তিন ইস্যুতে আন্দোলনমুখী চলচ্চিত্র পরিবার

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:০৫ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০১৮

ঢাকাই চলচ্চিত্রে মেঘের কালো ছায়া লেগেই আছে। দীর্ঘদিনের অনিয়মে ভুগছে ও ধুঁকছে ইন্ডাস্ট্রি। তবে স্মরণকালের সেরা অনিয়মটি চলতি বছরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদানকে কেন্দ্র করে হয়েছে বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৮ সংগঠনের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা চলচ্চিত্র পরিবারের নেতৃবৃন্দরা।

২০১৬ সালের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে এরইমধ্যে। সেখানে দেখা যায় জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজনায় নির্মিত ‘নিয়তি’ ছবিতে কাজ করে সেরা নৃত্য পরিচালক হিসেবে পুরস্কার পাচ্ছেন হাবিব। কিন্তু হাবিব সয়ং নিজেই দাবি করছেন এই ছবিতে তিনি কাজ করেননি। যৌথ প্রযোজনার ছবিটিতে কলকাতার কোরিওগ্রাফার হিসেবে জয়েশ প্রধান কাজ করেছেন।

তাই প্রশ্ন উঠেছে, যে ব্যক্তি কাজই করেনি সে কেমন করে কাজের স্বীকৃতি পায়? ২০১৬ সালের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ড, সেন্সর বোর্ড ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি সেই প্রশ্ন ছুঁড়ে আজ রোববার (২২ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে চলচ্চিত্র পরিবার। সেখানে অনিয়ম করে হাবিবকে পুরস্কার দেয়ায় প্রতিবাদ জানানো হয়। সেইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার নিয়ে জালিয়াতির জন্য ‘নিয়তি’ ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’র জুরি বোর্ড ও তথ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে চলচ্চিত্র পরিবার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নৃত্য পরিচালক হাবিব, চলচ্চিত্র পরিবারের আহ্বায়ক চিত্রনায়ক ফারুক, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, নৃত্য পরিচালক সমিতির সভাপতি মাসুম বাবুলসহ আরও অনেকেই।

বক্তারা অভিযোগ করেন, হাবিবকে এখনও ওই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে ফোন দিয়ে নানা প্রলোভন দেখানো হচ্ছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহণ করার জন্য। সংবাদ সম্মেলনে চিত্রনায়ক ফারুক বলেন, ‘যে ছবির জন্য হাবিবকে পুরস্কার দেয়া হয়েছে সেই ছবিতে কাজই করেনি হাবিব। আর এই দাবি নিজে হাবিব করছে। এর চেয়ে হাস্যকার আর কী হতে পারে। আমাদের চলচ্চিত্রে কতো বড় অনিয়মের রাজত্ব চলছে এই পুরস্কার তারই প্রমাণ দেয়। আজ হাবিবের সততার জন্য বিষয়টি সবাই জানতে পেরেছি। আমরা এই জালিয়াতির তীব্র নিন্দা জানাই এবং এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই জঘন্য জালিয়াতির জন্য সংশ্লিষ্ট প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। সেন্সর বোর্ডের তথ্য অনুযায়ীই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ড সবকিছু চূড়ান্ত করেন। নইলে পরবর্তীতে এইসব অপরাধ নিয়মে পরিণত হবে। যদি এই জালিয়াতির সঠিক শাস্তি নিশ্চিত না হয় তবে আমরা আন্দোলনে যাবো। অনিয়ম ঢুকে গেছে চলচ্চিত্রের রন্দ্রে রন্দ্রে। আমরা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে অনিয়মের হাত থেকে রক্ষা করতে বদ্ধ পরিকর।’

সম্মেলনে হাবিব বলেন, ‘আমি যে কাজটি করিনি সেই কাজের জন্য পুরস্কার পেয়ে বিব্রত ও লজ্জিত। আমি এর সঠিক প্রতিকার দাবি করছি।’

সম্মেলনে চিত্রনায়ক ফারুক আরও বলেন, ‘আমরা আরও দুটি বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। সেগুলো হলো অনিয়মের সাফটা চুক্তির ব্যাপারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা ও সিনেমা হলে ডিজিটাল মেশিন বসানোর ব্যাপারে সময় ক্ষেপন। বারবার মন্ত্রণালয়ের কাছে অভিযোগ করেও সাফটা চুক্তির ব্যাপারে সঠিক সমাধান মেলেনি। দেশের সিনেমাকে হুমকির মুখে ফেলে ভিনদেশি সিনেমা আনা হচ্ছে বৈষম্যের চূড়ান্ত করে। সেইসঙ্গে ৫০টি হলে সরকারিভাবে ডিজিটাল মেশিন বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাহেব এর কোনো বাস্তবায়ন ঘটাননি। অচিরেই এই দুটি বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেয়া হলে কঠোর আন্দোলনে নামবে চলচ্চিত্র পরিবার।’

রাজপথে থেকে চলচ্চিত্রের মানুষেরা তাদের দাবি আদায় করবে বলে জানান ঢাকাই সিনেমার ‘মিয়াভাই’। যে এফডিসি, যে চলচ্চিত্র শিল্প জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেই চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে তার কন্য শেখ হাসিনার সুদৃষ্টির বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এলএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।