জমকালো আয়োজনে শুরু দুই বাংলার নাট্যোৎসব
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে দুই বাংলার মঞ্চ নাটক নিয়ে ‘গঙ্গা-যমুনা নাট্য উৎসব-২০১৫’। জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে শুক্রবার বিকেলে চতুর্থবারের মতো শুরু হয় নয় দিনব্যাপি দুই বাংলার এই নাট্য উৎসবের।
জমকালো আয়োজনে প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে যৌথভাবে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলার দুই কিংবদন্তি অভিনয় শিল্পী কলকাতার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও বাংলাদেশের ফেরদৌসী মজুমদার। এর আগে ‘উজ্জ্বল দিন, ডাকে স্বপ্ন রঙিন’ গানের সঙ্গে নেচে, ফুল ছিটিয়ে অতিথিদের শুভেচ্ছা জানান একঝাঁক নৃত্যশিল্পী।
উৎসবের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যজন ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ।
নাট্যোৎসব পর্ষদের আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ঝুনা চৌধুরী ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ।
আয়োজনকে বর্ণির করে তুলতে নয় দিনের এ উৎসবে অংশগ্রহণ করছে বাংলাদেশ ও ভারতের ৫৩টি নাট্যদল ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
উদ্বোধনকালে ফেরদৌসি মজুমদার বলেন, ‘এই মহতি অনুষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত হতে পেরে আমি আনন্দিত। যারা এখানে আমার কথা ভেবেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। এই উৎসব সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক। নাটক হোক মানুষ ও মানবতারা অনন্য হাতিয়ার।’
তিনি ওপার বাংলার নাট্যব্যক্তিত্ব সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে বলেন, ‘সেই যৌবনকালে অপুর সংসার দেখে সৌমিত্র বাবুর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। পরবর্তীতে সেটা কেবলই বেড়েছে। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তার মতো অভিনেতার সাথে আমার সাক্ষাত হয়নি। আজ সেই সুযোগ করে দিলে গঙ্গা যমুনা নাট্যোৎসব। আমি সৌমিত্র বাবুকে কাছ থেকে দেখে মুগ্ধ। তাকে দেখে আজকের নায়ক বা অভিনেতাদের অনেক কিছু শিখবার আছে। তিনি যেমন একজন কালজয়ী অভিনেতা তেমনি একজন ভালো মানুষ। তার ব্যক্তিত্ব সবার জন্য অনুকরণীয়।’
উৎসব উদ্ধোধনের আগে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘অনেকবার এসেছি এ দেশে। যতবার এসেছি, ততবারই আপ্লুত হয়েছি এখানের মানুষের ভালবাসায়। আমারই মতো সব মানুষ, ভাষা এক, সংস্কৃতিও এক, পোশাক এক, কিন্তু আমরা দুই দেশের বাসিন্দা। এ ভাবনায় প্রথমবার যখন এসেছিলাম, সেবার কেঁদেছিলাম। এটি আমাকে খুব পীড়া দেয়। তবুও কিছু করবার নেই। রাজনৈতিক নীতি মেনে নিতেই হবে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে আমরা বাঙালি। তাই বংশ পরম্পরায় আমাদের সর্ম্পর্ক ছিলো, আছে এবং থাকবে।’ আবেগঘন বক্তৃতার শেষাংশে খ্যাতিমান এই অভিনেতা আবৃত্তি করে শোনান কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’।
উৎসবের প্রথম দিনে জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ভারতের নাট্য সংগঠন ‘সংস্তব’ প্রযোজিত নাটক ‘ছাড়িগঙ্গা’। এ নাটকে নান্দনিক অভিনয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। একই সময়ে জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হয় প্রাচ্যনাটের নাটক ‘ট্র্যাজেডি পলাশবাড়ি’।
পশ্চিমবঙ্গ, ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ১৮টি নাট্য সংগঠন ও পথনাটক, নৃত্য, আবৃত্তিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ৩৫টি সংগঠন বিভিন্ন পরিবেশনা নিয়ে এ উৎসব। এতে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় নাট্যশালার মূল হল ও একই সময়ে পরীক্ষণ হলে পৃথক পৃথক সংগঠনের দুটি নাটক মঞ্চায়ন হবে। নাটক মঞ্চায়নের পূর্বে প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে উৎসব প্রাঙ্গণে অন্য সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তাদের নিজস্ব পরিবেশনা উপস্থাপন করবে।
এলএ/এমএস