বিশ্বনেতা শেখ হাসিনার সান্নিধ্যই বড় মূল্যায়ন : রিয়াজ
আওয়ামী লীগের হয়ে সংস্কৃতি অঙ্গনের বেশ ক’জন প্রিয়মুখ এবার নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের বাদ দিয়েই গঠিত হলো নতুন মন্ত্রিসভা। গেল দুই মেয়াদের সংস্কৃতিমন্ত্রি আসাদুজ্জামান নূরও নেই নতুন মন্ত্রিসভায়। সম্ভাবনা জাগিয়েও পাওয়া গেলনা নায়ক ফারুককে। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে সংস্কৃতি অঙ্গনে।
তথ্যমন্ত্রী হিসেবে আজ সোমবার, ৭ জানুয়ারি শপথ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং দলের অন্যতম মুখপাত্র ড. হাছান মাহমুদ এমপি। ময়মনসিংহ-৫ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য কে এম খালিদকে দেয়া হয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
তবে এই দুজন মন্ত্রীকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত চিত্রনায়ক রিয়াজ। তিনি আজ সোমবার জাগো নিউজকে বলেন, ‘যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তাদের হাত ধরেই অনেক প্রাপ্তি হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। হয়তো অনেকের প্রত্যাশা ছিলো সংস্কৃতি-সিনেমার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট অঙ্গনের কোনো একজনের উপর ন্যাস্ত হবে।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটা অবশ্যই তিনি ভেবেচিন্তে নিয়েছেন। তার নতুন মন্ত্রিসভা কিন্তু দেশবাসীর কাছে প্রশংসিত হচ্ছে। নতুন মুখ আর তারুণ্যে উজ্জীবীত এই মন্ত্রিসভা দিয়ে একদিকে তিনি চমক দিয়েছেন, অন্যদিকে
কঠিন চ্যালেঞ্জও গ্রহণ করেছেন।
আমি মনে করি হতাশ হওয়ার এখানে কিছু নেই। নতুন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ভাই খুবই চমৎকার একজন মানুষ। তার নেতৃত্বও প্রশংসনীয়। তিনি সফল মন্ত্রী হিসেবেও পরিচিত। তার অধীনে দেশের গণমাধ্যম ও সিনেমার অনেক উন্নতি হবে বলেই আমি প্রত্যাশা করি। অন্যদিকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব যাকে দেয়া হয়েছে তিনিও পরীক্ষিত নেতা। দক্ষ এবং ভালো সংগঠক বলেই জেনেছি।’
নায়ক রিয়াজ বলেন, ‘কি হতে পারতো বা কি হওয়া উচিত সেই ভাবনার চেয়ে এখন বেশি জরুরি সবাই এক হয়ে দেশের জন্য কাজ করা। প্রধানমন্ত্রী যাদের উপর দায়িত্ব দিয়েছেন তারা সফল হবেন বলে মনে করি আমি। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এক হয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের জন্য কাজ করতে হবে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই।’
সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থায় নতুন দুই মন্ত্রীর আগমন। এ প্রসঙ্গে রিয়াজ বলেন, ‘অনেক চ্যালেঞ্জ তাদের সামনে অপেক্ষা করছে। নেতৃত্বের দক্ষতা ও যোগ্যতার ছাপ রেখেই যেন সব সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেন তারা।
ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই সব ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে সিনেমার জন্য সবাই কাজ করবো। কাউকে না কাউকে উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের বসতে হবে। অতীতে কে কাকে গালি দিয়েছে, বকেছে না কী করেছে সেসব ভুলে সিনেমাকে বাঁচাতে হবে।
একদিকে ভালো ছবির দরকার। আবার ছবির সংখ্যাও বাড়ানো দরকার। মন্ত্রী বা সরকার নিজেরা সিনেমা বানাবেন না। সেটা করতে হবে আমাদের সিনেমার মানুষদের। দলবাজি ত্যাগ করে সিনেমার মানুষ হয়ে শিল্পটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখতে হবে।’
যৌথ প্রযোজনা ও সাফটা চুক্তিতে আমদানি সিনেমা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্র পরিবারের দাবির মুখে যৌথ প্রযোজনার অনেক নিয়ম পরিবর্তিত হয়েছে। এটা আনন্দের। কিন্তু নতুন নিয়মগুলো চলচ্চিত্রবান্ধব কী না তাও ভাবতে হবে।
আমাদের বেশি নজর দিতে হবে সিনেমা আমদানি-রপ্তানির দিকে। আজকাল সাফটায় ভিনদেশের যাচ্ছেতাই সিনেমা মুক্তি দেয়া হচ্ছে এদেশে। হল মালিকরা দাবি করেন এই দেশে পর্যাপ্ত সিনেমা নেই, ভালো সিনেমা তাই বিদেশি ছবি চালাতে হয়।
তার মানে হল মালিকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সিনেমার যোগান দিতে পারছি না আমরা। বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত। হল মালিকদেরও দেশীয় ছবির ব্যাপারে আন্তরিকতা বাড়াতে হবে।
পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেও অবহিত করা উচিত আমদানির নামে দেশে কী আসছে আর কী যাচ্ছে। সাফটা চুক্তিতে সিনেমার যে বিনিময় সেটাতে সঠিক তদারকির অভাব আছে। আগেও জাগো নিউজে সাক্ষাতকারে এই কথা বলেছিলাম আমি।
সিনেমার জন্য বিদেশি বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ, যৌথ প্রযোজনাও গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলোর সঠিক ম্যানেজম্যান্ট প্রয়োজন। বিদেশি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে দেশে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু দেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন করা যাবে না।
এখন নতুন মন্ত্রিসভা হয়েছে। চলচ্চিত্রের জন্য নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তরা আসবেন। তাদের সঙ্গে বৈঠক করে এসব বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
এদিকে আওয়ামী লীগের নতুন সরকার গঠনের পর থেকেই আলোচনায় রয়েছেন রিয়াজ। নির্বাচনের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের হয়ে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে সমাবেশেও যোগ দিয়েছেন। হঠাৎ করে নৌকার প্রচারে নায়ক ফেরদৌস ও রিয়াজকে সক্রিয় হতে দেখে অনেকেই প্রত্যাশা করছেন তাদের সরকারি কোনো দায়িত্বে দেখা যাবে বলে।
তবে বিষয়টিকে স্রেফ মনগড়া আলোচনা বলেই পাশ কাটালেন চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া চিত্রনায়ক রিয়াজ। তিনি বলেন, ‘যারা এসব বলেন তারা ভুল বলেন। বা ভুল ভেবে বলেন। কেউ কেউ আবেগ থেকে বলেন, কেউ হয়তো খোঁচাও মারতে চান। সরকারি কোনো সুযোগ পাওয়ার আশায় আমি নৌকার প্রচারে নামিনি।
আমি ও ফেরদৌস এবং আরও অন্য যারা আওয়ামী লীগের প্রচারে অংশ নিয়েছি আমাদের সবার স্বার্থ একটাই ছিলো শান্তি ও সমৃদ্ধির নেতৃত্বের হাতে থাকুক বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগের চেয়ে যোগ্য সরকার উপহার দেয়ার মতো দল নেই। শেখ হাসিনার চেয়ে যোগ্য নেতৃত্ব এই দেশে আর নেই।
একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে তাই নৌকার জন্য, বঙ্গবন্ধু কন্যার জন্য ভোট চেয়েছি। নৌকার জয় হলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাবে। সবাই ভালো থাকবো। আমাদের আগামী প্রজন্ম ভালো থাকবে। সে একটি সমৃদ্ধ ডিজিটাল দেশ পাবে।
আমি বিশ্বাস করি, চমৎকার মন্ত্রিসভা তৈরি করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রি। নতুন মন্ত্রীরা দেশের জন্য সাফল্য বয়ে আনবেন। এর বেশি কোনো ব্যক্তিগত প্রত্যাশা আমার নেই।
আর যে মূল্যায়ণের প্রশ্ন উঠছে তার জবাবে বলবো, সরকার বা রাষ্ট্র মূল্যায়ণ করবে কী না সেটা একান্তই তার ব্যাপার। আমি নাগরিক হিসেবে যেটুকুর যোগ্য সেটা পাব, পাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাকে মূল্যায়ণ করেছে বলেই কিন্তু আমি তার সান্নিধ্য পেয়েছি।
তার মতো একজন জনপ্রিয় ও শক্তিশালী বিশ্বনেতার সান্নিধ্য সবাই পায় না। আমার সেই সৌভাগ্য হয়েছে। তিনি আমাকে আদর করেন ছোটভাইয়ের মতো। তার সান্নিধ্য পাওয়াটাই সবচেয়ে বড় মূল্যায়ন।’
এলএ/এমএবি/এমকেএইচ