ভিন্ন চোখে দেখা দেশপ্রেমের ছবি ‘বেঙ্গলি বিউটি’

মাসুম আওয়াল
মাসুম আওয়াল মাসুম আওয়াল , স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: ০৫:৫৯ পিএম, ২৪ জুলাই ২০১৮

এ সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছে একেবারে ভিন্ন ঘরনার, নতুন চিন্তার একটি ছবি ‘বেঙ্গালি বিউটি’। দুই তরুণ তরুণীর নির্ভেজাল ভালোবাসার গল্পের আদলে মোড়ানো বাংলাদেশের জন্মের পরবর্তী সময়ের খেরোখাতা যেনো এই ছবিটি। সিনেমাটি দেখতে শুরু করলে মনে হবে ক্ল্যাসিক কোনো সিনেমা দেখতে বসেছি। পার্লামেন্টে বক্তৃতা দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। ডকুমেন্টারি মনে হবে না মোটেও, কারণ নিখাঁদ প্রেমের গল্প বোনা শুরু হয়ে গেছে ততক্ষণে।

প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক ছবিটির কলাকুশলীদের প্রসঙ্গে। ছবিটির গল্প, চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা করার পাশাাপাশি ছবিটি পরিচালনা করছেন প্রবাসী বাংলাদেশি রাহশান নূর। ছবিটির প্রযোজনা করেছেন রাফি তামজিদ। ছবিটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাহশান নূর নিজেই। তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন এই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও মডেল টয়া। ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন সারা আলম, আশফাক রেজওয়ান, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, মাসুম বাশার, জিএম শহিদুল আলম, নাজিবা বাশার, নেইলি আজাদ প্রমুখ।

সিনেমার গল্পে প্রবেশ করা যাক। বেঙ্গলি বিউটি নির্দিষ্ট একটি সময়ের গল্প নিয়ে নির্মিত। যেখানে ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ সালের সময়ের একটি গল্প দেখা যায়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যতো সিনেমা নির্মাণ হয়েছে বাংলাদেশে সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশ সময়ই দেখা গেছে নির্দিষ্ট ফর্মুলায় তৈরি কমার্শিয়াল ভাবনা। ঘুরপাক খাওয়া সেই গল্প থেকে বেরিয়ে এসে একবারে নতুন করে কিছু বলার চেষ্টা করেছেন রাহশান। যুদ্ধপরবর্তী সংকটময় সময়ের স্বাধীন দেশের গল্প তুলে ধরা হয়েছে এই সিনেমায়।

ছবিটিতে দেখানো হয়, ১৯৭৪ সালে সদ্য আমেরিকা ফেরত আফজাল নামের এক তরুণ বাংলাদেশ বেতারে ডিজে হিসেবে যোগদান করেন, তার সঙ্গে ময়না নামের এক তরুণীর প্রেম গড়ে ওঠে। এর মধ্যেই নির্মাতা সে সময়কার রাজনৈতিক বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন। তুলে ধরেছেন যুদ্ধের পর রাষ্ট্রনেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কীভাবে দেশ পরিচালনা করেছেন। এ ছবি দেখে এ বিষয়টি সহজেই বোঝা যায় মুক্তিযুদ্ধ ও এর পরবর্তী একটি সুনির্দিষ্ট সময়কালকে ধরতে নির্মাতা কতটা কৌশল ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।

‘বেঙ্গলি বিউটি’ ছবিটি গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি চরিত্র বাংলাদেশ বেতারের রাফেল নামের এক কর্মকর্তা, যিনি বারবারই চেষ্টা করেন ডিজে আফজালকে কাজ থেকে সরিয়ে দিতে। লোকটি চাটুকার ও হিংসুটে। লোকটি দেশের রাষ্ট্রনায়কের কথা বলে মুখে ফেনা তুলে দেয়, নিজের সুবিধা আদায়ের জন্য। সব মিলিয়ে গল্পটি বেশ ভাবিয়ে তোলে।

ছবিটি নির্মাণশৈলী এক কথায় অসাধারণ। গল্প বলার ঢং, কালার কম্বিনেশন, প্রপসের ব্যবহার দেখে মনে হবে হলিউডের কোনো সিনেমা চলছে। ছবির গানগুলোও ছিল প্রাণবন্ত। আবহসংগীতের ব্যবহারও ছিল দারুণ।

অভিনয়ে প্রথম ছবি হিসেবে মুমতাহিনা টয়া খুব ভালো করেছেন। ছোট পর্দার টয়াকে একবারের জন্যও ছোট পর্দার অভিনেত্রী মনে হয়নি। সোনালী যুগের নায়িকাদের মতোই দেখিয়েছে তাকে। নিখুঁত অভিনয় করার চেষ্টাও করেছেন তিনি। তাতে অনেকটাই সফল এই নায়িকা। অন্যারাও যার যার চরিত্রে মানানসই অভিনয় করেছেন। নির্মাতা নূরও অভিনয় করে সফল আফজালের ভূমিকায়। আফজাল নির্মাতা ও অভিনেতা দুই জায়গাতেই দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।

ছবিটি শত ভাগ মৌলিক। মুগ্ধ হয়ে দেখার মতো একটি ছবি। পাশাপাশি ভিন্ন চোখে দেখা দেশপ্রেমের ছবি ‘বেঙ্গলি বিউটি’। তবে হতাশার বিষয় হলো এরকম ভালো মানের একটি ছবির মাত্র একটি সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়া। ছবিটির তেমন প্রচারণা চালানোও হয়নি। এ দেশে চলচ্চিত্র পরিবেশনায় হাজারো সংকট, সিন্ডিকেট বিদ্যমান, তার পরও বেঙ্গলি বিউটিকে দর্শকের কাছে পৌঁছে দেয়ার আরো একটু বাড়তি প্রচেষ্টা চালালে আরও অনেক দর্শকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হতো।

এই ছবিটি যেমন প্রেমিক মনের মানুষদের দেখা উচিৎ তেমনি রাজনীতি সচেতন মানুষদেরও অন্তত একবার দেখা উচিত। ডিজে আফজালের ‘আসসালামলাই কুম বাংলাদেশ বলা, কিংবা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু সংবাদ পড়তে পড়তে কেঁদে ফেলার দৃশ্য বুকের ভেতর উথাল পাথাল করে দিয়ে যায়। এ প্রজন্মের দর্শকের এসব দৃশ্য বুকে ধারণ করা উচিত।

এমএবি/এলএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।