যাদের কেউ নেই তাদের পাশে শ্রীলেখা

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৪৫ পিএম, ০৯ জুলাই ২০১৮

মিডিয়ার স্বপ্নবাজ মানুষদের শেষ জীবনটা সবার ভালো হয় না। অনকে মডেল, অভিনেতা অভিনেত্রীদের শেষ জীবনে গিয়ে পথে দাঁড়াতে দেখা যায়। পরিবার থেকেও ছিটকে পড়েন অনেকেই। থাকে না নিজের ঘরে ফেরার উপায়। বয়স গড়াতে গড়ানে ষাট, পঁয়ষট্টি হয়ে গেয়ে থাকে না কাজ করার শক্তি। এমনই কিছু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র।

না, মানুষের দারে দারে ঘুরে তাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন না শ্রীলেখা মিত্র। এর জন্য বেছে নিয়েছেন অন্য পথ।‘বুক বাডি’ নামের একটি খাতার বিজ্ঞাপন করেছেন শ্রীলেখা। কলম ধরেছেন নিজেই । লিখে প্রকাশ করেছেন তার ইচ্ছেন কথা। গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে সেই লেখাও।

শ্রী লেখা বলেন, ‘‘একান্নবর্তী পরিবার থেকে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি, এখন তো একা থাকার চল। সমাজের এমন অবস্থায় কোথায় যায় বলুন তো পরিবারের বুড়ো-বুড়িগুলো? আমাদের কী কিছুই করার নেই তাদের জন্য? আমার ফেসবুকে যারা আছেন, তারা হয় তো দেখেছেন যে বেশ কয়েকজন বয়স্ক মহিলা-পুরুষকে নিয়ে একটি বাংলা ফ্যাশন ক্যালেন্ডার, কফি টেবিল-বুক করা হয়েছে, যার মেকিং-টা ইতিমধ্যেই ফেসবুকে আপলোড করেছি। নাম ‘বে-উম্রা’ , অর্থাৎ, ‘এজলেস’। বাংলায় বলতে গেলে, যার কোনও বয়স নেই, চিরকালীন। এখানে আমাদের মডেল পঁয়ষট্টি-ষাটোর্ধ কিছু বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, যাদের মধ্যে অনেকেই পথে ঘাটে ভিক্ষা করেন, বা পরিবার থেকে বিতাড়িত, বা মানসিক ভারসাম্যহীন। এদের মধ্যে মহিলারা থাকেন ‘ঈশ্বর সংকল্প’ নামে এক হোমে।

শুটিং চলাকালীন অদ্ভুত কিছু গল্প শুনেছিলাম এই মানুষগুলি সম্পর্কে। এক বৃদ্ধা বহু বছর নিজের মুখ দেখেননি আয়নায়। কারণ, কোনও এক এক সময় তাকে নাকি বলা হয়েছিল ‘তুমি কুৎসিৎ’। আবার কারও জীবন চেনা-পরিচিত সিরিয়াল-সিনেমার মতো। ছেলেকে মানুষ করার পরে, যোগ্য হয়ে সে পাড়ি দিয়েছে আমেরিকায়। মায়ের কথা সে আর ভাবে না। অন্য দিকে, বাড়ি থেকেও বিতাড়িত হন বৃদ্ধা। তাই ঠিকানা এখন হোমেই।

শিউরে উঠি সমাজের এই প্রতিচ্ছবি দেখে। আর মনে মনে পণ করি, শেষ বয়সে যেন কারোর উপরে আর্থিক বা অন্য কোনও সাহায্যের জন্য নির্ভরশীল হতে না হয়। বাবা-মায়েরা শুনছেন? ছেলেমেয়েদের বড় করুন, মানুষ করুন। কিন্তু, নিজেদের ভবিষ্যৎটা যেন গোচরে থাকে।

এই কাজে ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল, বাংলা ব্যন্ড ‘ক্যাকটাস’-এর সিধু, বাচিক শিল্পী সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের মতো অনেক বিশিষ্ট মানুষ এগিয়ে এসেছিলেন আমাদের সহযোগিতায়। নাহ! আর্থিক সাহায্য নয়। তবে পাশে পেয়েছি তাদের।

গ্যাঁটের পয়সা খরচ করে মানুষের সেবা করাটা কিছুটা সম্ভব। কিন্তু পথটা যদি দুর্গম আর দীর্ঘ হয়, সে ক্ষেত্রে পকেটে তো টান পড়েই। তাই এই প্রচেষ্টা। ‘বুক বাডি’ নামক এই খাতাটা, আপনাদের পাড়ার স্টেশনারি দোকানে আসছে আর কয়েক দিন পরেই। এটি কিনলে, দামের একাংশ যাবে অসহায় মানুষগুলির পাশে দাঁড়ানোর কাজে। আমার লেখার মাধ্যমে, ঠাকুমা-দিদিমা-দাদুদের ফোকলা মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব হলে, মন্দ কী!’’

এমএবি/এলএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।