কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো হোক স্বাবলম্বী


প্রকাশিত: ০৬:৩৮ এএম, ২৩ আগস্ট ২০১৫

চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর অন্যতম। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে এ সুযোগ অনেকটাই সীমিত। সাধারণ মানুষজন যাতে তাদের নাগালের মধ্যে চিকিৎসা সেবা পেতে পারে এ কারণেই ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার  কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের কাজ শুরু করে। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পাঁচ বছর মেয়াদে ১৮ হাজার ক্লিনিক স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে  সরকার কাজ শুরু করলেও ১০ হাজার ৭২৩টি ক্লিনিক চালু হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়। ক্লিনিকগুলো করা হয়েছিল জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য। এটি কোনো রাজনৈতিক প্রজেক্ট ছিল না। তারপরও প্রতিহিংসার রাজনীতি যে কতো ভয়ঙ্কর হতে পারে তার প্রমাণ যেন এই বিপুলসংখ্যক ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া। আশার কথা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় গিয়ে বন্ধ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালুর উদ্যোগ নেয়। এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৫০০ ক্লিনিক স্থাপিত হয়েছে, এর ১২ হাজার ৯০৬টি চালু রয়েছে।

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কিংবা সরকার পরিবর্তন হলেও যেন এই ক্লিনিকগুলো বন্ধ হয়ে না যায় সে কারণে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার জাতীয় পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। শনিবার শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি ক্লিনিক পুরস্কার বিতরণ এবং কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের ই-লার্নিং কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও জানান প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থাকবে।  কমিউনিটি ক্লিনিকগগুলো পরিচালিত হবে স্থানীয় জনগণ দ্বারা। ঘর তৈরি করা, ওষুধ দেয়াসহ অন্যান্য কিছু সুযোগ সুবিধা দেবে সরকার। স্থানীয় জনসাধারণ এবং ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।  

বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। এ জন্য  আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানো এবং নিজেদের চেষ্টায় সব কিছু করতে হবে-প্রধানমন্ত্রীর এই মনোভাবও অত্যন্ত ইতিবাচক। কমিউনিটি ক্লিনিক স্থানীয় জনগণের পরিচালিত, সম্পূর্ণ নিজস্ব হোক- প্রধানমন্ত্রীর এই প্রত্যাশার মধ্যেও দূরদৃষ্টির পরিচয় আছে। কেননা তিক্ত অভিজ্ঞতা তো রয়েছেই। সে কারণেই এক নির্দেশে যেন কমিউনিটি ক্লিনিক কেউ বন্ধ করতে পারে তাই জনসাধারণকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে।

কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সাধারণত প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। নারী এবং শিশুরাই সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ক্লিনিকগুলো সচল থাকা অত্যন্ত জরুরি।

প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ৩০ ধরনের জরুরি ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। একেকটি ক্লিনিকের জন্য বছরে ওষুধের বাজেট ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। এই ওষুধেরও যাতে সঠিক ব্যবহার হয় সে ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো ফান্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হলে সেগুলো স্বাবলম্বী হবে। স্থানীয় জনসাধারণ এর সাথে যুক্ত হলে এগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রেও অনেক সুবিধা হবে। সীমিত সম্পদের এদেশে সবকিছুর জন্য আমাদের শুধু সরকারের দিকে চেয়ে থাকলে চলবে না। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য আমাদের যে করণীয় রয়েছে তার কিছুটা আমরা করতে পারি এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বাঁচিয়ে রেখে। এর পাশে থাকে। জনসাধারণের মধ্যে এই শুভবোধের উদয় হোক-এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।