শেষের পথে রূপসা নদীর বাঁকে ছবির শুটিং

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:২৮ পিএম, ০৯ জুন ২০১৮

বাংলাদেশের রাজনীতি, ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে বামপন্থীদের অবদান অনেক। এদেশে শ্রমজীবী মানুষদের অধিকার, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের প্রসার এবং সার্বিকভাবে সমাজপ্রগতির লক্ষ্যে বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে বামপন্থীদের ত্যাগ-তিতীক্ষা ও জেল-নির্যাতনের অনেক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু তাদের এই ত্যাগ ও সংগ্রামের কথা তেমনভাবে বলা হয় না।

এবার সেই গল্প সিনেমার পর্দায় তুলে আনছেন পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল। বাংলাদেশের বামপন্থীদের নিয়ে তিনি নির্মাণ করছেন ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ নামে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। ছবিটিতে তিরিশ দশকের স্বদেশি আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, রাজশাহি জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে কমিউনিস্টদের হত্যাসহ বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনাসমূহ একজন বিপ্লবীর জীবনের প্রেক্ষিতে বর্ণিত হবে বলে জানিয়েছেন তানভীর মোকাম্মেল।

এরইমধ্যে ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ ছবিটির ৯০ ভাগ শুটিং শেষ হয়েছে। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রটির কাহিনি গড়ে উঠেছে একজন ত্যাগী বামপন্থী নেতাকে ঘিরে, যাকে ১৯৭১ সালে রাজাকাররা হত্যা করে।

পরিচালক জানান, ইতিমধ্যে খুলনার বৈঠাঘাটা ও ফুলতলা উপজেলার গ্রামাঞ্চলে, দৌলতপুর স্টেশনে এবং কুমিল্লায় ছবিটির শুটিং হয়েছে। বিভিন্ন বয়সে বামপন্থী নেতাটির চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান শোভন, খায়রুল আলম সবুজ ও তাওসিফ সাদমান তূর্য্য। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন নাজিবা বাশার, রামেন্দু মজুমদার, আতাউর রহমান, চিত্রলেখা গুহ, কেরামত মওলা, ঝুনা চৌধুরী, আফজাল কবির, মাসুম বাশার, বৈশাখী ঘোষ, ইকবাল আহমেদ ও আরও অনেকেই।

নির্মাতা জানালেন, ছবিটির বাজেট ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৫০ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকার অনুদান হিসেবে দিয়েছে। যেহেতু এ ধরনের বিষয়বস্তুর একটি ছবির জন্য তানভীর মোকাম্মেল করপোরেট পুঁজির দ্বারস্থ হতে চান না, তাই বাকি ৪৬ লাখ টাকা গণ-অর্থায়নের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এ ছবির জন্য অবদান রাখছেন। ছবিটা শেষ করার জন্য বাকি অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। ছবির ১০ ভাগ শুটিং বাকি আছে। সেগুলো শেষ করে ১ জুলাই থেকে ডাবিং শুরু হবে বলে জানালেন পরিচালক।

এর গল্পে দেখা যাবে খুলনা জেলার রূপসা নদীর পারে কর্ণপাড়া গ্রামে এক ক্ষয়িষ্ণু সামন্ত পরিবারে জন্ম মানবরতন মুখোপাধ্যায়ের। শৈশবে পিতৃহীন তরুণ মানব বৃটিশ আমলে ‘অনুশীলন’ সমিতি ও পরে বামপন্থী আন্দোলনে যোগ দেন। কৃষক আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার কারণে এলাকার সবার কাছে ক্রমে ‘কমরেড মানবদা’ নামে পরিচিত ও সম্মানিত হয়ে ওঠেন তিনি। দরিদ্র নম:শুদ্র কৃষকেরা তাকে শ্রদ্ধাভরে ডাকত ‘কমরেড ঠাকুর’ বলে।

প্রথমে বৃটিশ সরকার ও পরে পাকিস্তান আমলে জেল-জুলুম-নির্যাতন ও নানা সংগ্রামের মাঝে ঝঞ্ঝাবিক্ষুদ্ধ জীবন কাটে মানবরতন মুখোপাধ্যায়ের। যার করুণ পরিণতি হয় ১৯৭১ সালে এসে। চির অবিবাহিত বিপ্লবী মানব মুখোপাধ্যায়ের বাল্যপ্রেমিকা উর্মিমালাকেও দেখা যাবে একরাশ হাহাকার নিয়ে হাজির হতে। মূলত, দেশপ্রেমী, মানবপ্রেমী ভাগ্যতাড়িত এক বামপন্থী নেতা এবং তার সময় ও যুগকে নিয়েই নির্মিত হবে ‘রূপসা নদীর বাঁকে’।

ছবিটি পরিচালনার পাশাপাশি এর চিত্রনাট্যও করেছেন তানভীর মোকাম্মেল। চিত্রগ্রহণে রয়েছেন নয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া মাহফুজুর রহমান খান।

এর আগে তানভীর মোকাম্মেলের নদীর নাম মধুমতি, চিত্রা নদীর পারে, লালসালু, লালন, রাবেয়া, জীবনঢুলিসহ বেশ কিছু চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন। চলচ্চিত্রগুলো জাতীয় পুরস্কারসহ দেশি-বিদেশি পুরস্কার পেয়েছে। প্রদর্শিত হয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। বরাবরের মতো এই ছবিটিও সবার মন জয় করবে বলে প্রত্যাশা তানভীর মোকাম্মেলের।

এলএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।