শুভ জন্মদিন চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মৃণাল সেন

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৩২ পিএম, ১৪ মে ২০১৮

উপমহাদেশীয় বাংলা চলচ্চিত্রের ট্রিলজি বলা হয় সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক ও মৃণাল সেনকে। তিনজনই ছিলেন নিজ নিজ স্থানে অতুলনীয়। তাদের মধ্যে অন্যতম প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেন।

খ্যাতিমান এই চলচ্চিত্রকার বার্ধক্যের কারণে এখন আর চলচ্চিত্র পরিচালনায় সমর্থ না হলেও চলচ্চিত্র বিষয়ক বিবিধ কর্মকাণ্ডে এখনো তার সচল উপস্থিতি। আজ সোমবার, ১৪ মে তিনি পদার্পণ করেছেন ৯৬ বছরে।

বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুরে ১৯২৩ সালের ১৪ মে জন্মগ্রহণ করেন কিংবদন্তি নির্মাতা মৃণাল সেন। এ দেশের আলো-হাওয়া গায়ে মেখেই কেটেছে মৃণাল সেনের শৈশব-কৈশোর। ফরিদপুরের কাঁদামাটিতে হেঁটে হেঁটেই পা রাখেন তারুণ্যের চৌকাঠে। কিন্তু দেশ বিভাগের রাজনৈতিক ডামাঢোল তাকে ঠেলে দেয় কলকাতায়।

কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিষয়ে পড়াশোনা করেন মৃণাল সেন। পদার্থ বিজ্ঞানের একজন ছাত্র হয়ে শিল্পকলার সেরা মাধ্যম চলচ্চিত্রে প্রতি তিনি কী করে ঝুঁকলেন সে এক বিস্ময়। ঠিক যেমন রসায়নের ছাত্র হুমায়ূন আহমেদ মাতিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের সাহিত্য, চলচ্চিত্রাঙ্গনকে।

ছাত্রজীবনে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি ছিল মৃণাল সেনের দারুণ আগ্রহ। কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক শাখার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সরাসরি কখনও কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হননি। চল্লিশের দশকে গণ নাট্যসংস্থার (ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন/আইপিটিএ) সঙ্গে যুক্ত হন। এ সংস্থার মাধ্যমে তিনি সমভাবাপন্ন মানুষদের কাছাকাছি আসতে সক্ষম হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালে তিনি একজন সাংবাদিকতাও করেছেন দীর্ঘদিন। কিছুদিন চলচ্চিত্রের শব্দ কলাকুশলী হিসেবে কাজ করেন।

গণনাট্য সংস্থার হয়ে গ্রামের হাটে-মাঠে-ঘাটে ঘুরে ঘুরে মৃণাল সেন দেখা পান জীবনের শতধারার। মনের ক্যানভাসে গেঁথে রাখা সেইসব ছবি সেলুলয়েডে আকাঁর স্বপ্নে বিভোর হয়ে নির্মাণ করেন প্রথম ছবি 'রাতভোর'। ১৯৫৫ সালে মুক্তি পাওয়া মৃণাল সেন পরিচালিত প্রখম ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে সাফল্যের মুখ দেখেনি। তবে চলচ্চিত্রকার হিসেবে এনে দেয়নি পরিচিতি। শক্তিশালী নির্মাতা মৃণাল সেনের পরিচয়টা আসে আরও চার বছর পর, ১৯৫৯ সালে যখন মুক্তি পায় তার দ্বিতীয় ছবি ‘নীল আকাশের নিচে’।

সেই সাফল্যের হাত ধরে পরের বছরই অর্থাৎ ১৯৬০ সালে মুক্তি পায় তার তৃতীয় ছবি ‘বাইশে শ্রাবণ’। শুরু হয় চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের জয়যাত্রা। এ ছবিটিই তাকে প্রথম আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়।

এরপর ১৯৬৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ভুবন সোম’ সিনেমার মাধ্যমে প্রচলিত ধারাকে বদলে দেন তিনি। এতে অভিনয় করেন উপমহাদেশের শক্তিমান অভিনেতা উৎপল দত্ত। ১৯৭১ সালে মুক্তি পায় ‘ইন্টারভিউ’ ছবিটি। এতে অভিনয় করে প্রশংসিত হন নন্দিত অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক।

এরপর ক্যালকাটা ৭১ (১৯৭২), পদাতিক (১৯৭৩), একদিন প্রতিদিন (১৯৭৯), মহাপৃথিবী (১৯৯২), অন্তরীণ (১৯৯৪), আকালের সন্ধানে (১৯৮০) ও খারিজ (১৯৮২) চলচ্চিত্রগুলো নির্মাণ করেন মৃণাল সেন।

বাংলা ছাড়াও হিন্দী, ওড়িয়া ও তেলেগু ভাষাতেও দেখিয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাণের মুন্সিয়ানা। কালীন্দিচরণ পাণিগ্রাহীর গল্প অবলম্বনে ১৯৬৬ সালে ওড়িয়া ভাষায় নির্মাণ করেন ‘মাটির মনীষ’। ১৯৬৯ সালে বনফুলের কাহিনী অবলম্বনে হিন্দিতে নির্মাণ করে ‘ভুবন সোম’। ১৯৭৭ সালে প্রেম চন্দের গল্প অবলম্বনে তেলেগু ভাষায় নির্মাণ করেন ‘ওকা উরি কথা’। ১৯৮৫ সালে হিন্দী, ফরাসী ও ইংরেজি ভাষায় নির্মাণ করেন ‘জেনেসিস’।

‘খারিজ’ ১৯৮৩ সালের কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার ও ‘আকালের সন্ধানে’ ১৯৮১ সালের বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার অর্জন করে।

১৯৮১ সালে মৃণাল সেন ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মভূষণ লাভ করেন। ২০০৫ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে অর্জন করেন। ১৯৯৮-২০০৩ সালে তিনি ভারতীয় সংসদের সাম্মানিক সদস্যপদ লাভ করেন। ২০০০ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাকে অর্ডার অব ফ্রেন্ডশিপ সম্মানে ভূষিত করেন। এছাড়াও ফরাসী সরকার তাদের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান কমান্ডার অব দি আর্টস এ্যান্ড লেটারসে ভূষিত করেন এই ইতিহাস বিখ্যাত চলচ্চিত্রওয়ালাকে।

পাশাপাশি মৃণাল সেন ভারত ও ভারতের বাইরে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। একবার ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব দ্য ফিল্মের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

মৃণাল সেনের আত্মজীবনী বেরিয়েছে ২০০৪ সালের শেষভাগে। দিল্লির স্টেলার পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত ৩১০ পৃষ্ঠার এ বইটির নাম ‘অলওয়েজ বিয়িং বর্ন’।

এলএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।