গান ভাইরাল হবে কী হবে না সেটা ভাবি না কখনো : নোলক
বাংলাদেশের সংগীতের আলোচিত নাম ‘নোলক বাবু’। ২০০৫ সালে ক্লোজ আপ ওয়ান প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন তিনি। তার কণ্ঠের জাদুতে মুগ্ধ হয়েছেন লক্ষ লক্ষ শ্রোতা। মাঝে কিছুদিন নিরবে কেটেছে সময়।
এখন আবারও নিয়মিত গান গেয়ে চলেছেন। তার বর্তমান ব্যস্ততা, আগামীর পরিকল্পনা ও সংগীতের নানা বিষয় নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তুলে ধরা হলো আলাপের চুম্বক অংশ-
জাগো নিউজ : কেমন আছেন?
নোলক বাবু : ভালোই আছি।
জাগো নিউজ : ভালোবাসা দিবসে নতুন কী গান আসছে?
নোলক বাবু : অ্যালবাম প্রকাশ করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু নতুন অ্যালবামের কাজ এখনো শেষ করতে পারিনি। কয়েকটা মিশ্র অ্যালবামে গেয়েছি।
জাগো নিউজ : সাম্প্রতিক ব্যস্ততা কেমন?
নোলক বাবু : কয়েক মাস আগে একটা মিউজিক ভিডিও প্রকাশ পেয়েছিল। গানটির নাম ছিল ‘ভালোবাসা শুধু তোমায়’। এর কথা-সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন জুয়েল বাপ্পি। প্রকাশ হয়েছিল তার নিজের ডিজিটাল সিডি মিউজিকের ইউটিউব চ্যানেলে। ভালো রেসপন্স পেয়েছি।
এর মধ্যে একটি টেলিফিল্মের গান গেয়েছি। টেলিফিল্মটির নাম ‘আষাঢ় শ্রাবণ’। ভালোবাসা দিবসে এই গানটি আসতে পারে। এটার শুটিং চলছে। নতুন অ্যালবামের কাজ গুছাচ্ছি।
শওকত আলী ইমন ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করবো অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল। ভাইয়ের সঙ্গে এরই মধ্যে আলাপও করেছি। বিভিন্ন স্বাদের মোট আটটি গান দিয়ে সাজাচ্ছি একটি অ্যালবাম।
জাগো নিউজ : সিঙ্গেল গান প্রকাশের সময় অ্যালবাম প্রকাশের কারণ কী?
নোলক বাবু : আমার মনে হয় যতই সিঙ্গেল গান প্রকাশ হোক অ্যালবামের একটা আলাদা আবেদন আছে। শ্রোতারা একসঙ্গে অনেকগুলো গান শুনতে পারেন। অ্যালবামে বিভিন্ন রকম গান রাখা যায়। একজন শিল্পীকে একটি গান শুনে কিন্তু সেভাবে মূল্যয়ন করা সম্ভব হয় না।
কিন্তু পুরো একটা অ্যালবাম শুনলে সে আসলে কোন ধরণের শিল্পী এটা পরিমাপ করা যায়। আমার মনে হয় কখনই গানের অ্যালবামের চাহিদা শেষ হবে না। হয় তো সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেটা অনলাইনে প্রকাশ হবে।
জাগো নিউজ : আপনার প্রথম একক অ্যালবাম ‘সে যে কন্যা ভালো’ প্রকাশ হয়েছিল ২০০৬ সালে। এটা কততম অ্যালবাম হবে?
নোলক বাবু : এটা আমার অষ্টম একক অ্যালবাম হবে। এ পযর্ন্ত প্রায় ২০০ মৌলিক গান গেয়েছি। একক ও মিশ্র মিলিয়ে ৩০ এর অধিক অ্যালবাম হয়েছে।
জাগো নিউজ : শীতকাল শিল্পীদের গানের শো, স্টেজ প্রোগামের সময়। কেমন চলছে স্টেজ শো?
নোলক বাবু : এখন টিভি লাইভ করছি বেশি। গত দুই মাসে প্রায় ১২টি টিভি লাইভ করেছি। শীতের সময় স্টেজ শো একটু বেশি হয়। স্টেজ শো নিয়েও ব্যস্ত সময় পার করছি। শীতের সময় দেশে শো নিয়ে অনেক ব্যস্ততা থাকে।
অন্য দিকে শীতের শেষের দিকে দেশের বাইরের শো থাকে। আমেরিকার ফোবানায় আট বছর আগে শো করেছি। আট বছর পরে আবার যাচ্ছি। আগামী মাসে আমেরিকার ফোবানায় শো ঠিক করা আছে।
জাগো নিউজ : স্টেজ শো করতে গিয়ে জনপ্রিয় শিল্পীদের সঙ্গে অনেক মজার ঘটনা ঘটে। এমন কোনো মজার একটা মজার ঘটনা শুনতে চাই।
নোলক বাবু : ক্লোজ আপ ওয়ানের সময় প্রথম আমেরিকায় শো করতে গিয়েছিলাম। তখন আমরা ক্লোজ আপ ওয়ানের সবাই মিলে অনেক মজা করেছি। পরে লন্ডনে একটা গানের স্টেজ শো করতে গিয়ে একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল। আমরা একটা রেস্টুরেন্টে খেতে গেলাম। রেস্টুরেন্ট এর মালিক ছিলেন বাঙালি।
হঠাৎ আমাকে দেখেই ওখানকার স্টাফরা আমার উপর হুড়মুড় করে পড়লো। আমাদের প্রায় আটশ পাউন্ডের মতো বিল হয়েছিল। অনেক চেষ্টা করেও আমরা বিল দিতে পারলাম না। এটা ছিলো ক্লোজ আপ ওয়ানের সৌজন্যে পাওয়া ভালোবাসা। আসলে আমরা যারা টপটেনে ছিলাম সবাই দেশে-বিদেশে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।
জাগো নিউজ : একটু প্রসঙ্গ পাল্টাই। সময় এখন ভাইরালের। গান ভাইরাল হয়ে জনপ্রিয় হওয়া ও ভালো গান নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক চলে। এ বিষয়ে আপনার ভাবনা কী?
নোলক বাবু : ভালো কথা ও সুরের গান অনেকদিন টিকে থাকে। কিছু গান আছে এমন হঠাৎ তুমুল হিট হয়ে যায়, আবার দুই এক মাস পরেই হারিয়ে যায়। আমার মনে হয় এমন গান করা উচিৎ, যে গানগুলো সারা জীবন বেঁচে থাকবে।
আমাদের আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল স্যার, আলাউদ্দিন আলী স্যাররা যে ধরণের গান সৃষ্টি করেছেন এগুলো অনেক দিন থাকবে। অ্যান্ড্রু কিশোর, কুমার বিশ্বজিৎ দাদারা যে মানের গান গেয়ে গেছেন এই ধরণের গান এখন কম হয়।
এখন যেগানগুলো হয়, এগুলো অনেক দিন লাস্টিং করে না। বেশির ভাগ গানই একবার দুইবার শোনার পর আর শুনতে ভালো লাগে না। আমি এমন গান করতে চাই যে গানগুলো অনেক দিন টিকে থাকবে। এটা আমার মনের কথা। নিয়মিত গান গেয়ে যেতে চাই। গান ভাইরাল হবে কী হবে না সেটা ভাবি না কখনো।
জাগো নিউজ : আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরে কী কাজ করা হয়েছে?
নোলক বাবু : বুলবুল স্যার তো আমাদের জাজ ছিলেন। উনার অনেক গান গেয়েছি আমি। খুব ভালো সম্পর্কও ছিলো। তবে উনার কথা ও সুরে আমার কোনো গান গাওয়ার সুযোগ হয়নি।
সর্বশেষ প্রায় ছয় মাস আগে উনার সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। পাঁচটা গান করার পরিকল্পনা করেছিলাম। এরপর তো উনি অসুস্থ হয়ে গেলেন। আর পূরণ হলো না মনের ইচ্ছেটা।
জাগো নিউজ : আপনার মৌলিক গানগুলোর মধ্যে কোন গানগুলো দর্শক শুনতে চায় বেশি?
নোলক বাবু : এখনো ক্লোজ আপ ওয়ানে আমরা যে গানগুলো গেয়েছিলাম এই গানগুলোরই বেশি রিকোয়েস্ট আসে। আমার অ্যালবামের কিছু গান আছে। যেমন, ‘কতো খেলা জানো রে মাওলা’, ‘মন রে যারে আপন ভাবিস রে তুই’ এ গান দুটি শুনতে চান দর্শক।
জাগো নিউজ : ক্যারিয়ার নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
নোলক বাবু : গান গাওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারি না। গান নিয়েই সারা জীবন থাকবো। সুন্দর সুন্দর গান গেয়ে যাবো। যারা আমাকে এসএমএস দিয়ে নোলক বাবু বানিয়েছে তাদের চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করে যাবো।
জাগো নিউজ : মাঝে বিরতি নিয়েছিলেন?
নোলক বাবু : আমি নিয়মিত গান করে গেছি। মাঝে ১১ মাস ইংল্যান্ডে ছিলাম তখন শুধু দেশে গান গাইতে পারিনি।
জাগো নিউজ : আমরা আলাপের শেষের দিকে, আপনার পরিবারের কথা বলবেন?
নোলক বাবু : স্ত্রী মোনা হক ও আমার দুই ছেলেকে নিয়ে আমাদের ছোট্ট পরিবার। আমার বড় ছেলে ওয়াসি হোসেন আদর ও ছোট ছেলের নাম আরাফাত হোসেন আদিয়াত। বড় ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করেছি, এখন ক্লাস ওয়ানে পড়ছে। আদরের গানের প্রতি বেশ ঝোঁক। ও গান গাওয়ার চেষ্টা করে।
জাগো নিউজ : ভক্তদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান?
নোলক বাবু : ভক্তদের জন্য আমি, ভক্তদের জন্যই আমার গান, ভক্ত ছাড়া আমি নাই, ভক্ত ছাড়া আমার গানও থাকবে না। আপনাদের কাছে সারা জীবন আমি কৃতজ্ঞ থাকবো। কারণ আপনাদের জন্যই আমি এখানে। সবাইকে বলবো বাংলা গান শুনবেন, পয়সা দিয়ে গান কিনে শুনবেন। শিল্পী ও গানের শিল্প টিকে থাকবে।
জাগো নিউজ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
নোলক বাবু : আপনাকে ও জাগো নিউজকেও অনেক ধন্যবাদ।
এমএবি/এলএ/জেআইএম