বড় হয়ে প্রিয়াঙ্কা হতে চায় মিমি

সায়ীদ আলমগীর
সায়ীদ আলমগীর সায়ীদ আলমগীর কক্সবাজার
প্রকাশিত: ১০:০১ এএম, ২৪ মে ২০১৮

আফসানা মিমি (৬) বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১ এর আশ্রিত জাফর আলমের মেয়ে। বিগত ৮ মাস আগে পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেও সে বোঝে না দেশান্তরি হওয়ার মর্ম। তাই অন্য শিশুদের মতো পুরো পৃথিবীটাই তার ঘর। এ কারণে যেকোনো বিষয়ের সঙ্গেই নিজেকে কল্পনা করতে উৎসুখ সে। তাই ভবিষ্যতে প্রিয়াঙ্কা হতে চায় বালুখালীতে মুক্তি ও ইউনিসেফ পরিচালিত শিশুবান্ধব ‘ভোরের পাখী’ শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষার্থী মিমি।

বুধবার ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত ও বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বালুখালী ক্যাম্পে এসে ‘ভোরের পাখী’ শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময় ‘বড় হয়ে কে কী হতে চাও’ এমন প্রশ্নে মিমি এ কথাটি বলে।

তবে বুধবারও শিশুবান্ধব কেন্দ্র পরিদর্শনকালে আগের দিনের মতো কোনো গণমাধ্যমকর্মী তার ধারে কাছে আসতে পারেনি।

jagonews24

ভোরের পাখী শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক জন্নাতুল ফেরদৌস জানায়, বুধবার সকালে ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত ও অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া তাদের শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে আসেন। কেন্দ্রে অবস্থান করা শিশুদের কাছে তার পরিচিতি তুলে ধরা হয়। তাকে টিভিতে নাচতে দেখেছে বলে উল্লেখ করে অনেক শিশু। এরপরও সরল ভাবে বোঝাতে প্রিয়াঙ্কা তাদের (নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের) উন্নয়নে কাজ করতে ক্যাম্পে এসেছেন বলে জানানো হয়। তখন রোহিঙ্গা শিশু ও কিশোর-কিশোরিদের সঙ্গে খেলাধুলায় মত্ত হন প্রিয়াঙ্কা। ফাঁকে ফাঁকে রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরদের কাছে জানতে চান, তারা বড় হয়ে কে কী হতে চাই। অনেকে অনেক পেশার কথা বললেও আফসানা মিমি বলে, বড় হয়ে সে প্রিয়াঙ্কা হতে চাই। সেও আশ্রিত মানুষ ও শিশুদের উপকারে কাজ করবে বলে জানায়।

জন্নাতুল ফেরদৌস আরও জানান, মিমির মুখে একথা শোনার পর প্রিয়াঙ্কা মিমিকে আদর করে বলেন, এটি হতে হলে তোমাকে পড়ালেখা করতে হবে। বিশ্বকে জানতে হবে। নিয়মিত স্কুলে আসতে হবে।

এখানে রোহিঙ্গা শিশুরা কী ধরনের সেবা পাচ্ছে? শিশুবান্ধব কেন্দ্রের ব্যবস্থাপককে প্রিয়াঙ্কা এমন প্রশ্ন করলে তাকে জানানো হয়, মিয়ানমারে নিপীড়ন দেখে এ দেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা কিশোর-কিশোরীদের মাঝে যে আতঙ্ক বিরাজমান ছিল শিশুবান্ধব কেন্দ্রে বিভিন্ন খেলাধুলার মাধ্যমে তাদের অন্তর থেকে ক্রমশ সেই স্মৃতি ধূসর হচ্ছে। তারা এখানে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে পড়ালেখা ও খেলাধুলা করতে পেরে আনন্দবোধ করছে।

এরপর তিনি সব শিশু-কিশোরদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা নিয়মিত স্কুলে আসবে, মনযোগ দিয়ে পড়বে। যাওয়ার সময় সবাইকে ডেকে ছবি তোলেন প্রিয়াঙ্কা। এ সময় আফসানা মিমি 'ভি' চিহ্ন দেখালে তার দেখাদেখি নূর ফাতেমা, আমেনা, হালিমা, মায়মূনা, নূর কায়েস ও রহিমসহ অন্য শিশুরাও তা দেখায়। আর এটি দেখে প্রিয়াঙ্কা হাস্যোজ্জল হয়ে ওঠেন।

jagonews24

এরপর সেখান থেকে জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উদ্দেশে রওনা হন প্রিয়াঙ্কা। সেখানে গিয়েও রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাদের মনের আকুতি-চিন্তাচেতনা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। এখানেও শিশুদের সঙ্গে খেলেন তিনি।

তিনদিন ধরে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৫টি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে সাবেক বিশ্বসুন্দরী প্রিয়ঙ্কা বলেন, সবার সহযোগিতায় বদলে যেতে পারে রোহিঙ্গা শিশুদের জীবন। আসুন হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সবাই একসঙ্গে তাদের জীবনকে পাল্টে দিতে কাজ করি।

এসব কথা তিনি ইউনিসেফের ফেসবুক ভেরিফাইড পেইজেও উপস্থাপন করেন।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার আফরাজুল হক টুটুল জানান, বৃহস্পতিবার সকালে তিনি উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাবেন। সেখান থেকে তিনি প্রায় ১৫ মিনিট সময়ের জন্য ফেসবুক লাইভে আসবেন। এরপর তার কক্সবাজার ত্যাগ করার কথা রয়েছে।

সায়ীদ আলমগীর/এফএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।