প্রথমেই বাজেট ও শিল্পী সংকট নিয়ে কাজ করব : সালাউদ্দিল লাভলু

মাসুম আওয়াল
মাসুম আওয়াল মাসুম আওয়াল , স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: ০৬:২১ পিএম, ০২ অক্টোবর ২০১৮

বেশ জমকালো আয়োজনে ২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে ছোটপর্দার নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড এর নির্বাচন। আগামী ৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নবনির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ করবে।

নির্বাচন কমিশনের সদস্যগণ ও আগের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অনেকেই উপস্থিত থাকবেন সেখানে। ওই দিনই আগের কমিটির কাছে দায়িত্ব বুঝে নেবে নতুন কমিটি। নতুন কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন জনপ্রিয় নির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলু। নানা বিষয় নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। আলাপের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

জাগো নিউজ : কেমন আছেন?
সালাউদ্দিল লাভলু : এই তো ভালো আছি সব মিলিয়ে।

জাগো নিউজ : ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি নির্বাচিত হলেন। সভাপতি হিসেবে শুরুতেই কী কাজ করতে চান?
সালাউদ্দিল লাভলু : নির্বাচনী ভিশনগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব। শুরুতেই আমাদের পুরনো কমিটির রেখে যাওয়া কাজগুলো সম্পর্কে জানব। আমাদের ইমিডিয়েট কিছু পরিকল্পনা অাছে। প্রথম কার্যকরী পরিষদের সভায় সেটি উপস্থাপন করব। সংগঠনের যেই কাজই করতে চাই সেটাত সবাই মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়ে করব। আমার ব্যক্তিগতভাবেও অনেক পরিকল্পনা আছে সেগুলো মিটিংয়ে উপস্থাপন করব।

জাগো নিউজ : আপনার ব্যক্তিগত পরিকল্পনাগুলো কী?
সালাউদ্দিল লাভলু : আমি এখনই সেটা না বলি। প্রত্যেক প্রার্থী যারা নির্বাচিত হয়েছেন সবার কোনো না কোনো পরিকল্পনা আছে। সেই পরিকল্পনাগুলো এক সঙ্গে বসে শেয়ারিং করে, আগামী ৬ মাস কিংবা ১ বছরের কাজের পরিকল্পনা করব। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাব।

জাগো নিউজ : অনেকদিন থেকে নির্মাণের সঙ্গে আছেন। নির্মাতাদের কোন সংকটটি বেশি অনুধাবন করেছেন? এগুলো দূর করতে চান কীভাবে?
সালাউদ্দিল লাভলু : প্রথমত সব নির্মাতাকে একই রকম সংকটের মুখোমুখি হতে হয়। সবার প্রধান সমস্যা ‘বাজেট’। আমাদের ফাইট করতে হয় বাইরের চ্যানেলগুলোর সঙ্গে। আমাদের দর্শক ইউটিউবে, টিভিতে বিদেশি সিরিয়াল বেশি দেখছে। তাদের দেখার চোখ, রুচি ওই মানের হয়ে গেছে। সেই মানের নাটক তৈরি করতে গেলে ভালো বাজেটের বিকল্প নেই। আমরা বাজেটের দিকে নজর দেব দ্রুতই।

আমাদের অনেক মেধাবী নির্মাতা আছে। ভালো কন্টেন্টও আছে। ভালো কিছু করতেও চাই আমরা। কিন্তু প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায় বাজেট। এত কমবাজেটে সব কিছু মেলানোই কঠিন হয়ে যায়। এই বাজেটের ব্যাপারে সব চ্যানেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে কীভাবে এই বাজেটকে একটা বেটার অবস্থায় নিয়ে আসা যায় সেই আলোচনা আমরা চালাব। সেই পদক্ষেপ আমরা প্রথমেই গ্রহণ করব।

জাগো নিউজ : আর কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে কী?
সালাউদ্দিল লাভলু : হ্যাঁ আছে। দ্বিতীয়ত আমাদের নাটকের শিল্পী সংকটের জায়গাটা অন্যরকম। যেমন, অনেক অভিনেতা অভিনেত্রী আছেন আমাদের দেশে। কিন্তু দেখা যায় চ্যানেলের চাহিদার কারণে ঘুরে ফিরে হাতে গোনা কয়েকজন স্টারকে নিয়ে নাটক বানাতে হয়। গুটিকয়েক শিল্পী তাদেরকে নিয়ে নাটক করতে হবে এটা কেমন নিয়ম? চিন্তার বিষয় হলো সেই শিল্পীদের রেমুনেশন এত হাই, নাটকের বাজেটের সঙ্গে এটা কোনোভাবেই সমন্বয় করা যাচ্ছে না।

সেই কারণে নাটকের মানও ভালো হচ্ছে না। চ্যানেলের চাহিদার কারণে অনেক অযোগ্য শিল্পীরাও প্রাধান্য পাচ্ছে। কিন্তু মেধাবীরা এখানে ঠকে যাচ্ছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করব। এই সমস্যাগুলো ধারাবাহিকভাবে সমাধানের পদক্ষেপ নেব। এমন অনেক সমস্যা আছে আমাদের, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এসবের সমাধান করার চেষ্টা করব।

জাগো নিউজ : আপনি নিজেও একজন ব্যস্ত নির্মাতা, আবার একটি সংগঠনের বড় দায়িত্ব কাঁধে আসল আপনার। নিজের ব্যস্ততার কোনো প্রভাব সংগঠনের উপর পড়বে না তো ?
সালাউদ্দিল লাভলু : নির্বাচনে দাঁড়ানোর আগে আমি এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার নির্বাচনে আসার পেছনে একটা কারণ আছে। গত নির্বাচনের সময়ও আমার সহকর্মীরা আমাকে নির্বাচন করার জন্য বলেছিল, সংগঠনের সঙ্গে থাকার অনুরোধ করেছিল। অনেকেই বলেছিল, আপনি সংগঠন করেন, যেহেতু এখন সিনিয়র হয়েছেন, আমাদের জন্য কিছু করেন। আমি তখন এতটা ভাবিনি। ইদানীং আমি দেখছি আমার যে কাজের এরিনা, আমরা যারা একসঙ্গে কাজ করছি সেখানে অনেক সমস্যা। তাই একজন সিনিয়র হিসেবে আমার দায়িত্বের জায়গাটা আমি এড়িয়ে যেতে পারি না।

আমার উদ্যোগের কারণে যদি কিছু কাজ হয় তবে সেটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমি শুধু নিজের কথা চিন্তা করলাম, নিজে নাটক বানালাম, নিশ্চিন্তে থাকলাম সেটা হলো না। আমার সহকর্মীরা সমস্যায় থাকলে সেটা আমারও সমস্যা। কারণ লোকে বলবে ডিরেক্টররা না খেয়ে মরে, ডিরেক্টররা ভালো না। তো আমিও তো ভাই ডিরেক্টর। মুখ দেখাবো কাকে? সেই জায়গা থেকে আমার একটা দায়বোধ আছে। সেই চিন্তা থেকে এবার নির্বাচনে দাঁড়ানো।

জাগো নিউজ : আপনার ওপরে সবাই আস্থা রেখেছেন, বিপদে আপদে পাশে পাবেন বলে। দেখা যাচ্ছে আপনি শুটিং করছেন এই সময় আপনাকে প্রয়োজন, কী করবেন তখন?
সালাউদ্দিল লাভলু : আমি বরাবরই একটা করে ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করি। সেটা শেষ হলে নতুন কাজ শুরু করি। একটা ধারাবাহিক নাটকের জন্য মাসে ৭ থেকে ৮ দিন শুটিং করতে হয়। সেটা দেশের যেখানেই হোক। বাইরেও মাঝে মধ্যে শুটিং করি। সেটাও মাসের মধ্যে ৭ থেকে ৮ দিন। এছাড়া ঢাকাতেই থাকি। যোগাযোগ ব্যাবস্থার ক্ষেত্র এখন এতটাই উন্নতি হয়ে যে কোনো জায়গা থেকেই ফোনে কথা বলা যায়। ভিডিও কলেও কথা বলা যায়। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি আমার কাজ আমার দায়িত্ব পালনের বাধা হবে না। আর আমার বদলে সাধারণ সম্পাদক থাকবেন, কমিটির অন্যরাও থাকবেন। সবাই মিলে চেষ্টা করলে অনেক সংকটই কেটে যায়।

জাগো নিউজ : নির্বাচনে ফলাফলের পর ভোট গণনায় গরমিলের অভিযোগ তুলেছিলেন চয়নিকা চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন প্রার্থী। আপনি বলেছিলেন শপথ গ্রহনের আগে চেকিংয়ের ব্যবস্থা করবেন। সেটার কি হয়েছে?
সালাউদ্দিল লাভলু : নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে অনেক সময় নিয়ে। ওইদিন সারা রাত ও পরের দিন বিকেল নাগাদ চলেছে ভোট গণনার কাজ। অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ এই কাজের সঙ্গে অনেক পরিশ্রম করেছেন। অভিযোগ এসেছিল, ভোট গণনায় গরমিল রয়েছে। ভোট হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে ৪৫৬টি ভোট। কিন্তু কোনো পদেই প্রাপ্ত যোগফল ৪৫৬ হচ্ছে না। কখনও সেটা ৪৩২ হচ্ছে, কখনো আরও কম বা বেশি। আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার পর আবার রিচেক দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এতে ফলাফল একই আছে। আর গরমিলের বিষয়টিরও সমাধান দিয়েছেন তারা। এখন আর কোনো ঝামেলা নেই।

জাগো নিউজ : সবার উদ্দেশ্যে যেটা বলতে চান?
সালাউদ্দিল লাভলু : আমাদের নির্মাতাদের সবার সমস্যা, সুখ, দুঃখ একই। নির্বাচনটা একটা প্রক্রিয়া। যারা আগে ছিলেন, যারা এখন আসলেন, যারা নির্বাচনের বাইরে আছেন সবাই মিলেই আমাদের কমন সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। এখানে কোনো ভেদাভেদ নাই। নির্বাচন মানেই একটা ডিভাইডেশনের ব্যাপার থাকে। আমি মনে করি এটা নির্বাচন পর্যন্তই। এখন থেকে সবাই আমরা আগের মতোই ভাই ভাই। সবাই যেন এক ঘরে বসবাস করে নিজের ঘরের সমস্যার সমাধান করি। সবাই এগিয়ে আসবেন বলেই আমার বিশ্বাস।

এমএবি/এলএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।