শুভ জন্মদিন কিংবদন্তি চিত্রনায়িকা ববিতা

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৫১ পিএম, ৩০ জুলাই ২০১৮

তার নামের আগে পরে কোনো বিশেষণ লাগে না। এ দেশে একটাই ববিতা যিনি চলচ্চিত্রের রুপালি পর্দায় মুগ্ধ এক কবিতা হয়ে আছেন। তার অভিনয়ের আলোয় দীর্ঘদিন ধরেই উদ্ভাসিত ঢাকার সিনেমা। তার হাসিতে, তার সৌন্দর্যের মুগ্ধতা ছড়িয়েছে দেশ ছেড়ে বিদেশেও।

আজ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী সেই ববিতার জন্মদিন। আর এই দিনটি এবার মহাসুখে পালন করছেন তিনি। গত সপ্তাহে ছুটে গেছেন কানাডায় একমাত্র পুত্র অনিকের কাছে। ববিতার একমাত্র পৃথিবী এখন আদরের অনিক। তাকে ছাড়া সব আনন্দ-আয়োজন বৃথা। তারপরও মন চাইলেই অনিকের কাছে ছুটে যাওয়া যায় না।

ববিতার ছেলে অনিক সেখানে ওয়াটার লু ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা, শিক্ষকতা এবং গবেষণা কর্মে ব্যস্ত। তাই তারও ছুটে আসা সব সময় সম্ভব হয় না। গত রমজানের ঈদটা মা দেশে আর পুত্র বিদেশে একাকী কাটিয়েছেন। একটা চাপা কষ্ট ভর করেছিলো দুজনের মনেই। তবে নিজের জন্মদিনে সেই কষ্টটাকে আর বাড়তে দিলেন না ববিতা। ছুটে গেছেন ছেলের কাছে। সেখানে কোরবানির ঈদও কাটাবেন।

ববিতার পুরো নাম ফরিদা আক্তার পপি। ১৯৫৩ সালের ৩০ জুলাই বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা নিজামুদ্দীন আতাউব একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মাতা বি. জে. আরা ছিলেন একজন চিকিৎসক।

বাবার চাকরি সূত্রে তারা তখন বাগেরহাটে থাকতেন। তবে তার পৈতৃক বাড়ি যশোর জেলায়। শৈশব এবং কৈশরের প্রথমার্ধ কেটেছে যশোর শহরের সার্কিট হাউজের সামনে রাবেয়া মঞ্জিলে।

তিন বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে বড়বোন সুচন্দা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, বড়ভাই শহীদুল ইসলাম ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মেজভাই ইকবাল ইসলাম বৈমানিক, ছোটবোন গুলশান আখতার চম্পা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং ছোটভাই ফেরদৌস ইসলাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন ববিতা।

ববিতার চলচ্চিত্রে শুরুটা হয়েছিল ষাটের দশকের শেষ দিকে। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী পপি (ববিতার ডাক নাম) ‘সংসার’ ছবিতে রাজ্জাক ও সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবির নির্মাতা ছিলেন জহির রায়হান। ছবিটি মুক্তি পায়নি। জহির রায়হান ববিতাকে নিয়ে ‘জ্বলতে সুরুজ কা নিচে’ নামে একটি উর্দু ছবির কাজ শুরু করেন। মাঝপথে থেমে যায় এই ছবিটিরও কাজ। এরপর জহির রায়হান রাজ্জাক ও ববিতাকে নিয়ে তৈরি করেন চলচ্চিত্র ‘শেষ পর্যন্ত’। আর এটিই ছিল ববিতার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র। তারপর থেকেই ঢাকাই ছবিতে এই নক্ষত্রের উত্থান। আজও তিনি আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন অভিনয়ে।

ববিতা সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রশংসিত হন। তিনি পরপর তিন বছর একটানা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নিয়ে রেকর্ড করেন। ‘অশনি সংকেত’ চলচ্চিত্রে ‘অনঙ্গ বউ’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি বেঙ্গল ফ্লিম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় শ্রেষ্ঠ নায়িকার পুরস্কার পান।

এছাড়াও সরকারি এবং বেসরকারি অসংখ্য পুরস্কার তিনি লাভ করেছেন। এজন্য তাকে ‘পুরস্কার কন্যা’ বলা হতো। তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সবচেয়ে বেশিবার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয় ববিতাকে।

ববিতা অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে অশনি সংকেত, রামের সুমতি, নিশান, মন্টু আমার নাম, প্রতিজ্ঞা, বাগদাদের চোর, লাভ ইন সিঙ্গাপুর, চ্যালেঞ্জ, হাইজ্যাক, মায়ের জন্য পাগল, টাকা আনা পাই, স্বরলিপি, তিনকন্যা, লটারী, শ্বশুরবাড়ি, মিস লংকা, জীবন সংসার, লাইলি মজনু, বসুন্ধরা, গোলাপী এখন ট্রেনে, নয়নমনি, সুন্দরী, অনন্ত প্রেম, লাঠিয়াল, এক মুঠো ভাত, মা, ফকির মজনু শাহ, জন্ম থেকে জ্বলছি, বড় বাড়ির মেয়ে, পেনশন, দহন, চন্ডীদাস ও রজকিনী, দিপু নাম্বার টু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

আমরাও চাই আরো অনেকদিন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকুন ববিতা। অভিজ্ঞতার ছায়া দিয়ে যান ঢাকাই চলচ্চিত্রে এই ক্রান্তিলগ্নের প্রতিটি মুহূর্তে। শুভ জন্মদিন নায়িকা!

এলএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।