এদেশে রোমান্টিক নায়কের অভাব আছে

নাহিয়ান ইমন
নাহিয়ান ইমন নাহিয়ান ইমন , বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:০৫ এএম, ২৪ আগস্ট ২০১৫

তাহসান খান। জনপ্রিয়তায় উতরে যাওয়া একজন গায়ক, নায়ক, গিটার বাদক, কী-বোর্ড বাদক, সুরকার, গীতিকার, সংগীত পরিচালক, মডেল, উপস্থাপক। এছাড়া এসব পরিচয়ের গন্ডির বাহিরেও জনপ্রিয় এই তারকার আরো একটি পরিচয় রয়েছে। সেটি হচ্ছে তিনি একজন শিক্ষক। মিডিয়াতে সংগীত শিল্পী হসেবে পা রাখলেও সৃজনশীল কাজের সুবাদে একে একে নিজের প্রতিভার ফোয়ারা ছড়িয়েছেন সবখানে। কথোপকথন, প্রত্যাবর্তন, ইচ্ছে, উদ্দেশ্য নেই সহ তার প্রকাশিত সিংহভাগ অ্যালবামের গানই শ্রোতাদের মুখে লেগে আছে।

এছাড়া তার কণ্ঠে রোদেলা দুপুর, প্রতিজ্ঞা, আঙুল, কে তুমি, তুমি ছুঁয়ে দিলে মন (চলচ্চিত্রের গান) সহ অসংখ্য গান শ্রোতা মহলে তুমুল জনপ্রিয়। গানের মানুষ তাহসান অভিনয় জীবন শুরু করেন ২০০৩ সালে। আফসানা মিমি পরিচালিত `অফবিট` নাটকে তার অভিষেক হয়। প্রায় এক যুগের বেশি সময়ে তিনি অভিনয় করেছেন বেশ কিছু নাটকে। এতো তারকা খ্যাতির পরেও অহমবোধ নেই তার। ব্যক্তি মানুষটি দারুন মিশুক আর সাদাসিধে। শোবিজের এই অলরাউন্ডার শত ব্যস্ততার ফাঁকেও মুখোমুখি হয়েছেন জাগো নিউজের। সঙ্গে ছিলেন নাহিয়ান ইমন

জাগো নিউজ : কেমন আছেন?
তাহসান : ইনশাল্লাহ খুব ভালো আছি। তবে (মুচকি হাসি দিয়ে) কাজের ব্যস্ততা নিয়ে চাপে আছি।

জাগো নিউজ : গায়ক, নায়ক, গিটার বাদক, কী-বোর্ড বাদক, সুরকার, গীতিকার, সংগীত পরিচালক, মডেল, উপস্থাপক অন্যদিকে শিক্ষক। একজন তাহসানের পক্ষে এতো কিছু সামলানো সম্ভব কিভাবে?
তাহসান : আমি সবকিছু রুটিন মাফিক মেইনটেইন করি। কোনো কাজ তাড়াহুড়া করে চলা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি মনে করি ঝাঁপিয়ে যেকোনো কাজে হাত দিলে সেটি সফল নাও হতে পারে। ধীরে-সুস্থে, ভেবে-চিন্তে তারপর সামনে আগাই। সেজন্যই সবকিছু সামলানোটা হয়ে ওঠে। আর অনেক বছর ধরে যেহেতু কাজ করে যাচ্ছি সেহেতু ব্যাপারটা সয়ে গেছে।

জাগো নিউজ : এগুলোর মধ্যে নিজেকে খুঁজে পান কোন কাজে?
তাহসান : এককথায় বলতে গেলে গানে। গানের প্রতি আমার প্রেম অনেক বেশি। সেজন্য গানের মাঝে নিজের স্বকীয়তা খুঁজে পাই।

জাগো নিউজ : তাহলে বাকীগুলো?
তাহসান : অভিয়ন, মডেলিং, সুর-সংগীত পরিচালনা, উপস্থাপনা আমার ভালো লাগা ও শখের বহিঃপ্রকাশ।

জাগো নিউজ : আর শিক্ষকতা?
তাহসান : প্রথমে গানের মাধ্যমে এবং পরবর্তীতে অভিনেতা হিসেবেও দর্শকরা আমাকে সদরে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু পেশা হিসেবে নিজেকে একজন শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দেই। কারণ এটি মহান একটি পেশা। নিজেকে শিক্ষক ভাবতে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে।

জাগো নিউজ : ক্যারিয়ারে সংগীত চর্চার পরিবেশটা কেমন পেয়েছেন?
তাহসান : ছায়ানট থেকে দীর্ঘ ছয় বছর রবীন্দ্রসংগীতের উপর তালিম নিয়েছি। ’৯৮ সালা নাগাদ প্রথম ব্যান্ডদল ‘ব্ল্যাক’ প্রতিষ্ঠা করি। এভাবে সংগীত নিয়ে এগুতে থাকি। বর্তমানে আমার ব্যান্ড দলের নাম ‘তাহসান এন্ড দ্য ব্যান্ড’। সেখানেও অনুশীলন চলে নিয়মিত। এছাড়া ব্যস্ততার অবসরে বাসায় পিয়ানো নিয়ে অনুশীলনে ডুব দেই। এভাবেই চর্চা চলছে।

জাগো নিউজ : একজন সংগীত শিল্পী হিসেবে সংগীত বাজারের অবস্থা কেমন দেখছেন?
তাহসান : সংগীত বাজারে মন্দার ঘোর অমানিশা বিরাজ করছে এটা স্বীকার করতেই হবে। পাইরেসি আর পশ্চিমা সংস্কৃতি এর জন্য বহুলাংশে দায়ি। তবে ইদানিং মুঠোফোন সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসছে গানের বাজার চাঙ্গা করতে। এটাকে সাধুবাদ জানাই। সকলের বোঝা উচিত সবকিছু টাকা দিয়ে কিনতে হয়, গানটাও এর ব্যতিক্রম নয়।

জাগো নিউজ : সংগীত ভুবনের অনেক বড় তারকা শিল্পীরা এখন অ্যালবাম না বের করে দু’একটা মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করছেন। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
তাহসান : এখন ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা। মানুষ চাইলেই ইন্টারনেটের সুবাদে হাতের নাগালে সবকিছু পাচ্ছেন। সুতারাং শিল্পীরা টাকা খরচা করে অ্যালবাম প্রকাশ করে কেনো গচ্ছা খাবেন? আমি হলফ করে বলতে পারি, যারা গান ভালোবাসেন তারা হয়তো অনেকেই বলতে পারবেন না, সর্বশেষ কবে টাকা দিয়ে গানের অ্যালবাম কিনেছেন। শিল্পীরা যদি মিউজিক ভিডিও’র মাধ্যমে টিকে থাকেন তবে আমি বলবো- তাই থাকুন! গানের মানুষ গান  ছাড়া কি করে বাঁচবেন!

জাগো নিউজ : ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ছবির টাইটেল ট্র্যাক এ ‘মুসাফির’ ছবিতে ‘পথ জানা নেই’ দু’টি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। সাড়া পেলেন কেমন?
তাহসান : (হাসিমুখ) খুব ভালো রেসপন্স পেয়েছি। সিনেমাতে গান করার ইচ্ছা আরো বেড়ে গেলো।

জাগো নিউজ : তাহলে এখানে নিয়মিত হচ্ছেন?
তাহসান : সবে তো ইচ্ছা পোষণ করেছি, নিয়মিত কিনা ঠিক বলতে পারছি না। তবে ব্যাটে বলে মিলে গেলে গাইবো। কারণ চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করার মজা অন্যরকম।

জাগো নিউজ : শুনেছি ‘অনুভবে তুমি’ শিরোনামের একটা গান খুব শিগগির প্রকাশ হবে?
তাহসান : হ্যাঁ, সব কাজ শেষ হয়তো ক’দিনের মধ্যেই প্রকাশ পাবে। এখানে আমার সাথে কণ্ঠ দিয়েছেন পূজা। গানটি চমৎকারভাবে সবাই গ্রহণ করবেন বলেই বিশ্বাস করি।


জাগো নিউজ : অভিনয়ে আসার গল্পটা জানতে চাই...
তাহসান : সময়টা তখন ২০০৩ সালের দিকে। ‘অফ বিট’ নামে আফসানা মিমি পরিচালিত ভালোবাসা দিবসে প্রচারিত একটি নাটকে প্রথমবারের মতো অভিনয় করার প্রস্তাব দেন স্বয়ং আফসানা মিমি। গল্পের মান ও সার্বিক দিক বিবেচনা করে হ্যাঁ বলে দেই। এ নাটকে অভিনয়ের জন্য দর্শকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেতে থাকি। এরপরই অভিনয়ের আগ্রহ বাড়ে। পরবর্তীতে ২০০৭-এ ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ’ নামে আরও একটি নাটকে অভিনয় করি। সেটিও ভালোবাসা দিবসের বিশেষ নাটক হিসেবে প্রচারিত হয়েছিলো। তারপর থেকেই নিয়মিত করছি।

জাগো নিউজ : অতীতে এবং বর্তমানে আপনাকে ভালোবাসা দিবস এবং ঈদের নাটকেই দেখা যায়। কিন্তু অন্যসময় আপনার অভিনীত নাটকের কোনো খোঁজ থাকে না কেন?
তাহসান : প্রথমে বলতে চাই এ সময় দর্শকরা একটু ভিন্ন কাজ পছন্দ করেন এবং আমাদের দেশে নাটকগুলো দর্শকরা উৎসব কেন্দ্রিক বেশি পছন্দ করেন। সেজন্য উৎসবেই আমি কাজ করে থাকি। তাছাড়া উৎসবের সময় ভালোবাসার নাটকগুলো বেশি নির্মিত হয়। আমি রোমান্টিক গল্পেই কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আর আমার নিজের সময়েরও একটি ব্যপার আছে। দেখা যায়, অনেকসময় কাজের অফার আসে কিন্তু সময় দিতে পারি না বলে করা হয় না।

জাগো নিউজ : তার মানে আপনি শুধুই রোমান্টিক গল্পের নায়ক?
তাহসান : প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব একটা সিগনেচার থাকে। যেমন কেউ আমার গান শুনলে বুঝতে পারবেন যে এটা তাহসানের গান। একইভাবে নাটকে আমার সিগনেচার হচ্ছে রোমান্টিক হিরো হিসেবে। তাছাড়া এদেশে রোমান্টিক হিরোর অভাব আছে। সুতরাং ঐ সীমিত স্থানটা আমি পূরণ করার চেষ্টা করছি।

জাগো নিউজ : প্যাকেজ নাটক-টেলিফিল্মে দেখা গেলেও আপনাকে ধারাবাহিক নাটকে দেখা যায় না?
তাহসান : ধারাবাহিক নাটকে কাজ করতে গেলে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। আমার হাতে অতো সময় নেই। সেজন্যই ধারাবাহিক নাটকে আমাকে দেখা যায় না। তবে সময় মিললে এবং গল্প পছন্দ হলে ভেবে দেখবো অভিনয় করা যায় কিনা।

জাগো নিউজ : নাটকে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আগে যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখেন...
তাহসান : প্রথমেই গল্পটা কেমন হবে সেটা বিবেচনা করি। তারপর ডিরেক্টরের মেকিং দক্ষতা এবং সবশেষে কতো সময় লাগবে কাজটি শেষ হতে। এই তিনটি জিনিস কোনো নাটকে মনমতো হলেই চুক্তিবদ্ধ হই।

জাগো নিউজ : বর্তমান টিভি-নাটক নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
তাহসান : প্রথমেই বলবো কাজের সংখ্যা প্রচুর। অনেক সময় দর্শক কোনটা দেখবেন আর কোনটা বাদ দেবেন এটা ঠিক করতেই দ্বিধায় ভুগেন। আমার মনে হয় নাটকের পড়িমানটা কমিয়ে নাটকের মানটা বাড়ানো উচিত। তবেই সবার কাছে কাজগুলো পৌঁছুবে। আজকাল দেখা যায়, অনেক নাটকে গল্প ভালো থাকে না, কিন্তু ভালো অভিনয়ি শিল্পী বা তারকাখ্যাতির জন্য সেটি পার পেয়ে যায়! কিন্তু ভালো মানের শিল্পীরা ভালো গল্প নিয়ে কাজ করলে সেই কাজ আরো অনেক বেশি সমাদৃত হবে।

জাগো নিউজ : চলচ্চিত্রে আপনাকে কবে দেখা যাবে?
তাহসান : আমি মনে করি আমার যারা ফ্যান আছেন তাদের চেতনার সাথে ম্যাচ করে এমন কোনো গল্প-চরিত্র যদি পাই তবে অবশ্যই চলচ্চিত্রে কাজ করবো। তবে বর্তমান সময়ে যে ধরনের কমার্শিয়াল ছবি তৈরি হচ্ছে তাতে কাজ করার ইচ্ছা নেই। কেননা, নায়ক হবার বয়স থাকলেও নাচানাচি করার সময়টা আমি পিছনে ফেলে এসেছি। তাই নিজের ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই এমন কাজ হলে আপত্তি নেই।

জাগো নিউজ : বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে কিছু বলুন...
তাহসান : ঈদের কাজের জন্য অনেকেই যোগাযোগ করছেন। এরইমধ্যে ‘এয়ারপোর্ট’ নামে একটা নাটকের কাজ শেষ করেছি। এছাড়া মিউজিক নিয়েও কাজ করছি। বেশ কিছু ফটোশুটেও অংশ নিচ্ছি। ঈদের আগে আরো বেশ কিছু নাটকে কাজের সম্ভাবনা আছে। এই তো- চলছে ব্যস্তার গাড়ি।

জাগো নিউজ : শুনছি হজ্জ্বে যাওয়ার নিয়ত করেছেন?
তাহসান : নিয়ত অনেক আগ থেকেই ছিল এবার ভিসার জন্য আবেদন করেছি। ভিসা পেলেই যাবো। দোয়া করবেন।

জাগো নিউজ : সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন টেলিভিশনের কোনো টক শোতে যাবেন না। হুট করে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?  
তাহসান : এর বিশেষ কোনো কারণ নেই। মনে হলো টক শোতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই তাই বললাম। এর বেশি কিছু না।

জাগো নিউজ : শোবিজের অনেক নতুন মুখ আসছে। কিন্তু বেশিরভাগই সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে। আপনার চোখে সমস্যাটা কোথায়?
তাহসান : এটা বরাবরই হয়ে আসছে এবং আগামীতেও হবে। কথায় বলে, ‘আম দুধ এক হবে-আঁটি আধারে যাবে’। ভালো যারা তারা টিকে থাকবে এবং কাজ না জেনে নড়বড়ে অবস্থানে থাকলে হারিয়ে তো যেতেই হবে! এতে সমস্যা নিজের যোগ্যতা ও সামর্থে। অন্য কিছু নয়।

জাগো নিউজ : আপনার পথ চলায় পরিবার থেকে কেমন অনুপ্রেরণা পেয়েছেন?
তাহসান : পরিবার সব সময় আমাকে সাপোর্ট দিয়েছে এবং দিচ্ছে। মূলত পরিবারই থেকেই আমি সকল কাজের অনুপ্রেরণাটা আগে পাই।

জাগো নিউজ : বাস্তবে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার রের্কড সংখ্যক ফ্যান। তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন...
তাহসান : ফ্যানদের জন্যই আমি আজকের তাহসান। এজন্য সকলের কাছে কৃতজ্ঞ এবং দোয়া চাই যাতে ভবিষ্যতে আরো ভালো কাজ উপহার দিতে পারি।

এলএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।