শহীদ মিনারে কান্না আর ফুলে ঢাকা সুবীর নন্দী
শেষ শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে আনা হয়েছে বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দীর মরদেহ। বুধবার বেলা ১১টায় শহীদ মিনারে রাখা হয় তার মরদেহ। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে শেষবারের মতো শ্রদ্ধ জানানো হচ্ছে তাকে।
এখানে উপস্থিত আছেন সুবীর নন্দীর পরিবারের সদস্যরা। কাঁদছেন সুবীরের স্ত্রী ও কন্যা। শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন দেশের শিল্পী সমাজ ও ভক্তরাও। সবার ছলছল চোখ। কেউ আড়ালে মুছছেন। কেউ বা মরদেহের সামনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণই করতে পারছেন না।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা জানান, এখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এফডিসিতে নেওয়া হবে সুবীর নন্দীর মরদেহ। এরপর রামকৃষ্ণ মিশনে নেওয়ার পর রাজধানীর সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালী মাতা মন্দির ও শ্মশানে আজ তার শেষকৃত্য হবে।
উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টায় মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী।
ঢাকা ও সিঙ্গাপুরে টানা ১৮ দিন হাসপাতালের বিছানায় নিথর হয়ে পড়েছিলেন নন্দিত এ গায়ক। পরে গত ৩ মে চোখ মেলেন ও মেয়ে ফাল্গুনীকে দেখে কাঁদেন। চিকিৎসকরা আশার আলো দেখতে পেয়েছিলেন। প্রিয় শিল্পীর সুস্থ হয়ে ওঠার সংবাদে খুশি হয়েছিলেন ভক্তরাও। এমন স্বস্তির খবরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ৪ মে ও ৫ মে দুই দফা হার্ট অ্যাটাক হয় সুবীর নন্দীর। এরপর ৭ মে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৩০ এপ্রিল ঢাকার সিএমএইচ থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সুবীর নন্দীকে। এর আগে ১৬ দিন রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।
গত ১৪ এপ্রিল রাতে সিলেট থেকে ঢাকায় ফেরার পথে ট্রেনে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সুবীর নন্দী। রাত ১১টার দিকে তাকে রাজধানীর সিএমএইচে নেয়া হয়। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে হার্ট অ্যাটাক করেন এই নন্দিত শিল্পী। এরপর তাকে দ্রুত লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও হার্টের অসুখে ভুগছিলেন সুবীর নন্দী।
প্রসঙ্গত, নন্দিত কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী ৪০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রেও উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। ১৯৮১ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম 'সুবীর নন্দীর গান' ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারে আসে। তবে চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত 'সূর্যগ্রহণ' চলচ্চিত্রে।
চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি। আর চলতি বছরে সংগীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার সুবীর নন্দীকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করেছে।
এমএবি/এলএ/জেআইএম