জীবনের গল্প বলতে গিয়ে কাঁদলেন আসিফ, কাঁদালেন সবাইকে

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:০৭ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ভক্তদের অপেক্ষার প্রহর শেষ করে প্রকাশ হলো আসিফ আকবরের নতুন গান ‘চুপচাপ কষ্টগুলো’। রোববার ধ্রুব মিউজিকের ইউটিব চ্যানেলে প্রকাশ হয়েছে গানটি। গানের মুক্তি উপলক্ষে এই দিন রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করা হয়।

এখানে উপস্থিত হয়েছিলেন গানের অনেক তারকারা। উপস্থিত ছিলেন ইথুন বাবু, আসিফ আকবরসহ গানের ভিডিওটির অন্য কলাকুশলীরা।

২০০১ সালে ইথুন বাবুর সুরে ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ গানটি গেয়ে ৫৬ হাজার বর্গ মাইল জুড়ে পরিচিতি পেয়েছিলেন আসিফ আকবর। ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ এর বয়স এখন ১৮ ছাড়িয়ে ১৯ তম বসন্তে। এখনো যেন সেই গানের উন্মদনার রেশ এতটুকুও কমেনি। দীর্ঘ ১৮ বছর পর আবারও এক হলেন তারা। ‘চুপচাপ কষ্টগুলো’। গানটির সংগীতায়োজনও ইথুন বাবুর। তার সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন রোজেন।

এই গানের প্রকাশনা উৎসবে এসে কাঁদলেন আসিফ আকবর। অন্যদেরও কাঁদিয়ে স্টেজ থেকে নামলেন তিনি। ইথুন বাবুর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সেইসব দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে দুচোখ ভিজে আসে আসিফের। ভেজা ভেজা চোখে আসিফের পাশে এসে দাঁড়ান ইথুন বাবু।

আসিফ আকবর বলেন, ‘১৯৯৭ সালের ১৫ অক্টোবর আমি ঢাকায় আসলাম সাউন্ডের ব্যাবসা করবো ও গানের সঙ্গে থাকবো বলে। কুমিল্লার ইফতেখার আহমেদ পিন্টু ভাই আমাকে নিয়ে গেলেন শওকত আলী ইমন ভাইয়ের কাছে। আমি ওখানে গানের ডেমো ভয়েস দিতাম। আলী আকরাম শুভ ভাইয়ের সঙ্গেও পরিচয় হলো ওখানে। ক্ষাপা বাসু সিনেমার একটি গান গাইলাম। এই গান শুনে ইথুন বাবু ভাই আমাকে ডাকলেন, আমার গান করতে চাইলেন।

তখন আমি মাস্টার্স পড়ছি। আমার দুই সন্তান ঘরে। আমি অ্যালবাম করতে রাজি হলাম। অ্যালবামটা হলো। বাবু ভাই আমাকে ডেকে একদিন বললেন তোকে এমন গান দিলাম আর কোনোদিন পিছে ফিরে তাকাতে হবে না। অসহায় অবস্থায় যখন জাহাজ সমুদ্রে ভাসে, তখন মানুষ বাঁচার জন্য খড় কুটো খোঁজে। আমারও তেমন হয়েছিল। সেই সময় পাশে পেয়েছিলাম ইথুন বাবু ভাইকে।

আমি সিদ্ধান্ত ভুল নিইনি। ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ গান গাইলাম। সেই সময় বাবু ভাইয়ের সঙ্গে রাত দিন গান নিয়ে মেতে থেকেছি। উনাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতাম আবার উনাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে বাসায় ফিরতাম।

বাবু ভাইয়ের ও রাতজাগা অভ্যেস আমারও রাত জাগা অভ্যেস। একদিন সারারাত কাজ করে ভোরবেলা বাসায় ফিরবো। আমার ছোট ছেলে রুদ্রর অসুস্থতার খবর আসলো বাসা থেকে। আমার স্ত্রীকে বললাম ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাও। পরে বাবু ভাই আমাকে গাড়িতে করে নিয়ে রাস্তা নামিয়ে দিলেন। আমি চলে যাচ্ছি, এই সময় আবার গাড়ি ব্যাক করে এসে বললেন কীরে তোর মন খারাপ কেন? পকেটে টাকা নাই? বাবু ভাই আমাকে পাঁচশ টাকা দিলেন।

আমার পকেটে তখন ছিল মাত্র ১০ টাকা। এই ১০টাকা খরচ করলে আমাকে হেঁটে যাওয়া লাগতো বাসায়। বাবু ভাই বললেন তুই রাত্রে আসবি, রাতে তোর টাকা দেওয়া হবে।

যখন টাকা পেলাম আমি অ্যাংকর মিনিপ্যাক দুধ কিনেছিলাম ৩০ টাকা করে। ৬ প্যাকেট দুধ কিনলাম। ৬ প্যাকেট দুধের সঙ্গে ৬টা চামচ ফ্রি। আমার বাসার জন্য একসেট চামচ হলো। এই রকম অংখ্য গল্প আছে বাবু ভাইয়ের সাথে। উনি মেজাজি মানুষ কিন্তু একদম শিশুর মতো মন। ও প্রিয়া যখন রিলিজ হবে, তখন সাউন্ডেক হঠাৎ করে অ্যালবাম রিলিজ বন্ধ করে দিল। ঈদে আর রিলিজ হবে না অ্যালবাম। আমার খুব মন খারাপ হয়ে গেল।

আহমেদ রিজভি ভাই বললেন, এখন অনেক বড় শিল্পীদের অ্যালবাম বের হচ্ছে। তোমার অ্যালবামটি পরে বের হলেই ভালো। আমি কুমিল্লা চলে গেলাম। সেবার আমি ঈদ করিনি।

এর পরে একদিন বাবু ভাই আমাকে ডাকলেন, গুলিস্তান, থেকে মিরপুর আমরা অ্যালবাম বিতরণ করলাম বিভিন্ন স্থানে। এরপর রংপুর থেকে শুরু করে সারা বাংলাদেশ ঘুরেছি। বাবু ভাইয়ের একটা ক্যারিনা গাড়ি চড়ে। তিন মাস পরে অ্যালবামের ফলাফল পেলাম। বাকিটা সবার জানা।’

আসিফের স্মৃতিচারণ শুনছিলেন যারা তারাও কাঁদলেন তার জীবনের গল্প শুনে। এই সময় কথা বলেন ইথুন বাবুও। তিনি বললেন, ‘আমি নিয়মিত গান লিখি, সুর করি। আসিফের সঙ্গে ১৮ বছর ধরে কোনো কাজ করা হয়নি। অনেকদিন পর দুই ভাই একসঙ্গে কাজ করতে পেরে ভালো লাগছে।’ অভিমান করে বললেন, ‘আসিফের কাছ থেকে এতদিন যারা আমাকে সরিয়ে রেখেছে তাদেরকে ধন্যবাদ।’

মজার ব্যাপার হলো ভিডিওটি নির্মাণ করেছেন ইথুন বাবু নিজেই। সেখানে আসিফ আকবরের সঙ্গে মডেল হিসেবে আছেন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের আলোচিত প্রতিযোগী জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল। কোরিওগ্রাফিতে ছিলেন হাবিব। ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের ইউটিউব চ্যানেলে উপভোগ করা যাচ্ছে ‘চুপচাপ কষ্টগুলো’ গানটির ভিডিও। পাশাপাশি গানটি শুনতে পাওয়া যাবে ডিএমএস ওয়েবসাইট, জিপি মিউজিক এবং বালালিংক ভাইবে।

এমএবি/এলএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।