় দেখে অভিনয়ের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ বাড়ে। কথার একটু মোড় ঘুরিয়ে তিনি বলেন, অভিনয় যে করব, সে অঙ্গনের মানুষের ভালবাসা কাড়ব, সে নিয়ে আমার মধ্যে এক ধরনের হীনমন্যতা ছিল। আপনারা নিশ্চয়ই আজকের এই প্রতিষ্ঠিত সৌমিত্রকে দেখে ভাবছেন এমন একজন লোকের অভিনয়ে আসার ক্ষেত্রে হীনমন্যতা কেন? কারণ ছেলেবেলায় আমি দেখতে তেমন সুদর্শন ছিলাম না। ভাবতাম সংকোচ ও রুগ্ন দেহ নিয়ে কীভাবে আমি এই পথ পাড়ি দেব?’

সৌমিত্র আরো বলেন, ‘এম এ পড়াকালীন পথের পাঁচালি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন জগদ্বিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায়। তিনি এর দ্বিতীয় পর্ব ‘অপরাজিত’ নামে চলচ্চিত্র নির্মাণের কথা ভাবতে শুরু করেন। এটার জন্য একজন অভিনেতা খুঁজতে লাগলেন। সত্যজিৎ বাবু তার সহকারীর বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারেন আমার নাম। আমি তখন অল ইন্ডিয়া রেডিওতেও কাজ করি। অভিনয়ের প্রতি বেশ আগ্রহী। তা জেনেই তিনি আমাকে ডাকলেন। গেলাম। সত্যজিৎ বাবু আমাকে দেখামাত্র বললেন, ‘আরে না না তোমার বয়সটা একটু বেশি মনে হচ্ছে।’ প্রথমে না করলেও পরে নিজেই আগ্রহভরে নিলেন। সুধীজনের আগ্রহ ও দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ায় ছবিটির পর তিনি আবার পরবর্তী সিনেমা নির্মাণের কাজে হাত দেন। সেটির নাম ‘অপুর সংসার’। আমার সঙ্গে কোনোরকম কথা না বলেই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন অপুর সংসারে আমার কাজ করতে হবে। এভাবেই শুরু। তার পর একের পর এক হাঁটা অভিনয় জগতে।’

এ মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দ্র মজুমদার, হাসান ইমাম, গোলাম কুদ্দুছ, ড. এনামুল হকসহ আরো অনেকে।

এনই/এলএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।