প্রভূত কল্যাণের দ্বার খোলা বান্দার জন্যই
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন নাজিল করেছেন এবং কুরআনকে মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করেছেন। মানুষের দুনিয়ার জিন্দেগির সব সমস্যার সমাধান রয়েছে পবিত্র আল-কুরআনে। তা ২৩ বছর ধরে আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী অবস্থার আলোকে দান করেছেন মানবজাতিকে। শিখিয়েছেন জীবনাচার, হিকমত তথা কলা কৌশল। হজের মৌসুমে বাইতুল্লাহ তাওয়াফে মানুষ দুনিয়ার চাওয়া-পাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে যায়। মানুষের চাওয়া-পাওয়ার ধরণ কেমন হবে আলোচ্য আয়াত তার ইঙ্গিত বহন করে। যা জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
আয়াত পরিচিতি-
আলোচ্য আয়াতটি পবিত্র কুরআনে সবচেয়ে বড় ও দ্বিতীয় সূরা `সূরা আল-বাক্বারাহ`-এর ২০১ নম্বর আয়াত। অত্র সূরাটি মদিনায় নাজিল হয়েছে। যার আয়াত সংখ্যা-২৮৬। রুকু-৪০। এ সুরার নামটি সূরার মধ্যকার একটি শব্দ থেকে নেয়া হয়েছে। সূরাটি মানবজীবনে অতীব গুরুত্ব বহন করে।
আল্লাহ বলেন- `এবং কেউ কেউ বলেন হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়ায় কল্যাণ দাও এবং আখিরাতেও কল্যাণ দাও এবং আগুণের আজাব থেকে আমাদের বাঁচাও।` (সূরা আল-বাক্বারাহ : আয়াত ২০১)
আলোচ্য আয়াতে ‘হাসানাহ’ বা `কল্যাণ` শব্দটি একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। অর্থাৎ প্রকাশ্য ও গোপনীয় যাবতীয় কল্যাণের ক্ষেত্রে ব্যাপক।
দুনিয়াবী কল্যাণ- শারীরিক সুস্থতা, পরিবার-পরিজনের সুস্থতা, হালাল রোজগারের আধিক্য, জাগতিক যাবতীয় পূর্ণতা, মান-সম্মান, সামাজিক প্রতিষ্ঠা ও প্রতিপত্তি ইত্যাদি।
আখিরাতের কল্যাণ- নেক আমল, সৎ চরিত্র, উপকারী জ্ঞানার্জন, সঠিক আকীদার অধিকারী, ইবাদতে একাগ্রতার মাধ্যমে সিরাতে মুস্তাকিমের হেদায়েত লাভসহ অসংখ্য স্থায়ী নিয়ামত এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও সাক্ষাৎ লাভ প্রভৃতি এই হাসানাহ’র অন্তর্ভূক্ত।
অর্থাৎ এই আয়াত এমন একটি ফজিলত ও গুরুত্বপূর্ণ আয়াত যাতে ইহকাল ও পরকালের যাবতীয় প্রয়োজন অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। উভয় জাহানের শান্তি, আরাম-আয়েশ ও মুক্তি এ আয়াতের আওতাভূক্ত। যে কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াতটিকে দোয়া হিসেবে খুব বেশি বেশি পড়তেন। সুতরাং আমরা আমাদের নামাজসহ যাবতীয় ইবাদতে এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করবো।
বিশেষ করে কা`বা ঘর তাওয়াফের সময় এ দোয়া বেশি বেশি পড়তে হয়। তাওয়াফকারী রুকনে ইয়ামেনির দিকে ইশারা করেই তাওয়াফ শুরু করবে এবং এ দোয়া পড়তে থাকবে এবং বাইতুল্লাহ প্রদক্ষিণ করতে থাকবে। তাহলে আল্লাহ তাআলা তাওয়াফকারীকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণে সিক্ত করবেন। মনের সব নেক চাওয়া-পাওয়া কবুল করে নিবেন। যা বান্দার জন্য এক অতুলনীয় সুযোগ।
তাওয়াফে কেন এই আয়াত তিলাওয়াত করা হয়-
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট হচ্ছে- প্রাক ইসলামি যুগে বাইতুল্লাহ তাওয়াফের সময় তাদের নিজেদের বংশের মর্যাদা-গুণগান গাইতো, গোত্রীয় প্রশংসার বর্ণনা করতো এবং দুনিয়ার যাবতীয় চাওয়া-পাওয়ার আশা পোষণ করতো। তাই আল্লাহ তাআলা জাহেলী যুগের সংস্কৃতির পরিবর্তে ইসলামের যুগে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের চাওয়া পাওয়া আল্লাহর কাছে চাওয়ার এবং জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য এই আয়াতে কারিমা নাজিল করেন।
মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা, মানুষ পবিত্র কুরআনের আয়াতের আমল করে দুনিয়া ও আখিরাতের জীবন সাজাতে সক্ষম হন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে উক্ত আয়াতের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
জাগোনিউজ২৪ডটকমের সঙ্গে থাকুন। সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। পবিত্র কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
এমএমএস/আরএস/পিআর