এত কাছে তবু কত দূরে!
পাশাপাশি ওয়ার্ড তবুও দেখা হলো না মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ নবজাতক ও তার মা নাজমা খাতুনের। গর্ভজাত মেয়েকে একনজর দেখতে অসুস্থ শরীর নিয়েও মাগুরা সদর হাসপাতাল থেকে দুপুর ১২টায় অ্যাম্বুলেন্সে চেপে রওনা হন বাচ্চু ভুঁইয়া ও নাজমা খাতুন দম্পত্তি। তীব্র যানজটে পড়ে টানা আট ঘণ্টা জার্নি করে রাত ৮টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান তারা।
অ্যাম্বুলেন্স থেকে নেমেই মেয়েকে একনজর দেখতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন মা নাজমা খাতুন। দোতলায় ২১১ নম্বর নিউনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (এনআইসিইউ) কক্ষের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ক্ষণিকের জন্য থমকেও দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু মা ও মেয়ের উভয়ের সুস্থ থাকার স্বার্থেই চিকিৎসকরা তাদের দেখা করার অনুমতি দেননি।
নাজমা খাতুনকে পাশের ২১২ নম্বর লেবার ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। মা দেখতে না পারলেও বাবা বাচ্চু ভুঁইয়া মেয়েকে একনজর দেখেছেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় শিশু সার্জারি বিভাগে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ নবজাতকের বাবা বাচ্চু ভুঁইয়া জানান, দীর্ঘ পথ জার্নি করে এসে নাজমা খাতুন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
তার প্রেসার বেড়ে গেছে। পেটের বাম পাশে গুলিবিদ্ধ হওয়ার জায়গা ও সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের সময় পেট কাটার স্থানে তীব্র ব্যথা করছে। চিকিৎসকরা তার শরীরে স্যালাইন পুশ করেছেন। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দিয়েছেন।
মেয়েকে এত কাছে পেয়েও কোলে নিয়ে বুকের দুধ খাওয়াতে না পারায় চোখের জল ফেলেছেন তার স্ত্রী। বাচ্চু ভুঁইয়া কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, মেয়েটির ভাগ্য এতই খারাপ। জম্মের পর মা অজ্ঞান থাকায় মায়ের সানিধ্যে পায়নি। আজ এত কাছে থেকেও দেখা পেল না।
শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সিফাত এ প্রতিবেদককে জানান, নবজাতকের মায়ের ক্ষতস্থানে ইনফেকশন হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্বাভাবিক ওজনের চেয়ে কম ওজন নিয়ে জম্ম নেয়া মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ নবজাতকেরও বুধবার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। ক্ষতস্থানে ২১টি সেলাই পড়েছে।
ইনফেকশনের ঝূুঁকি এড়াতে তাকে শিশু সার্জারি ওয়ার্ড থেকে এনআইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। সুতরাং মা ও মেয়ের উভয়কে সুস্থ রাখার স্বার্থেই দেখা করতে দেয়া হয়নি। মেডিকেল বোর্ডের সিনিয়র চিকিৎসকরা এসে দুজনকে দেখে সিদ্ধান্ত দিলে তবেই দেখা হবে।
বাচ্চু ভুঁইয়া জানান, মাগুরার এসপি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তাদের ঢামেক হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। সেই সঙ্গে হাতে নগদ পাঁচ হাজার টাকাও দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় এ প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে বাচ্চু ভুঁইয়া বারবার সার্জারি ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সিফাতের কাছে স্ত্রী ও সন্তানের শারীরিক অবস্থা জানতে চাচ্ছিলেন। ডাক্তার তখন তাকে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখার সান্ত্বনা দেন।
এমইউ/বিএ