একটি গানের জন্যই তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে বাংলাদেশ : কনক চাঁপা

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:০৮ পিএম, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

নজরুল ইসলাম বাবু রচিত সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়। এই গান গায়নি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া কঠিন। গানটির সুরারোপ করে কালজয়ী হয়ে আছেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।

শুধুমাত্র এই একটি গানের সুর করার জন্যই বাংলাদেশ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে বলে দাবি করলেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনক চাঁপা।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলে প্রয়াণে শোকে স্তব্দ গোটা সংগীতাঙ্গন। তাকে হারিয়ে শোকের সাগরে ভাসছেন সবাই। ফেসবুকে লিখছেন নানা কথা, গল্প ও স্মৃতিচারণ। গুণী এই মানুষটিকে নিয়ে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন কনক চাঁপা। সেখানেই তিনি এমন দাবি করলেন।

কনক চাঁপা তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমাদের আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল আসলে বাংলার বুলবুল। একাধারে তিনি ছিলেন শক্তিমান লেখক, সুরস্রষ্টা, এবং মিউজিক কম্পোজার। গানের জগতে তিনি ছিলেন সব্যসাচী। সারাজীবন তিনি গান নিয়ে গবেষণা করেছেন। আঞ্চলিক সুর থেকে শুরু করে আরব্য পারস্য ভারতীয় স্পেনীয় সুর নিয়ে নাড়াচাড়া করে তার সাথে নিজের ভালবাসা মিশিয়ে সুরের আবহ তৈরি করেছেন।

তার গানে প্রেম, বিরহ,কটাক্ষ, অনুরাগ, দেশপ্রেম, শিশুর সারল্য, সামাজিক নাটকীয়তা, বিদ্রোহ, চাহিবামাত্রই পাওয়া যেতো। তাই ছবির গানের ফরমায়েশি জগতে তার কদর ছিল আলাদা। তার সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল নিজেই গান লিখতেন তাই সুর আরও সুন্দর করে বসে যেতো। মনে হত এই গানের সুর ও কথা একসাথেই জমজ হয়ে জন্ম নিয়েছে! তিনি আসলে একজন স্বভাবকবি ছিলেন।

মুখে মুখে গান বানানোর অসম্ভব দক্ষতা তার ছিল। একই সাথে নিজের সৃষ্টি কে অবহেলা করার দারুণ স্পর্ধা ও ছিল। গান রেকর্ড হয়ে গেলে সে লেখা তিনি ছিড়ে ফেলতেন। আমরা আপত্তি জানালে বলতেন আমার গান আমি কেনো সংগ্রহ করবো। গান ভালো হলে কালের প্রবাহেই তা জমা থাকবে।’

বুলবুলের ব্যক্তি জীবন নিয়ে তিনি লেখেন, ‘ব্যক্তিগত জীবনে বোহেমিয়ান টাইপ মানুষটা নিজের জন্য কিছুই করেন নাই। গান গান গান করেই জীবন পার করলেন। জীবনের প্রথম দিকে বেহালা গিটার বাজাতেন,মাঝ বয়সে এসে সেগুলোকেই আবার নতুন করে শেখার জন্য কি প্রচেষ্টা ই না ছিলো তার! কিন্তু নিজেকে আরও জ্ঞানের গভীরে নিতে নিজেই নিজের শিক্ষক ছিলেন।

অসম্ভব সাহসী মুক্তিযোদ্ধা সারাজীবন তাঁর গানেও অপার দেশপ্রেম, দ্রোহ, প্রতিবাদ তুলে ধরেছেন। ছবির গানেও তিনি নিজে বায়না করে দেশের গান ঢোকাতেন।’

নিজের শিল্পী জীবনে বুলবুলের অবদান স্বীকার করে এই গায়িকা লেখেন, ‘ভালো কণ্ঠের জন্য তিনি শিল্পী খুঁজে বেড়াতেন আজীবন। আমাকে তিনি নিজে খুঁজে বের করেছিলেন। ৯২ সালের কথা, একটা অনুষ্ঠানে কণ্ঠশিল্পী শাকিলা আপা বললেন কনক, বুলবুল ভাই তোকে খুঁজছেন, তাড়াতাড়ি যোগাযোগ কর। এরপর উনিই আবার ফোন দিলেন।

পয়লা গান ছিলো ‘সাদা কাগজ এই মনটাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম’ মিলু ভাইয়ের সাথে ডুয়েট। সেদিনই বুলবুল ভাই বললেন ভাবী, ইনশাআল্লাহ অনেক গান হবে, আপনাকে এমন জায়গায় নিয়ে যাবো কখনো পিছনে তাকাতে হবে না! সত্যিই সেদিন থেকেই আমার আর অবসর ছিলো না।

বুলবুল ভাই মাসে গড়ে প্রায় দশটা ছবি হাতে নিতেন এবং তার বেশির ভাগ গান আমাকে দিয়েই গাওয়াতেন।নিজে অনেক গবেষণা করতেন কিন্তু গানের কন্ঠের ব্যাপারে নির্ভরশীল হতে চাইতেন। এর পর আসলেই আমাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। প্রায় প্রতিটি গানই মাইল ফলক হয়ে যাচ্ছিল। তাঁর গানেই প্রায় সব পুরস্কার পাওয়া আমার! তাঁর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’

অসুস্থ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল প্রসঙ্গে কনক চাঁপা লিখেছেন, ‘ক’দিন আগে তিনি যখন অসুস্থ হলেন খোঁজ নিতে ফোন দিলাম তখন গানপাগল মানুষটা সব কথা বাদ দিয়ে বললেন ভাবী ‘অনেক সাধনার পরে’ গানটি ধরেন তো! আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেতেই আমার হাজবেন্ড বললেন গাও, আমি আরও বিপদে পড়তেই বুলবুল ভাই গানটি শুরু করলেন। আমি তাঁর সাথে গলা মিলিয়ে পুরো মুখটি গাইলাম!

হঠাৎ উনি আমাকে অনেক দোয়া করলেন! আমি হচকচিয়ে গেলাম। এটাই আমার ওনার সাথে শেষ কথা। পরিচয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ওনার দোয়া পেয়ে গেলাম, সাথে পেলাম অসংখ্য অনবদ্য গান, যা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। কি দিয়ে আমি তাঁর ঋণ শোধ করি আমি আসলেই জানি না!’

স্ট্যাটাসের শেষ দিকে তিনি লিখেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আমরা পুরো জাতিই ধন্য যে আমাদের একজন ‘আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল’ আছে। আর একটি কথা আমি উচ্চ কণ্ঠে বলতে চাই ‘সব কটা জানালা খুলে দাওনা’- এই গানটি ছাড়া আর যদি কোনো গানই সুর না করতেন তাহলেও বাংলাদেশ তাঁর কাছে সমান কৃতজ্ঞ থাকতো।

আমি এই সব্যসাচি সংগীতজ্ঞের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য সমবেদনা জানাচ্ছি। আল্লাহ ওনাকে ওপারে শান্তি দিন। আমীন।’

এলএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।