পতিসরে পালন করা হবে কবিগুরুর মৃত্যুবার্ষিকী


প্রকাশিত: ০৮:১৫ এএম, ০৫ আগস্ট ২০১৫

আগামী ২২ শ্রাবণ (বৃহস্পতিবার) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবার্ষিকী। নওগাঁর আত্রাই উপজেলার পতিসরে স্মৃতি বিজড়িত কাছারি বাড়িতে (কুঠিবাড়ি) স্থানীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের উদ্যোগে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। কবিগুরুর ৭৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে দেশের রবীন্দ্র গবেষক, রবীন্দ্র শিল্পী ও বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

প্রতি বছরই সরকারিভাবে কবিগুরুর জন্মবার্ষিকীর পাশাপাশি মৃত্যুবার্ষিকী পালনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় রবীন্দ্র প্রেমীরা। এছাড়া বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ কৃষি প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটকে ‘রবীন্দ্রনাথ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ করার দাবি জানান এলাকাবাসী।

জানা গেছে, নওগাঁ শহর থেকে ৩৬ কিলোমিটার দুরে আত্রাই উপজেলার শান্তিময় গ্রাম পতিসর। কবিগুরু রবীন্দ্রানাথ ঠাকুর কালীগ্রাম পরগণার জমিদারি প্রাপ্ত হয়ে প্রথম পতিসরে আসেন ১৮৯১ সালে। এরপর থেকে কবি ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত নিয়মিত এই কুঠিবাড়িতে আসতেন। এখানে বসে রচনা করেছেন অনেক কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ। প্রতি বছরেই গুরুত্বের সঙ্গে জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়। তারই স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কাছারি বাড়িতে ভিড় করেন হাজারো রবীন্দ্রভক্ত, রবীন্দ্র গবষেক ও অনুরাগীরা। কিন্তু পতিসরে কখনো মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়না। এ নিয়ে কবি ভক্তদের মনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

কাচারিবাড়ীর রবীন্দ্র মিউজিয়ামের সাবেক তত্বাবধায়ক ও রবীন্দ্র স্মৃতি সংগ্রহকারী গিয়াস উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, কবিগুরুর নিজস্ব জমিদার বাড়ি পতিসরে বর্ণাঢ্যভাবে জন্মবার্ষিকী পালন করা হলেও কোনো দিনও মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়নি। কবি রবীন্দ্রনাথ কৃষি প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটকে যদি `রবীন্দ্রনাথ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়` হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয় তাহলে পতিসরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে। দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটদের পাশাপাশি প্রতিদিন লোক সমাগম হবে।

স্থানীয় গ্রামবাসি আব্দুর রশীদ জাগো নিউজকে জানান, কবিগুরু স্মৃতি বিজড়িত পতিসরে বেশকিছু উন্নয়ন করা হলে পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্তভাবে কোনো কিছু গড়ে তোলা হয়নি এখনো। বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত কাছাড়িবাড়ি নান্দনিকভাবে গড়ে তোলার দাবি জানান।

রবীন্দ্র স্মৃতি সংগ্রাহক এম মতিউর রহমান মামুন জাগো নিউজকে জানান, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার নিজস্ব জমিদারবাড়ি আত্রাইয়ের পতিসর এলাকায় ৪৭ বছরে জমিদারি চলাকালে শিক্ষা, সমাজ সংস্কার, কৃষি উন্নয়ন, রাস্তাঘাটসহ বেশ কিছু উন্নয়নের কাজ করেছেন। কিন্তু আজো পতিসর এলাকা অবহেলিত। জন্মবার্ষিকী পালনের পাশাপাশি সরকারিভাবে প্রতিবছর মৃত্যুবার্ষিকী পালনের দাবি জানান। 



এছাড়া রবীন্দ্র মিউজিয়ামের তত্বাবধায়ক বরুন চক্রবর্তী জাগো নিউজকে জানান, প্রতিদিন কাচারি বাড়িতে প্রচুর দর্শনার্থী আসেন। তবে বিশেষ দিনগুলোতে পা ফেলার মতো জায়গা থাকে না। তিনি আরো বলেন, ১৯৯৬ সালে কাচারি বাড়িতে নির্মিত রবীন্দ্র মিউজিয়ামে কবিগুরুর স্মৃতি ধন্য অনেক জিনিসই রয়েছে। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণে সরকার আরো বেশি পদক্ষেপ গ্রহণসহ এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্মৃতি ধন্য ব্যবহৃত জিনিসগুলো উদ্ধার করা প্রয়োজন।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেমন্ত হেনরি কুবি জানান, প্রথমবারের মতো এ বছর ২২ শ্রাবণ কবিগুরুর মৃত্যুবার্ষিকী পালনের উদ্যোগ নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ কৃষি প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট এর মাধ্যমে মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার লক্ষ্যে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

রাণীনগর-আত্রাই আসনের সংসদ সদস ইসরাফিল আলম জাগো নিউজকে জানান, দেশ বরণ্য সাহিত্যিক, রবীন্দ্র গবেষক, প্রশাসনিক কমকর্তা, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃত্বেবৃন্দ, সাংস্কৃতিককর্মীসহ রাজশাহী বিভাগীয় ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনারকে পতিসরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে অনুষ্ঠানটি স্বাথর্ক ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে।

তিনি আরো জানান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্য, বাংলা ভাষা, বাঙালি জাতিকে বিশ্বদরবারে আলোকিত ও পরিচিত করেছে। কবিগুরুর স্মৃতিকে আরো সম্প্রসারিত করতে পতিসরসহ অপর দুটি জামিদার বাড়িতেও তার মৃত্যুবার্ষিকী প্রতি বছর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পালনের দাবি জানান। সরকারি সহযোগিতা পেয়ে অনুষ্ঠান বড় আকারে পালন করা সম্ভব হবে।

এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।