নতুন বাড়িতে ওঠা হলো না নায়ক মান্নার মায়ের
টাঙ্গাইলে নিজের বাড়িতে একাই থাকতেন নায়ক মান্নার মা হাসিনা ইসলাম। মাঝে মধ্যে ডাক্তার দেখাতে ঢাকায় আসতেন। তখন বড় মেয়ে শিরিন কনার কাছে থাকতেন অথবা প্রয়াত ছেলের বউ মান্নার স্ত্রীর কাছে থাকতেন। ঢাকায় তার কাছের আপনজন বলতে এই দু’জন মানুষই ছিলেন।
বাকি গল্পটা কষ্টের। স্বামীকে হারিয়েছিলেন অনেক আগেই। ১৯৯৭ সালে সালে মারা গেছে মান্নার বাবা নূরুল ইসলাম তালুকদার। এরপর চোখের মণি ছেলে মেয়েদের নিয়ে বেঁচে ছিলেন।
এরপরও একের পর এক ঝড় বয়ে তার উপর দিয়ে। চিত্রনায়ক মান্না না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। মায়ের অনেক আদরের সন্তান ছিলেন মান্না। দুই ভাইয়েরর মধ্যে মান্না ছিলেন ছোট। তাই মায়ের আদরটাও তার প্রতি ছিল অন্যরকম।
মান্না মারা যাওয়ার এক বছর পরেই মারা যান তার ছোট বোন শাম্মি আক্তার। একটার পর একটা নাঁড়ির বাঁধন ছিঁড়ে যাওয়ার কষ্ট বয়ে বেঁচে ছিলেন মান্নার মা।
এখানেই শেষ না। আজ থেকে তিন বছর আগে মাকে রেখেই মারা গেলেন বড় ছেলেও। তার নাম ছিল প্রিন্স তালুকদার পান্না।
স্বামী আর তিন তিন সন্তানকে হারিয়ে একদম একা হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। শেকড়ের টান তাকে শহর মুখি করেনি। নিজেদের ভিটা ছাড়তে চাননি কখনো।
এত কষ্টের জীবন পার করে অবশেষে অতৃপ্তি নিয়েই গতকাল রোববার দুপুরের পর টাঙ্গাইলের জেলায় নিজ বাসভবনে মৃত্যু হয়েছে তার। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
মান্নার স্ত্রী শেলী মান্না জাগো নিউজকে বলেন, ‘শাশুড়ির মৃত্যুর খবর পেয়ে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল এসেছি আমি। শনিবার রাতে আমার শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়। গতকাল দুপুরের দিকে তার মৃত্যুর খবর পেয়েছি।’
শেলী মান্না আরও বলেন, ‘অনেক ভালো মনের মানুষ ছিলেন আমার শাশুড়ি। খুব কষ্ট লাগছে মায়ের জন্য। শেষ ইচ্ছেটা পূর্ণ হলো না তার। ২২ বছর আগে স্বামীকে হারান, ১১ বছর আগে মান্নাকে হারান, মান্না মারা যাওয়ার এক বছর পর ছোট মেয়েকে হারান, তিন বছর আগে বড় ছেলেকেও হারান। এত বিয়োগ ব্যাথা সয়ে সয়ে তিনি বেঁচে ছিলেন।
ভালো লাগতো। চোখের সামনে তিনি ছিলেন। তার নাতিরা তাকে নিয়ে আনন্দ করতো। আমাকেও আদর করতেন। খোঁজ নিতেন প্রতিনিয়ত। সেটা আর হবে না। শ্বশুরবাড়িতে সজ্জন বলতে কে আর থাকলো বলুন!’
শেলী মান্না বলেন, ‘টাঙ্গাইলের বাড়িতে একাই থাকতেন মা। আশে পাশে অন্য আত্মীয় স্বজনরা ছিলেন। উনি নিজের বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেতে চাইতেন না। বাড়ি মেরামত করছিলেন। এটার তদারকি করতেন নিজে। বাড়ির কাজ শেষ হলে এই বাড়িতে উঠে যেতেন। কিন্তু সেটা আর হলো না।
নতুন বাড়িতে ওঠার আগেই দুনিয়া ছাড়লেন তিনি। আল্লাহ যেন আমার শাশুড়িকে বেহেস্ত দান করেন। পৃথিবীতে অনেক কষ্ট ভোগ করেছেন তিনি।’
মায়ের মৃত্যুুর সময় দেশের বাইরে ছিলেন বড় মেয়ে শিরিন কনা। তার জন্যই অপেক্ষা করে ছিলেন সবাই। তিনি ফিরেছেন। তাই আজ সোমবার বাদ আসর দাফন হবে মান্নার মায়ের।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে নায়ক মান্না মৃত্যুবরণ করেন। টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত তার নিজ গ্রাম এলেঙ্গায় মান্নাকে সমাহিত করা হয়।
এলএ/এমকেএইচ