ডিজিটাল ছবির কুফলই বেশি দেখছি

নাহিয়ান ইমন
নাহিয়ান ইমন নাহিয়ান ইমন , বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৪৩ এএম, ২২ আগস্ট ২০১৫

সেই ‘৯৫ সালের দিকে অমর নায়ক সালমান শাহ’র তুমুল জনপ্রিয়তার সময় তার চলচ্চিত্রে আগমন। নিজের স্টাইল, অভিনয়ের সাবলীলতা আর কাজের প্রতি ভালো লাগার সূত্রে নামের সাথে জনপ্রিয়তার তকমা লাগতে বেশিদিন সময় লাগেনি চিত্রনায়ক রিয়াজের। সালমান পরবর্তী সময়টাতে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন নির্মাতাদের প্রথম ও সেরা পছন্দ। শাবনূরের সাথে জুটি বেঁধে তিনি উপহার দিয়েছিলেন বেশ কিছু সুপারহিট ছবি। পরবর্তীতে আরো অনেকের সাথেই জুটি বেঁধেছেন। তবে সবচাইতে বেশি সফল হয়েছেন পূর্ণিমার সাথে। দীর্ঘ দুই দশকের ক্যারিয়ারে রিয়াজ অসংখ্য ব্যবসা সফল ছবি উপহার দিয়েছেন। বিয়ের ফুল, নারীর মন, হৃদয়ের কথার মতো ছবি দিয়ে যেমন লাভারবয়, রোমান্সের রাজপুত্রের স্বীকৃতি পেয়েছেন তেমনি সাবধান, মাটির ফুল. দলপতি ছবি দিয়ে খ্যাতি পেয়েছেন অ্যাকশান হিরো হিসেবেও। পাশাপাশি সাহিত্য নির্ভর সর্বাধিক ছবির নায়কও রিয়াজ।

এসব কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন তিন বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। অনেকদিন ধরেই রয়েছেন রূপালী পর্দার আড়ালে। তবে গেল এক বছর ধরে ছোটপর্দায় দারুণভাবে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি এক নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত নানা বিষয় নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিলেন জাগো নিউজের। সঙ্গে ছিলেন নাহিয়ান ইমন-

জাগো নিউজ : কেমন আছেন?
রিয়াজ : এইতো আলহামদুলিল্লাহ্ খুব ভালো আছি।

জাগো নিউজ : এ বছর আপনার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে প্রায় দুই দশক পূর্ণ হচ্ছে। পুরো সময়টা কেমন কাটল?
রিয়াজ : কথায় বলে ‘সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না’। আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এতগুলো বছর যে কখন কেটে গেলো আমি নিজেও টের পাইনি। তবে এক কথায় বলবো খুব ভালো কেটেছে।

জাগো নিউজ : অভিনয়ের সাথে পেশাদারিত্বের জায়গাটা কেমন?
রিয়াজ : বর্তমানে অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়া যেতে পারে! আগামীতে এই ব্যাপারটা আরো ভালো হবে বলে আমার ধারণা। যেহেতু আমাদের দেশে অভিনয়টা ভালোভাবে রপ্ত করার জন্য উন্নতমানের কোন প্রতিষ্ঠান নেই সুতরাং এটা বেশ কঠিনও হবে বলে আমি মনে করি। আর অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিতে হলে কাজের প্রতি সিনসিয়ার হতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।

জাগো নিউজ : চলচ্চিত্রে দর্শকরা আপনাকে সাদরে গ্রহণ করেছিলো। তিন বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। সুতারাং বড়পর্দায় আপনি সফল। কিন্তু আজকাল আর সেখানে দেখা যায় না আপনাকে। কেন?
রিয়াজ : এর সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। অভিনয়-সংসার-ব্যবসা নিয়ে তখন খুব ব্যস্ত সময় যাচ্ছিলো। একটা সময় গিয়ে মনে হলো একটু বিরতি দেয়া যাক। তাই সরে গিয়েছিলাম। তাছাড়া ছবি নির্মাণের মানটাও কমে যাচ্ছিলো। ভালো গল্প ও চরিত্রের অভাব ছিলো। সবকিছু মিলিয়েই নীরব ছিলাম। অনেক অভিযোগ পেয়েছি ভক্ত-অনুরাগীদের কাছ থেকে। কবে ফিরবো, কেন ফিরছি না-এসব নানা কথা। চলচ্চিত্রের রিয়াজ আমি এটা ভাবতে সবসময়ই আনন্দিতবোধ করি। নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছি আবারো বড় পর্দার জন্য। এরইমধ্যে সুইটহার্ট নামে একটি ছবিতে ছোট একটি চরিত্রে কাজও করেছি। হয়তো আবারো নিয়মিত হবো এখানে।

জাগো নিউজ : একটা সময় খুব চাহিদা ছিলো আপনার। এরপর অশ্লীলতার অন্ধকার সময়টাতেও আপনি একাই শাবনূর-পূর্ণিমাকে নিয়ে সুস্থ-সুন্দর ছবি নির্মাণের লড়াই করে গেছেন। দিনগুলো মিস করেন না?
রিয়াজ : অতীত সবসময়ই রোমাঞ্চকর। ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সুতারাং সেসব নিয়ে আফসোস করেও লাভ নেই। অশ্লীলতা দিনগুলোতে সবাই যখন হলবিমুখ হতে লাগলো তখন আমরা কয়েকজন চেষ্টা করেছি ভালো ছবি দিয়ে দর্শকদের হলে রাখতে। শ্বশুড়বাড়ি জিন্দাবাদ, প্রেমের তাজমহল, মোল্লা বাড়ির বউ, মনে মাঝে তুমি, হৃদয়ের কথার মতো চমৎকার ছবি পেয়েছিলো ইন্ড্রাষ্ট্রি। সেসব ছবির জন্য অনেকেই কষ্ট করেছিলেন। তখন সবাই বলতো অশ্লীলতা না থাকলে ছবি চলে না। কিন্তু আমরা এই কথাটিকে মিথ্যে প্রমাণ করেছিলাম। মূলত তখন থেকেই অশ্লীলতা বিরোধী আন্দোলনের শুরু বলা যায়।



জাগো নিউজ : মৌসুমী এরইমধ্যে পরিচালক হিসেবে নাম কামিয়েছেন। ফেরদৌসও শিগগির শুরু করছেন। আর শোনা যাচ্ছে শাবনূরও এ পথে নামছেন। আপনার কি ইচ্ছে আছে চলচ্চিত্র নির্মাণে?
রিয়াজ : যাদের কথা বলেছেন তারা প্রত্যেকেই আমার ভালো বন্ধু। ওদের যেহেতু ইচ্ছে হয়েছে আমারও একদিন হতে পারে। তবে সবকিছু ভবিষ্যতই বলে দিবে।

জাগো নিউজ : ইদানিং ছোটপর্দায় আপনার ব্যস্ততা বেড়েছে। কী মনে হয়- ছোটপর্দাতেও আপনি সফল?
রিয়াজ : যেহেতু আমি একজন অভিনেতা সুতরাং আমার কাজের ভালো-মন্দ বিচার দু`টোই দর্শকরা করবেন এটাই স্বাভাবিক। দর্শক-শ্রোতাদের জন্যই আমি হয়তো বড়পর্দায় সফল! কারণ তারা আমাকে গ্রহণ না করলে আমি সফল হতাম না। আর ছোট পর্দায় কাজ এখন একটু বেশি করছি সেটাও কিন্তু দর্শকরা ভালোভাবেই দেখছেন। আমি দর্শকদের কাছ থেকে অনেক ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি।

জাগো নিউজ : চলচ্চিত্র এবং নাটক এই দুই মাধ্যমে নিজের স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পান কোথায়?
রিয়াজ : একজন প্রকৃত অভিনেতা-অভিনেত্রীর কাজের স্বাচ্ছন্দ্য সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য থাকে। আমিও তার বাহিরের কেউ নই। যেহেতু একটু বাছবিচার করে কাজ করি তাই স্বাচ্ছন্দ্য সব জায়গায়ই খুঁজে পাই।

জাগো নিউজ : নতুন প্রজন্মের অনেকেই আপনাকে আইডল হিসেবে দেখে। বিষয়টি কিভাবে দেখেন?
রিয়াজ: (চোখে-মুখে চিন্তার চাপ) আমাকে যারা আইডল হিসেবে দেখে তাদের বলবো আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ। নিজের ভিতর কোন দম্ভ নেই। আর এটা কারো ভিতর থাকা উচিতও নয়। আর যারা আমাকে অনুসরণ করেন তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কেননা, তাদের দোয়া ও ভালোবাসাতেই আমি আজ চিত্রনায়ক রিয়াজ হতে পেরেছি।

জাগো নিউজ : চলচ্চিত্রের মতোই আজকাল নাটকেও আপনাকে রোমান্টিক চরিত্রে বেশি দেখা যায়। কেন?
রিয়াজ : (মুচকি হাসি দিয়ে) এর প্রকৃত কারণ হয়তো পরিচালক-প্রযোজকরাই ভালো বলতে পারবেন! আমাকে যে চরিত্রটি দেওয়া হয় আমি সেটার ভেতর ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করি।

জাগো নিউজ : বর্তমানে অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে ডিজিটাল চলচ্চিত্র তৈরি হচ্ছে। এই সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
রিয়াজ : চলচ্চিত্র থেকে কয়েক বছর দূরে থাকার কারণে খুব একটা ছবি দেখা হয়ে ওঠেনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে যটতটুকু বুঝেছি ডিজিটাল ছবি কি জিনিস সেটা না বুঝেই অনেকে প্রচার করছেন। আসলে ইন্ড্রাষ্ট্রিতে একটা নতুন শব্দ এসেছে- এই যা। আমার মনে হয়েছে ডিজিটাল চলচ্চিত্র তৈরি হলেও এর সুফলটা এখনও পাইনি বরং কুফলটাই পেয়েছি বেশি।

জাগো নিউজ : সেটা কেমন?
রিয়াজ : ডিজিটাল ছবির নাম করে অনেকেই হিন্দি-তামিল-তেলেগু অথবা ভিনদেশি ছবি নকল করে চালিয়ে দিচ্ছে। এটা দর্শকদের সাথে ধোঁকা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই না। ভালো ক্যামেরায় শুট হচ্ছে ভেবে অভিনয়ের মানের দিকে  দৃষ্টি থাকছে না কারো। এ অবস্থা চলতে থাকলে চলচ্চিত্র শিল্পে প্রথমে ব্যাধি তারপর একসময় মহামারীতে আক্রান্ত হবে। এটা মস্তবড় কুফল। আরও আছে। ডিজিটাল ছবি প্রদর্শনের জন্য প্রয়োজনীয় হণ নেই আমাদের। সুফলটা হলো- ভালো গল্পের ডিজিটাল ছবি পেলে দর্শকরা হলমুখি হবে। হলগুলোকে সেইমত করে তৈরি করতে হবে। পরিকল্পনা করে এগুলো চলচ্চিত্রের সোনালী অতীত আবারও ফিরিয়ে আনা সম্ভব। 

জাগো নিউজ : অতীতের তুলনায় ইদানীং দুই বাংলা মিলে যৌথ উদ্যোগে সিনেমা নির্মাণের মাত্রা বেড়েছ। এ বিষয়টি নিয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই...
রিয়াজ : এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে এমন যৌথ প্রয়াসের পক্ষেই আমি। কলকাতার তুলনায় আগে আমাদের দেশে অনেক ভালো ছবি নির্মাণ হতো। কিন্তু ইদানিং প্রেক্ষাপটটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমাদের তুলনায় কলকাতার ছবির বাজেট অনেক বেশি এবং তাদের মার্কেটাও অনেক বড়। বাজেট বেশি হওয়ার কারণে তাদের ছবির লোকেশনও অনেক ভালো জায়গায় করা হচ্ছে। এছাড়া একটা ছবি সুপারহিট হওয়ার পিছনে গল্পটাও অনেক ভ্যালুয়েবল। সেদিকেও নজর দেন ওপারের নির্মাতারা। আমাদের এখানে তো গল্পের প্রতি কোনো গুরুত্বই দেয়া হয় না। আমারাও যদি ভালো গল্প দিয়ে বেশি বাজেটের মাধ্যমে ছবি নির্মাণের চেষ্টা করি আমার মনে হয় আমারও সফল হবো। তখন কলকাতার সাথে শিল্পের আদান প্রদান হবে সমানে সমান। সেটা হবে অধিক লাভজনক।



জাগো নিউজ : বলিউড পারছে, কলকাতা পারছে। সম্প্রতি বাহুবলি দিয়ে দক্ষিনি ছবিও আন্তর্জাতিক মহলে সমাদৃত হয়েছে। আমরা কেন পারছি না?
রিয়াজ : পারছি না এখন, কিন্তু কখনোই যে পারিনি তা কিন্তু নয়। একটা সময় আমরাও পেরেছি। এদেশের অনেক ছবিই বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। এখন বিশ্ব চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট বদলেছে। সেই সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের ইন্ড্রাষ্ট্রি বদলায়নি। আন্তর্জাতিক মানের সিনেমা তৈরি করার মত উপকরণ নেই আমাদের। এছাড়া কিভাবে আন্তর্জাতিক মানের ছবি তৈরি করতে হয় সেটাও আমাদের অনেক নির্মাতারা জানেনই না। এর জন্য যথেষ্ট স্টাডি প্রযোজন। সে সুযোগ আমাদের এখানে নেই। বাংলাদেশে অভিনয়, নির্মাণের উপর পড়াশোনা করার মতো কোনো উচ্চমানের ব্যবস্থা নেই। এটা সত্যি দু:খজনক। তবু যারা কিছু শিখছেন তারা সেটা প্রয়োগ করতে পারছেন না। আসলে অনেক কিছুর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ গুলোর উত্তরণ না হলে আন্তর্জাতিক মানে ছবি তৈরিতে আমাদের অক্ষমতা থাকবেই!

জাগো নিউজ : অনেকেই ছবি নির্মাণের সময় বলছেন- ভিন্ন গল্প, রোমান্টিক গান, ধুন্ধুমার অ্যাকশন পাওয়া যাবে। কিন্তু সিনেমাটি যখন দেখা হয় তখন গল্প-নাচ এবং ছবির শেষে `সেন্ট্রি এরেস্ট হিম` এর মত সেই গৎবাঁধা চিত্রই খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু কেন?
রিয়াজ : (এমন প্রশ্নের জন্য তৈরি ছিলাম না) এ প্রসঙ্গেও আমি বলবো শিক্ষার অভাই দায়ি। আমাদের এখানে একসময় জহির রায়হান, খান আতাউর রহমান, দিলীপ বিশ্বাস, এহতেশাম, চাষি নজরুল ইসলাম, আলমগীর কুমকুম, মতিন রহমান, হুমায়ূন আহমেদের মতো নির্মাতারা ছবি বানাতেন। এখন সেইসব নামের মতো জ্ঞানী ও দার্শনিক চিত্র পরিচালক কই? ছবি শুধু নির্মাণের বিষয় নয়, এটি একটি বিরাট শিল্প। এতে প্রাণে মনে ধারণ করতে হয়। আজকালকার নির্মাতারা সেটা পারছেন না। তারা শিল্পী নয়, পরিচালক হতে এসেছেন। সম্মান ও অমরত্ব নয়- জনপ্রিয়তার পিঝনে ছুটছেন। স্বস্তা কাটতি পেতে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। দর্শকদের মিথ্যে বলে ঠকাচ্ছেন। ফলাফলটা কিন্তু চলচ্চিত্র শিল্পকেই ভোগ করতে হচ্ছে। প্রতারিত হয়ে হলবিমুখ হচ্ছে সবাই। এখনও সোহানুর রহমান সোহান, কাজী হায়াতের মতো সিনিয়র যেসকল নির্মাতারা আছেন তাদের এ বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত। নিজেদের মেধা ও জ্ঞান দিয়ে নতুনদের সঠিক পথে নেতৃত্ব দেয়া উচিত। নির্মাতাদের উচিত দর্শকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা। ব্যবসায়িক ফায়দাটা এখানে কম থাকাই সমীচীন।

জাগো নিউজ: যেহেতু এখন আপনি ছোট পর্দার নিয়মিত মানুষ তাই জানতে চাইছি- টেলিভিশন বিজ্ঞাপন প্রচার ক্রমেই মাত্রাতিক্ত হয়ে উঠেছে। যার ফলে বিরক্ত দর্শকদের অভিযোগের শেষ নেই। এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
রিয়াজ : এটি একটি প্রতিবন্ধকতা। গোলমাল করে নয়, এক টেবিলে বসে সকল চ্যানেল মালিকদের এ নিয়ে সমাধানে যেতে হবে। শুনছি সরকারের তরফ থেকেও বিজ্ঞাপন প্রচার নিয়ে নীতিমালা নির্ধারণ করা হচ্ছে। দেখা যাক কি হয়! তবে আমি চাই এর একটা সঠিক সুরহা হোক। দর্শকদরে বিরক্ত করে কেউ সফল হবে না। না টিভি মালিক, না বিজ্ঞাপন দাতা। আর শোবিজও হবে ক্ষতির মুখোমুখি।
 
জাগো নিউজ : প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের অনেক নাটকে আপনি কাজ করেছেন। তার ‘দুই দুয়ারী’ ছবিতে অভিনয় করেই প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন। কেমন ছিলো তার সাথে কাজের অভিজ্ঞতা?
রিয়াজ: স্যার (হুমায়ূন আহমেদ)-এর কথা মনে উঠলে ভেতরটা খাঁখাঁ করে। মনে হয় কি যেন নেই! আবার অনেক সময় মনে হয় তিনি আমাদের সকলের হৃদকুঞ্জে গেঁথে আছেন। আগামী শত বছর কেন, হাজার বছরেও আরেকজন হুমায়ূন আহমেদ আসবেন বলে মনে হয় না (মাথা নাড়িয়ে)! সুতরাং তার সাথে কারো তুলনা হয় না। উনি আমার সাফল্যের পরশপাথর। তার ছবি ও নাটকে কাজ করে আমি গর্বিত। এত এত অভিনেতা থাকতে তিনি আমাকে পছন্দ করেছিলেন, ভালোবেসেছিলেন সেটা সত্যি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।

জাগো নিউজ : বিভিন্ন সময় বলেছেন স্যারের নাটকে কাজ করে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। সমসাময়িক আর কোনো নির্মাতার সাথে কাজ করে সেই স্বাচ্ছন্দ্যটা কী পেয়েছেন?
রিয়াজ : স্যারের সাথে কারো তুলনা হতে পারে না। তার সবকিছুই ছিলো বিশেষ। তবে আজকাল অনেকে ভালো নির্মাতা আছেন। অনেকের সাথে কাজ করেই আমি মজা পাই। তারা প্রত্যেকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে সফল। কিন্তু কেউ কারো মতো নয়।

জাগো নিউজ : এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে আসা যাক! সংসার, সিনেমা, নাটক, কয়েকটি রিয়্যালিটি শো-এর বিচারক ওদিকে আবার নিজস্ব ব্যবসা। একজন মানুষ হয়ে এত কিছু সামলান কিভাবে?
রিয়াজ : সবকিছু সিস্টেম মেনে চলি বলেই হয়তো এতকিছু সামলানোটা হয়ে ওঠে। তবে আমি যে কাজটা করি সেটাতে সাকসেসফুল হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে থাকি।



জাগো নিউজ : আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে একজন প্রকৃত অভিনেতার যে গুণগুলো না থাকলেই নয়...
রিয়াজ : একজন প্রকৃত অভিনেতার অহংকার থাকাটা মোটেও উচিৎ না। এছাড়া সততা, সংযম, কাজের প্রতি ভালোবাসা এবং সময়কে মূল্য দেওয়া এই গুণগুলো থাকা আবশ্যক।

জাগো নিউজ : বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে জানতে চাই...
রিয়াজ : আগামী ঈদের জন্য কয়েকটি নাটক-টেলিফিল্ম এর কাজ শেষ করেছি তাছাড়া কিছু নাটকের শুটিং চলছে এবং আরো কিছু নাটকে কাজের জন্য কথাবার্তা চলছে। অন্যদিকে ব্যবসা তো আছেই!

জাগো নিউজ : আপনার বেঁচে থাকার দর্শন কী?
রিয়াজ : ভালো কাজের সুবাদে দর্শকদের কাছে মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে থাকতে চাই। প্রতিনিয়ত ভালো মানুষ হিসেবে চলার চেষ্টা করি। লক্ষ্য অটুট রেখে চলি সেইসাথে সকলের ভালোবাসা-শুভকামনাই আমার চলার পথের পাথেয়।

জাগো নিউজ : আপনার ভক্ত-দর্শকদের উদ্দেশ্যে যদি কিছু বলার থাকে...
রিয়াজ : আমি আমার ফ্যানদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- তারা যেমন আমার ফ্যান, আমিও তেমনি তাদের ফ্যান। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার মেয়ের জন্মের সময় আমার স্ত্রী কিছুটা অসুস্থ ছিলো। সেসময় দেখেছি কতো অজস্র মানুষের ভালোবাসার করুণাধারায় সিক্ত আমি। সবার অকৃত্রিম-অসাধারণ এই ভালোবাসার প্রতিদান দেয়ার সাধ্য আমার নেই। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি কেবল। সবাই ভালো থাকবেন, আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার স্ত্রী তিনা ও মেয়ে আমেরা সিদ্দিকীর জন্য দোয়া করবেন।

এলএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।