২০১৮ সালে শোবিজে আলোচিত নতুন মুখ

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:১৪ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮

প্রতি বছর শেষেই দেখা যায় লম্বা একটা তালিকা। যেখানে অনেক প্রিয় মানুষেরে প্রয়াণের শোক মিশে থাকে। তবে তার বিপরীতে প্রতি বছর নতুনেরাও আসেন। মাতিয়ে রাখেন শোবিজের নানা আঙিনা।

প্রকৃতি তার ভারসাম্য রক্ষা করে বিয়োগের সঙ্গে নতুন মুখ যোগ করে। তেমনি যোগের তালিকায় ২০১৮ সালটি বেশ আশা জাগানিয়া। এই বছরে সিনেমা, গানে দেখা মিলেছে নতুন প্রতিভার।

সেইসব প্রতিভা ছড়িয়েছে সাফল্যের সুবাসও। পেয়েছেন তারকাখ্যাতি। দেখে নেয়া যাক নতুন সেইসব নামগুলো-

সিয়াম
শোবিজের জন্য মোটেও নতুন কিছু নন সিয়াম আহমেদ। কয়েক বছর ধরেই নাটক-বিজ্ঞাপনে তার সরব উপস্থিতি। বেশ ক’জন জনপ্রিয় ইউটিউবারদের ভিডিওতেও তাকে দেখা গেছে বহুবার। মিউজিক ভিডিও এবং শর্টফিল্মেও মাতিয়েছেন তিনি।

তবে চলচ্চিত্রের নায়ক হিসেবে সিয়ামের আত্মপ্রকাশ ঘটে ২০১৮ সালে। জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজনায় ‘পোড়ামন ২’ ছবি দিয়ে অভিষিক্ত হন তিনি। ছবিতে তার দুর্দান্ত অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে সবমহলের সিনেমাপ্রেমী দর্শকের কাছে।

বছর শেষেও সিয়াম অভিনয়ের চমক দেখান ‘দহন’ ছবিতে। এই ছবিটিও পরিচালনা করেন তার প্রথম ছবির পরিচালক রায়হান রাফি। এতে সিয়ামের নায়িকা তার প্রথম ছবির নায়িকা পূজাই।

চলচ্চিত্র পাড়ায় চলতি বছরে সবচেয়ে আলোচিত নায়ক সিয়াম। ক্যারিয়ারের প্রথম ছবিটি দিয়েই তিনি ব্যবসা সফল নায়কের খ্যাতি পেয়েছেন। ছাড়িয়ে গেছেন অন্য সবাইকে। চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের ধারনা, ইন্ডাস্ট্রিতে আগামীর ভরসা হয়ে উঠবেন সিয়াম।

পূজা চেরী
২১০৮ সালে চলচ্চিত্রের সংযোজন চিত্রনায়িকা পূজা চেরী। শিশু শিল্পী হিসেবে কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। টিভি নাটক ও বিজ্ঞাপন দিয়ে পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। কিন্তু চিত্রনায়িকা হিসেবে পূজা অভিষিক্ত হন ‘পোড়ামন ২’ ছবি দিয়ে।

রায়হান রাফির পরিচালনায় সিয়ামের বিপরীতে পূজা নিজের নায়িকা জীবনের দারুণ সম্ভাবনার কথাই জানান দিয়েছিলেন সেই ছবিতে। সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলো বছর শেষে ‘দহন’ সিনেমাতেও। এখানেও তিনি রেখেছেন সাবলীল অভিনয়ের ছাপ।

তবে পূজার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম সিনেমা ‘নূরজাহান’। এটি কলকাতার রাজ চক্রবর্তীর ছবি। বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছিলো সাফটা চুক্তিতে।

নায়িকা নিয়ে চারদিকে হতাশা তখন পূজাকে নিয়ে আশাবাদী সবাই। তবে জাজ মাল্টিমিডিয়ার নায়িকা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া পূজা সার্বজনীন নায়িকা হয়ে উঠতে পারবেন কি না সেটাই দেখার অপেক্ষায় ঢাকাই সিনেমা।

অধরা
আঙুল গুনতে থাকলে এক ডজনেরও বেশি নায়িকার নাম চলে আসা যারা অপু বিশ্বাসের পর ঢাকাই সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন। কিন্তু মাহি, পরীমনি, মিম ছাড়া তেমন করে আলোচনায় আসতে পারেননি কেউই। ব্যবসায়িক সাফল্যের হিসেবে তো নায়িকা খুঁজে পাওয়াই মুশকিল হয়ে পড়বে এই ইন্ডাস্ট্রিতে।

সেখানে ২০১৮ সালে পূজার চেরীর পাশাপাশি উচ্চারিত হয়েছে আরও একটি নতুন নায়িকার নাম। তিনি অধরা খান। সৌভাগ্য তার। ইস্পাহানি আরিফ জাহান, শাহীন সুমনের মতো নির্মাতাদের ছবি দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষিক্ত হয়েছেন। ‘নায়ক’ ও ‘মাতাল’ নামের ছবি দুটোতে নায়ক হিসেবে পেয়েছেন হালের জনপ্রিয় বাপ্পী চৌধুরী ও সাইমন সাদিকের বিপরীতে।

ছবি দুটো ধুমধাম ব্যবসা না করলেও মন্দার বাজারে হলে দর্শক টানতে পেরেছিলো।
আর সেই সুবাদে নতুন নায়িকা হিসেবে সবার নজর কেড়ে নিয়েছেন অধরা। প্রথম বছরটা বৃহস্পতি তুঙ্গে নিয়েই শেষ করলেন এই নবাগতা। হাতে এসেছে আরও কিছু বিগ বাজেটের ছবি। তবে সময়ের সাথে সাথে চলচ্চিত্রের রুপালি পর্দায় নিজেকে কতোটা ধারাবাহিক ও ভরসার প্রতীক করে তুলতে পারেন সেটাই দেখার বিষয়।

রায়হান রাফি
বয়সের সাথে সাথে গ্ল্যামার হারাতে থাকে নায়ক-নায়িকার। আর ঢাকাই সিনেমার ইতিহাস বলে, গ্ল্যামার শেষ তো তারকাগিরি শেষ। এখানে অভিনয়শিল্পীদের অভিজ্ঞতা খুব একটা কাজে লাগানো হয় না।

তাই তারকাদের টিকে থাকার জন্য গ্ল্যামারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়। কিন্তু একজন নির্মাতা যতো বয়স্ক হন ততোই নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারেন অভিজ্ঞতার আলোকে। সেদিক থেকে চোখ বন্ধ করে বলা যায় চলচ্চিত্রে ২০১৮ সালের সেরা সংযোজন রায়হান রাফি নামটি।

একটা অখ্যাত নাম ২০১৮ সালে উঠে এলো আলোচনায়। তাকে নিয়ে এখন মাতামাতি সবখানে। প্রযোজকরা স্বপ্ন দেখছেন রায়হান রাফিকে দিয়ে সিনেমা পরিচালনা করাবেন। অনেক নায়ক-নায়িকারাও রাফির সিনেমায় অভিনয়ের জন্য মুখিয়ে আছেন।

কারণ, দুটি ছবি তৈরি করেছেন এই তরুণ নির্মাতা। দুটি ছবিতেই তিনি দেখিয়েছেন নির্মাণের মুন্সিয়ানা। সুন্দর গল্প বাছাই, সেই গল্পের সিনেমাটিক উপস্থাপন, শিল্পী নির্বাচন, আদর্শ নির্মাণের স্বাক্ষর তিনি রেখেছেন ‘পোড়ামন ২’ ও ‘দহন’ সিনেমায়।

দুটি ছবি দিয়েই প্রশংসিত হয়েছেন রায়হান রাফি। জাজ মাল্টিমিডিয়ার হাত ধরে সিনেমায় অভিষিক্ত হওয়া এই নির্মাতা অনেকদূর এগিয়ে যাবেন অনেকদূর এই প্রত্যাশা সবার।

অনম বিশ্বাস
অনম বিশ্বাস। একজন নিভৃতচারী সৃষ্টিশীল মানুষ। আমার ‘সি তে সিনেমা’ থেকে প্রথমবার চলচ্চিত্র প্রযোজনা করতে এসে আমি অনম বিশ্বাস'কেই বেছে নিয়েছিলাম পরিচালক হিসেবে। আমি ভর করেছিলাম অনমের বিশ্বাসে। আমি এখনো বিশ্বাস করি অনমের আমাদের সবাইকে আরো অনেক কিছু দেবার আছে। বিশেষ করে 'দেবী' অনম'কে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে, আমি নিশ্চিত।

২০১৬ সালের সেরা চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার পর অনম বিশ্বাসকে নিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলেছিলেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের হাত ধরেই ২০১৮ সালে চলচ্চিত্র পরিচালনাতে আসেন অনম।

এই আসা সাফল্যের। ‘দেবী’ চলচ্চিত্র দিয়ে তিনি বাজিমাত করেছেন। দেখিয়েছেন নিজের নির্মাণের মুন্সিয়ানা। বছরজুড়েই আলোচনায় ছিলেন তিনি ও তার ছবি ‘দেবী’।

আরমান আলিফ
এক গানই তারকা বানিয়ে দিয়েছে গানটির গায়ক, গীতিকার ও সুরকার আরমান আলিফকে। গানের নাম ‘অপরাধী’। পথে-ঘাটে এখানে সেখানে সবখানেই বাজতে শোনা গেছে গানটি। পশ্চিমবঙ্গ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও গানটির ব্যাপক চাহিদা ছিলো।

বাংলাদেশের সংগীত ইতিহাসে অনন্য এক রেকর্ডও গড়েছে আরমান আলিফের ‘অপরাধী’। প্রথম বাংলা গান হিসেবে ইউটিউবে ১০ কোটি ভিউয়ারের মাইলফলক স্পর্শ করে এটি। এখন পর্যন্ত সংখ্যাটা ২০ কোটির মতো।

গত ২৬ এপ্রিল ঈগল মিউজিক ভিডিও স্টেশনে গানটির ভিডিও আপলোড করা হয়। এর পর থেকেই ভাইরাল। প্রথম ১৪ দিনেই পেয়ে যায় কোটি ভিউয়ার। এরপর দিন যত গড়িয়েছে ততই ছড়িয়েছে। আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ শুরুর আগে ড্রেসিংরুমে গানটি গেয়ে ভিডিও প্রকাশ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। গ্লোবাল র্যাংকিংয়ের উঠে আসে ৬০ নম্বরে।

দীর্ঘদিন ধরেই গানের সঙ্গে যুক্ত আরমান আলিফ। চন্দ্রবিন্দু নামে একটি ব্যান্ডও রয়েছে তার। তবে ২০১৮ সালই আরমান আলিফের পরিচিতির বছর, উত্থানের বছর। হতাশারও বটে। কারণ, অপরাধী গানটির পর নিজের সৃষ্টিশীলতার ছাপ তিনি দেখাতে পারেননি। একের পর এক গান করে যাচ্ছেন যার সবগুলোতেই ‘অপরাধী’ গানের কথা, সুর ও সংগীতের ছাপ রয়েছে।

Oishee

জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী
গেল বছর থেকেই বাংলাদেশে তুমুল আলোচিত বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতাটি। কারণ, অন্তর শোবিজের হাত ধরে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিযোগীও। গেল বছরে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ খেতাব নিয়ে চীনে গিয়েছিলেন জেসিয়া ইসলাম। সেবারে হয়নি তেমন কোনো অর্জন।

তবে ২০১৮ সালের মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার মূল আসরে গিয়ে বেশ আশা জাগিয়েছিলেন বরিশালের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। তিনি নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনাল পর্যন্ত। প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি মেয়ের ফাইনালে যাওয়া।

তাকে ঘিরে বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখেছে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ফাইনালিস্ট হওয়ার সান্ত্বনা নিয়ে ফিরলেও ঐশী জয় করে নিয়েছেন দেশবাসীর মন। তাকে অভিনন্দিত করেছেন শোবিজের তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষেরা।

নিজের মেধা ও জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ঐশী শোবিজে আলো ছড়াবেন এমনটাই আশা করছেন সবাই।

এলএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।