এদেশে বাবার মতো অনেক গুণী মানুষই উপেক্ষিত : ঐন্দ্রিলা

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৩১ পিএম, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

স্বনামেও তিনি পরিচিত। মডেলিং করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। অভিনয় করেন, গানও করেন। তিনি ঐন্দ্রিলা আহমেদ। তবে নামের আগে বা পরে যখন বাবার পরিচয়টি যুক্ত হয় তখন তিনি আরও অনেক বেশি গর্বিত, আনন্দিত থাকেন।

ঐন্দ্রিলার ভাষায়, ‘মহানায়ক বুলবুল আহমেদের মেয়ে হতে পারাটা অন্য যে কোনো পরিচয়ের চেয়ে বেশি তৃপ্তির ও গর্বের।’ সেই ঐন্দ্রিলার কণ্ঠে আজ ক্ষোভ ও বেদনার আমেজ।

আজ মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি পুরুষ বুলবুল আহমেদের জন্মদিন। কিছু গণমাধ্যম ছাড়া আর কোথাও তাকে নিয়ে কোনো আয়োজন চোখে পড়ছে না। যেন বুলবুল আহমেদ বলে কেউ ছিলেনই না এই দেশের অভিনয়ের আঙিনায়। এই বিষয়টি বেদনা জাগিয়েছে বুলবুল আহমেদের পরিবারে।

ঐন্দ্রিলা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এইসব নিয়ে বলার ইচ্ছে করে না। চারদিকে গুণীর কদর কমছে। তবে গুণীদের প্রতি এমন নিরবতা হতাশার। আগামীর প্রজন্মের কাছে আমরা আমাদের শ্রেষ্ঠ মানুষদের উপস্থাপন করছি না। তারা অনুপ্রেরণার জন্য আদর্শ মানুষ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এটা ঠিক নয়।’

ঐন্দ্রিলার দাবি, ‘একজন মহানায়ক কালে কালে জন্মায় না। এর মূল্যায়ণ করা উচিত। শুধু আমার বাবা কেন, এই দেশে আরও অনেক গুণী মানুষই উপেক্ষিত। কিছু দায়সারা আয়োজন হয়তো মাঝেমাঝে হয়ে থাকে। কিন্তু সেগুলোতে মনের পুরোপুরি শ্রদ্ধা প্রকাশিত হয় না। বুলবুল আহমেদ, নায়করাজ রাজ্জাক, আনোয়ার হোসেনরা এই দেশের চলচ্চিত্রের রাজতিলক। তাদের মূল্যায়ণ কী সঠিকভাবে করতে পারছি আমরা? আরও অনেক ব্যক্তিত্ব রয়েছেন এই আঙিনায় যাদের কথা মনেও হয় না কারো। কিন্তু তাদেরকে সঠিকভাবে তুলে ধরা খুব প্রয়োজন। তাহলে নতুরা অনেক কিছু জানবে ও শিখবে। চলচ্চিত্র ও অভিনয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে।’

বাবার সঙ্গে এফডিসির সম্পর্কের কথা জানাতে গিয়ে ঐন্দ্রিলা বলেন, ‘এফডিসিই ছিলো আমার বাবার দ্বিতীয় সংসার। উনি উনার বেশিরভাগ সময়টাই কাটিয়েছেন এই এফডিসিতে। এফডিসির মানুষরাই আজ তাকে ভুলে গিয়েছে। আমার বেড়ে ওঠাটা এফডিসিতেই। সেই ছোটবেলা থেকেই আমি বাবার সাথে এফডিসিতে বেড়ে ওঠেছি। তখন এফডিসি এত ঝলমলে ছিলো না,ছিলো না এয়ার কন্ডিশন। এখন তো অনেক কিছু হয়েছে। তখন অনেক কষ্ট করে উনারা কাজ করতেন।

আমার বাবা মারা যাওয়ার পর আমি অনেকবার কয়েকটি চ্যানেলের রান্নার অনুষ্ঠান করেছি এফডিসিতে। আমি এফডিসিতে বসেও চোখের পানি ফেলেছি বাবার কথা মনে করে। এফডিসিতে গেলেই বাবার কথা মনে পড়ে খুব। এফডিসির প্রতিটা জায়গার সাথেই বাবার কোন না স্মৃতি জড়িত আর সেগুলা মনে হলেই চোখে পানি চলে আসে।

আমি শুধু এটাই বলবো যে, আজ এই এফডিসি তাদের মহানায়ককে ভুলে গিয়েছে! আমি হতাশ, আমার কিছুই বলার নেই এ নিয়ে। আর যারা আমার বাবাকে স্মরণ করেছেন তাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।’

এই অভিনেত্রী বলেন, ‘দিনদিন গুণী মানুষদের প্রতি উদাসীনতা বাড়ছে আমাদের। এই চর্চা অব্যাহত থাকলে একদিন আমরাও চলে যাবো। আমাদের কথাও কেউ বলবে না।’

ঐন্দ্রিলা জানান, আজ বুলবুল আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে মাছরাঙা টিভি ও জিটিভিতে কিছু আয়োজন রয়েছে। সেগুলোতে অংশ নেবেন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা।

চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের পাশাপাশি পারিবারিক জীবনে বুলবুল আহমেদ ছিলেন বেশ সুখী। স্ত্রী ডেইজি আহমেদ আর তিন সন্তান- ঐন্দ্রিলা, তিলোত্তমা ও ছেলে শুভকে নিয়ে ছিল তার সাজানো সংসার।

জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে বুলবুল আহমেদ ডায়বেটিস ও হৃদরোগে ভুগছিলেন। ২০১০ সালের ১৫ জুলাই রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মহানয়ক বুলবুল আহমেদকে অন্তিম শয্যায় শায়িত করা হয় বাবা-মায়ের কবরের পাশে আজিমপুর গোরস্তানে।

এলএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।