আইয়ুব বাচ্চু-আমজাদ হোসেনদের চলে যাওয়ার বছর

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:২৬ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮

বছরের শেষদিকে এসে হারানোর তালিকায় যুক্ত হলো বেশ কিছু গুণীজনের নাম। ভক্তদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেলেন কিংবদন্তী গিটারিস্ট আইয়ুব বাচ্চু, নির্মাতা আমজাদ হোসেন, চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেনের মতো মানুষেরা।

এছাড়াও বছর জুড়েই ছিলো শোকের মিছিল। এক পলকে দেখে নেয়া যাক সেই তালিকা-

সিরাজ হায়দার
বছরের প্রথম শোক নেমে আসে অভিনেতা সিরাজ হায়দারের মৃত্যুতে। ১১ জানুয়ারি বাংলা চলচ্চিত্রের শক্তিমান ও জনপ্রিয় এই অভিনেতা মারা যান। সেদিন ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৬টার দিকে রাজধানীর কল্যাণপুরে নিজ বাসায় মারা যান তিনি।

শাম্মী আক্তার
কণ্ঠে তার কোকিল গাইতো যেন। বহু কালজয়ী গান তিনি উপহার দিয়েছেন দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে। বলছি কিংবদন্তী গায়িকা শাম্মী আক্তারের কথা। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি নন্দিত এই সংগীতশিল্পী মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।

দীর্ঘদিন ধরেই তিনি মরনব্যাধি ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ১৬ জানুয়ারি তার শরীর হঠাৎ বেশি খারাপ হলে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।

কাজী আজিজ আহমেদ
৩০ জানুয়ারি মারা যান বাংলা চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান গীতিকার কাজী আজিজ আহমেদ। ‘চোখ যে মনের কথা বলে’র মত অসংখ্য গান তিনি লিখে গেছেন। পাশাপাশি বেশ কিছু জনপ্রিয় সিনেমার চিত্রনাট্যও লিখেছেন তিনি। ছিলেন একজন সফল চলচ্চিত্র পরিচালকও।

জুটন চৌধুরী
দীর্ঘদিন মরনব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি মারা যান বিনোদন সাংবাদিক জুটন চৌধুরী।

আলী আকবর রুপু
ডায়াবেটিস, হার্ট ও কিডিনির অসুখসহ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন আলী আকবর রুপু। হঠাৎ তার শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় ভর্তি করা হয় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ২২ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

রানী সরকার
চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রানী সরকার। একটা সময় চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে ছিলেন। কাটিয়েছেন অমানবেতর দিন। অর্থাভাবে ঘুরেছেন পথে পথে। ঠিকমতো পাননি চিকিৎসাও।

জীবনের এই যুদ্ধে হেরে গিয়ে ২০১৮ সালের ৭ জুলাই রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৮৬ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী বার্ধক্য ছাড়াও পিত্তথলির পাথর, বাতজ্বর, জটিল কোলেলিথিয়েসিস রোগসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।

আব্দুস সাত্তার
বাংলা লোকজ চলচ্চিত্রের সারা জাগানো নায়ক আব্দুস সাত্তার। তার প্রথম ছবি ‘আমির সওদাগর ভেলুয়া সুন্দরী’ যেটি পরিচালনা করেছেন ইবনে মিজান। তবে ১৯৮৪ সালে আলমগীর পিকচার্স এর ব্যানারে তিনি ‘রঙিন রূপবাণ’ ছবিতে প্রথম নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। পরবর্তীতে তিনি অভিনয় করেন মধুমালা মদন কুমার, সাত ভাই চম্পা সহ আরো অনেক ছবিতে।

র্দীঘদিন ধরেই প্যারালাইসড জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন এই নায়ক। ছিলো উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুসে সংক্রমণ ও ডায়াবেটিসসহ ১৩টি রোগের সমস্যা। সবকিছুকে ছাপিয়ে অবশেষে ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট না ফেরার দেশে চলে যান চলচ্চিত্রের বর্ষিয়ান এই অভিনেতা।

আইয়ুব বাচ্চু
মৃত্যু দিয়ে যেন দেশটাই কাঁপিয়ে দিলেন তিনি। তার শোকের মাতম চলছে এখনো। দেশে-বিদেশে কোটি কোটি ভক্তরা আজও তার স্মৃতিচারণে মত্ত। কাঁদছেন তার সহকর্মীরা। বিরহে জ্বলছে তার প্রিয় রুপালি গীটারগুলো। বলছি ব্যান্ড লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চুর কথা।

গেল ১৮ অক্টোবর এলআরবির দলনেতা ও লিড গিটারিস্ট আইয়ুব বাচ্চু মারা যান। সেদিন নিজ বাসায় অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। এরপর স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঢাকা ও চট্টগ্রামে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দেখা যায় মানুষের ঢল। বাচ্চুকে চট্টগ্রামে তার মায়ের পাশে দাফন করা হয়।

রঙ্গলাল দেব চৌধুরী
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রঙ্গলাল দেব চৌধুরী। আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর দিন ১৮ অক্টোবর কানাডার টরন্টোর সেইন্ট মাইকেল হাসপাতালে তিনিও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

আনোয়ার হোসেন
বছরের শেষ মাসটির প্রথম দিন ১ ডিসেম্বর। আকস্মিক প্রচার হয় তার মৃত্যুর খবর। নেমে আসে শোক। পান্থপথের হোটেল ওলিও ড্রিম হেভেনের একটি রুমে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন মারা গেছেন।

আমজাদ হোসেন
যতোদিন এই দেশে চলচ্চিত্র থাকবে ততোদিন সম্মান ও শ্রদ্ধায় উচ্চারিত হবে আমজাদ হোসেনের নাম। নির্মাণে, চিত্রনাট্যে ও গীতিকবিতায় তিনি রেখেছেন মুন্সিয়ানার ছাপ। তার ‘ভাত দে’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’ ছবিগুলো ঢাকাই সিনেমাকে গর্বিত করেছে।

কালজীয় এই নির্মাতা ১৪ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ব্যাংককের একটি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

আমজাদ হোসেন চলচ্চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি ছিলেন একজন স্বনামধন্য লেখক। তার লেখা উপন্যাস, কিশোর উপন্যাস, গল্প সমগ্র মুগ্ধতা ছড়িয়েছে এদেশের সাহিত্যপ্রেমীদের মধ্যে।

বেশ কিছু চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন টিভি নাটকে। ‘জব্বার আলী’ সিরিজের নাটকগুলোতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করতেন তিনি।

সাইদুল আনাম টুটুল
২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সাইদুল আনাম টুটুল মৃত্যুবরণ করেন। রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ ল্যাব এইডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ‘আধিয়ার’ খ্যাত এই নির্মাতা।

এলএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।