সবার দোয়া চাইলেন ডেঞ্জারম্যান ডিপজল
জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসের দ্বিতীয় দিন, ৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। তারকাদের নিয়ে সাংস্কৃতিক আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। অনেক তারকাই এসেছেন। উৎসাহী লোকজন ভিড় করেছে তাদের ঘিরে। তবে বিকেলে হঠাৎ তুলকালাম বেঁধে গেল এফডিসির ভেতর।
ক্যান্টিনের সামনের মাঠে দাঁড়িয়ে নজরে এলো শত শত মানুষের জটলা। সবাই কিছু না কিছু বলছে। বলা চলে বিরাট হট্টগোল। কেউ বলছেন মারামারি লেগেছে, কেউ বলছেন মন্ত্রী এসেছে আবার কেউ কেউ বলছিলেন মনে হয় শাকিব খান যাচ্ছেন।
ব্যাপার কী দেখতে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়লো কালো সানগ্লাসে ঢাকা চোখ, গলায় সোনার চেইন দুলিয়ে কালো পোশাকে হেঁটে যাচ্ছেন একজন। মুখে তার জোর করে ধরে রাখা মুচকি হাসি। তিনি যাচ্ছেন, তাকে ঘিরে পিঁপড়ার মতো যাচ্ছে মানুষের জটলা। তিনি ডিপজল।
সোশ্যাল মিডিয়াসহ নানারকম মিডিয়ার কল্যাণে সিনেমার তারকাদের নিয়ে আজকাল আর এমন ভিড় চোখে পড়ে না খুব একটা। অনেক বড় তারকারাও ক্রেজ হারিয়েছেন সাধারণ মানুষের কাছে। যে ক’জন ধরে রাখতে পেরেছেন তাদের অন্যতম একজন ঢাকাই সিনেমার ডেঞ্জারম্যান ডিপজল।
আজ তার জন্মদিন। জন্মদিনে ভক্তদের শুভেচ্ছায় ভেসে যাচ্ছেন তিনি। ফেসবুকে তার নামে একটি আইডি রয়েছে। সেটি সত্য না মিথ্যা যাছাই না করেই ভক্তরা প্রিয় তারকাকে ভালোবাসায় সিক্ত করে চলেছেন।
এদিকে ডিপজল নিজের জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার মাকে। তিনি বলেন, ‘তেমন কোনো আয়োজন নেই জন্মদিনে। পরিবার নিয়েই সময় কাটছে। অনেকেই দেখা করতে আসছেন। গল্প গুজব হচ্ছে। ভালো লাগছে। সবার কাছে দোয়া চাই যেন সুস্থ থাকি, ভালো থাকি।’
ডিপজল একাধারে চলচ্চিত্র অভিনেতা ও প্রযোজক। তার প্রযোজনার ব্যানারে অসংখ্য সুপারহিট ছবি নির্মিত হয়েছে।
চলচ্চিত্রে তার অভিষেক ঘটেছিল নায়ক হিসেবেই। ১৯৮৯ সালে ‘টাকার পাহাড়’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন। ডিপজলের বড় ভাই শাহাদাত হোসেন বাদশা যিনি বাদশা ভাই নামে পরিচিত তিনি সান পিকচার্সের ব্যানারে চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেন। পরিচালনা করেন মনতাজুর রহমান আকবর। আকবরেরও এটি পরিচালিত প্রথম ছবি। কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৩ সালে।
সে যাত্রায় সাফল্য কিছু আসেনি। অনেকটা বিরতি নিয়ে আবার তিনি কামব্যাক করলেন নব্বই দশকের শেষ দিকে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘তেজী’ ছবির মাধ্যমে। ভিলেন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে হইচই ফেলে দেন ডিপজল।
বাংলা সিনেমার ভিলেনদের চিরাচরিত প্রথা ভেঙে অনেক নতুনত্ব নিয়ে হাজির হলেন তিনি। সেই নতুনত্ব যেমন ছিল তার সংলাপে, তেমনি ছিল অভিনয়ে।
তখন ছবিতে ডিপজল থাকা মানেই সুপারহিট ছবি। বিশেষ করে নায়ক মান্নার সঙ্গে তার জুটির ছিল আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। টানা কয়েক বছর ভিলেন হিসেবে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করার পর আবার একটা বিরতি নেন তিনি।
২০০৪ সালে এফ আই মানিক পরিচালিত ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিতে সম্পূর্ণ নতুনরূপে আত্মপ্রকাশ করেন ডিপজল। ভিলেনরূপী ডেঞ্জারম্যান ডিপজল এবার হাজির হলেন পারিবারিক গল্পে ইতিবাচক চরিত্রে।
তার ‘চাচ্চু’, ‘দাদীমা’, ‘কোটি টাকার কাবিন’ ইত্যাদি ছবিগুলো তুমুল ব্যবসা সফল হয়। ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, কোন্দল, হল সংকট বাড়তে থাকলে অনিয়মিত হয়ে পড়েন এই অভিনেতা। তবে এখনো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি, প্রযোজনাও করেছেন।
সর্বশেষ ডিপজল প্রযোজিত ও অভিনীত ‘দুলাভাই জিন্দাবাদ’ নামে একটি ছবি মুক্তি পায় গত বছর। আগামী রোজার ঈদেও নতুন ছবি নিয়ে হাজির হবেন তিনি।
এছাড়া ডিপজল চলচ্চিত্রের নানা ক্রান্তিলগ্নে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন। নানা প্রয়োজনে তিনি চলচ্চিত্রের মানুষদের পাশে থেকেছেন। এ কারণে দর্শকের কাছেও যেমন জনপ্রিয় ডিপজল, চলচ্চিত্রের মানুষদের কাছে প্রিয় নাম তিনি।
ব্যক্তিজীবনে তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক ডিপজল। গত বছর তার একমাত্র মেয়ে ওলিজার বিয়ে হয়েছে।
এলএ/জেআইএম