সেলিম আল দীনের জন্মদিনে যত আয়োজন

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৩৪ পিএম, ১৮ আগস্ট ২০১৮

প্রখ্যাত নাট্যকার ও গবেষক সেলিম আল দীনের ৬৯তম জন্মদিন আজ (১৮ আগস্ট, শনিবার)। প্রজ্ঞা, মেধা, মনন ও দক্ষতায় যে ক’জন নিরলস সাংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব আমাদের সহজিয়া লোকজ বাংলার উর্বর সংস্কৃতিকে বহুমাত্রায় বহুদূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে গেছেন নাট্যকার সেলিম আল দীন ছিলেন তাদের ভেতর অন্যতম। নানা আয়োজনে এবার উদযাপন করা হচ্ছে এই বরেণ্য নাট্যকারের জন্মবার্ষিকী। ঢাকা থিয়েটার, গ্রাম থিয়েটার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, স্বপ্নদল পৃথক আয়োজন সাজিয়েছে সেলিম আল দীনকে ঘিরে।

এবার দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ঢাকা থিয়েটার। এই আয়োজনের স্লোগান- 'তোমার সম্মুখে অনন্ত মুক্তির অনিমেষ ছায়াপথ’। আয়োজনের প্রথম পর্ব শুরু হয়েছে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩ টায়। এদিন রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে সেলিম আল দীন স্মারক বক্তৃতা ১৪২৫ এর মধ্য দিয়ে তাকে স্মরণ করা হয়। ‘বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নাট্যে গীতের প্রাসঙ্গিকতা’ বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ইউসুফ হাসান অর্ক। এরপর সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মঞ্চে পরিবেশিত হয় সেলিম আল দীনের নাটক 'ধাবমান'। ঢাকা থিয়েটারের প্রযোজনায় নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন শিমূল ইউসুফ।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন, ১৮ আগস্ট (শনিবার) সকাল সাড়ে ১০টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে সেলিম আল দীনের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে ঢাকা থিয়েটার, গ্রাম থিয়েটারসহ অন্যান্য সংগঠন।

এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ সেলিম আল দীনকে নিয়ে তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার মঞ্চায়ন হয় সেলিম আল দীনের নাটক 'গ্রন্থিকগণ কহে '। নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রযোজনায় নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন শাহান মুহাম্মদ তামজীদ আশরাফ (রমিত)। পর দিন শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মঞ্চায়িত হয় সেলিম আল দীনের লেখা নাটক যৈবতী কন্যার মন অবলম্বনে 'পরী'। নির্দেশনা দিয়েছেন মো. আবু রায়হান। নাট্যাচার্যের জন্মদিনে অর্থাৎ ১৮ আগস্ট দিনজুড়ে থাকছে বর্ণিল আয়োজন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম এদিনের আয়োজন উদ্বোধন করেছেন। সকাল সাড়ে ৮টায় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করেছে নাটকের গান। এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় পুরাতন কলাভবন প্রাঙ্গণ থেকে সেলিম আল দীনের সমাধি পর্যন্ত শোভাযাত্রার পাশাপাশি সকাল সাড়ে ১০টায় নাট্যাচার্যের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মঞ্চায়িত হবে সেলিম আল দীনের নাটক 'কিত্তনখোলা'। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন আহসান হাবীব। নাটকগুলো মঞ্চস্থ হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে (থিয়েটার ল্যাব ৩)।

অন্যদিকে দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে নাট্য সংগঠন স্বপ্নদল। সেলিম আল দীনকে নিয়ে স্বপ্নদলের আয়োজনে ১৮তম আসর এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের আয়োজনের স্লোগান- ' সেলিম আল দীন সতত অনিবার্য রয়, বাঙলা নাট্যের শিল্পসুধা বিশ্ব করবে জয়। ' শুক্রবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন মঞ্চসারথি আতাউর রহমান। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চায়িত হয় বাদল সরকারের মূল রচনা অবলম্বনে জাহিদ রিপনের রূপান্তর ও নির্দেশনায় নাটক 'ত্রিংশ শতাব্দী। উৎসবের দ্বিতীয় দিন শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়িত হবে জাহিদ রিপনের নির্দেশনায় নাটক 'হরগজ'।

১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট ফেনীর সোনাগাজী থানার সেনেরখিল গ্রামে জন্মগ্রহণ নাট্যকার সেলিম আল দীন। মফিজউদ্দিন আহমেদ ও ফিরোজা খাতুনের তৃতীয় সন্তান তিনি। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ফেনী, চট্টগ্রাম, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রংপুরের বিভিন্ন স্থানে। বাবার চাকরির সূত্রে এসব জায়গার বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তিনি। ১৯৬৪ সালে ফেনীর সেনেরখিলের মঙ্গলকান্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। ১৯৬৬ সালে ফেনী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন এবং ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন।

দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গিয়ে ভর্তি হন টাঙ্গাইলের করটিয়ায় সাদত কলেজে। সেখান থেকে স্নাতক পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে নাটকের ওপর গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন সেলিম আল দীন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সেলিম আল দীন, যুক্ত হন ঢাকা থিয়েটারে। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষে যোগ দেন বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘বিটপী’তে কপি রাইটার হিসেবে। ১৯৭৪ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সেলিম আল দীন ১৯৮১-৮২ সালে নাট্য নির্দেশক নাসির উদ্দিন ইউসুফকে সাথী করে গড়ে তোলেন গ্রাম থিয়েটার।

তার প্রথম রেডিও নাটক বিপরীত তমসায় ১৯৬৯ সালে এবং টেলিভিশন নাটক আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় লিব্রিয়াম (পরিবর্তিত নাম ‘ঘুম নেই’) প্রচারিত হয় ১৯৭০ সালে। আমিরুল হক চৌধুরী নির্দেশিত এবং বহুবচন প্রযোজিত প্রথম মঞ্চনাটক ‘সর্প বিষয়ক গল্প’ মঞ্চায়ন করা হয় ১৯৭২ সালে। তিনি শুধু নাটক রচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি, বাংলা ভাষার একমাত্র নাট্যবিষয়ক কোষগ্রন্থ ‘বাংলা নাট্যকোষ’ সংগ্রহ সংকলন, প্রণয়ন ও সম্পাদনা করেছেন। তার রচিত ‘হরগজ’ নাটকটি সুয়েডীয় ভাষায় অনুদিত হয় এবং এ নাটকটি ভারতের রঙ্গকর্মী নাট্যদল হিন্দি ভাষায় মঞ্চায়ন করেছে।

সেলিম আল দীনের প্রথমদিককার নাটকের মধ্যে ‘সর্পবিষয়ক গল্প’, ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’, ‘মূল সমস্যা’, এগুলোর নাম ঘুরে ফিরে আসে। সেই সঙ্গে ‘প্রাচ্য’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘বাসন’, ‘আততায়ী’, ‘কেরামত মঙ্গল’, ‘হাত হদাই’, ‘যৈবতী কন্যার মন’, ‘মুনতাসির ফ্যান্টাসি’ ও ‘চাকা’ তাকে ব্যতিক্রমধর্মী নাট্যকার হিসেবে পরিচিত করে তোলে। জীবনের শেষ ভাগে ‘নিমজ্জন’ নামে মহাকাব্যিক এক উপাখ্যান বেরিয়ে আসে সেলিম আল দীনের কলম থেকে। তিনি ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।

উল্লেখযোগ্য নাটকসমূহ: ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’ (১৯৭৫), ‘বাসন’ (১৯৮৫), ‘মুনতাসির’, ‘শকুন্তলা’, ‘কীত্তনখোলা’ (১৯৮৬), ‘কেরামতমঙ্গল’ (১৯৮৮), ‘যৈবতী কন্যার মন’ (১৯৯৩), ‘চাকা’ (১৯৯১), ‘হরগজ’ (১৯৯২), ‘প্রাচ্য’ (২০০০), ‘হাতহদাই’ (১৯৯৭), ‘নিমজ্জন’ (২০০২), ‘ধাবমান’, ‘স্বর্ণবোয়াল’ (২০০৭), ‘পুত্র’, ‘বনপাংশুল’।

এমএবি/এলএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।