নায়ক-নায়িকার স্যাক্রিফাইস আর নির্মাতার প্রেমের ছবি স্বপ্নজাল

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:২৬ পিএম, ২৩ মার্চ ২০১৮

দেশের অন্যতম জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমনি। তাকে নিয়ে 'স্বপ্নজাল' নামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন মনপুরা খ্যাত নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম। এতে পরীর বিপরীতে অভিনয় করেছেন নবাগত ইয়াশ রোহান।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) ছবিটির মুক্তির উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজন করেন নির্মাতা সেলিম। সেখানে তার ছবির কলাকুশলীদের পরিচয় করিয়ে দেন তিনি। আলোচনা হয় ছবির গল্প, চরিত্র, অভিজ্ঞতা নিয়ে। দেখানো হয় কিছু গান ও দৃশ্য। আলোচনার টেবিলে এই ছবিতে পরীমনির যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে গিয়াসউদ্দিন সেলিম বলেন, 'আমরা এই ছবির শুভ্রা চরিত্রের জন্য সঠিক কাউজে খোঁজে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ আয়াদের টিমেরই একজন পরীমনির কথা বললেন। আমার বন্ধু এস এ হক অলীকের একটি ছবিতে কাজ করেছিলো পরী। তার কাছ থেকে পরীকে নিয়ে কাজ করা যায় কী না পরামর্শ চাইলাম। সে বললো চোখ বন্ধ করে নেয়া যায়। এরপর পরীর সঙ্গে আলাপ, তাকে দেখতে গেলাম এফডিসিতে। সে ওখানে চার নাম্বার শুটিং ফ্লোরে কাজ করছিলো। ওকে দেখেই মনে হলো যে শুভ্রা চরিত্রটি ওকেই চায়। তারপর অবশ্য তার স্ক্রিনটেস্ট নিয়েছি, আরও অনেক প্রক্রিয়া ছিলো। কিন্তু সবই ছিলো আনুষ্ঠানিকতা। পরীকে আমি প্রথম দেখার পরই নিয়ে নিয়েছিলাম।'

এই প্রসঙ্গে পরী বলেন, 'অলীক ভাই যখন বললেন, 'মনপুরা সিনেমার পরিচালক আমাকে খোঁজছেন, আমার নাম্বার নিয়েছেন কল দিবেন বলে আমি শুনেই উত্তেজনায় ভুগছিলাম। তার ছবিতে কাজ করবো ভাবতেই দারুণ লাগছিলো। তবে উনি কল দিলে কীভাবে কথা বলবো, কী বলবো সেটা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তাই তার কল দেয়ার চার পাঁচদিন পর আমাদের কথা হলো।'

পরীকে নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতায় সেলিম বলেন, 'কার ক্ষেত্রে কী হয়েছে আমি জানিনা। তবে বিদেশের মাটি কলকাতায় এই ছবির টানা শুটিং করেছি ১৫ দিনের মতো। প্রতিদিন সকাল ৬টায় উঠে আমরা সেটে যেতাম। ৯টা পর্যন্ত কাজ করেছি। একদিনও পরী আমাকে কষ্ট দেয়নি, শিডিউল ফাঁসায়নি। দেশেও সে ছিলো বাধ্যগত ছাত্রীর মতো। আমি খুবই আনন্দিত ওর সঙ্গে কাজ করে। পরী অনেক ট্যালেন্টেড অভিনেত্রী। কোনো একটি বিষয় বুঝিয়ে দিলে পরী চট করে আয়ত্ত করে ফেলে, ওকে আমি বলি কুইক লার্নার। এটি খুব কম শিল্পীর মধ্যে দেখা যায়।

একজন শিল্পী যখন কুইক লার্নার হয়, তখন সে অনেককিছু করতে পারে। পরীমনিও তেমন। আমার বিশ্বাস পরীমনি চাইলে একদিন শাবানা হতে পারবে। ওর সেই চেষ্টা করা উচিত।'

গিয়াস উদ্দিন সেলিম যখন পরীমনিকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেন, তখন নায়িকা পরী পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। নিজের নির্মাতার কাছে এমন প্রশংসায় আপ্লুত ছিলেন তিনি। নির্মাতার পা ছুঁয়ে আশির্বাদ নিতে ভুললেন না।

তবে এই ছবিতে কাজের শুরুর দিকে নিজের চরিত্রে অভিনয় নিয়ে বেশ হতাশায় ছিলেন পরীমনি। তিনি বলেন, 'ছবিটির শুটিংয়ের প্রথম কয়েকদিন ‘শুভ্রা’ চরিত্রটিতে ঢুকতে পারছিলাম না। খুব বিরক্ত হচ্ছিলাম। ভেবেছিলাম শুটিং ছেড়ে চলে আসবো । তখন সেলিম ভাই আমাকে আরেকটা দিন অপেক্ষা করতে বললেন। এরপর দেখি সেটের সবাই আমাকে পরী বাদ দিয়ে আমাকে শুভ্রা বলে ডাকতে শুরু করে। আমিও আস্তে আস্তে নিজেকে শুভ্রা ভাবা শুরু করি, চরিত্রটি ভালোবেসে ফেলি। সেই থেকে আমি এখনও শুভ্রা চরিত্রের মধ্যেই আছি। এই ছবিতে কাজ করতে গিয়ে লাউড ছবিগুলোতে আমার সমস্যা হয়েছে। অনেক ছবি ছাড়তেও হয়েছে। এসবই স্বপ্নজালের জন্য স্যাক্রিফাইস। স্বপ্নজাল মুক্তি পাওয়ার পর চরিত্রটি থেকে বের হতে পারবো হয়তো।'

এই ছবিতে কাজ করতে গিয়ে স্যাক্রিফাইসের গল্প শোনালেন নায়ক ইয়াশ রোহান (সোনাই) বলেন, 'এই ছবির কাজের জন্য আমাকে তিনটি সেমিস্টার ড্রপ দিতে হয়েছে। মন খারাপ করে সেটে বসে থাকতাম। পরীমনি আমাকে সাহস দিতো। অনেক যত্ন নিয়ে আমরা কাজটি করেছি। অনেক ত্যাগ আছে এর পেছনে। অনেক ভালোবাসা আছে। দুই বাংলার দর্শক ছবিটি দেখলেই আমরা সার্থক হবো।'

নির্মাতা শোনালেন চমকপ্রদ এক তথ্য। তার প্রথম ছবি মনপুরায় নায়ক চঞ্চলের চরিত্রের নাম ছিলো সোনাই আর ফারহানা মিলির চরিত্রের নাম ছিলো পরী। আর তার দ্বিতীয় ছবির নায়ক-নায়িকার সত্যিকারের নামই সোনাই-পরী। মিডিয়াতে নায়ক রোহান নামে পরিচিত হলেও তার ডাকনাম সোনাই। এই বিষয়টিকে নির্মাতা সেলিম নিজের সিনেমা নির্মাণের ক্যারিয়ারে কাকতালীয় প্রাপ্তি বলেই মানছেন।

বৃহস্পতিবারের ঘরোয়া আড্ডায় আরও উপস্থিত ছিলেন ফজলুর রহমান বাবু, কৃষ্ণকলি, নূরুল আলম আতিক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ছবির কলাকুশলীরা।

ওই আড্ডায় সংবাদ কর্মীদের সঙ্গে আলাপে নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, 'স্বপ্নজাল যৌথ প্রযোজনার ছবি। ৬ এপ্রিল বাংলাদেশে এটি মুক্তি পাচ্ছে। তার দুই সপ্তাহ পরে পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পাবে। এরই মধ্যে ছবিটি সেখানকার সেন্সর বোর্ডে দেয়া হয়েছে। মুক্তির আগে বাংলাদেশ থেকে ‘স্বপ্নজাল’ ছবির টিম যাবে কলকাতায়, প্রচারণার উদ্দেশ্যে। সেলিম বলেন, আমাদের টার্গেট প্রথম ২০ থেকে ২৫ টি সিনেমা হলে মুক্তি দেব। এর পর ছবি চললে এমনিতেই হল বাড়তে থাকবে।'

যৌথ প্রযোজনার হলেও এইএই ছবি নিয়ে সেলিম বলেন, 'স্বপ্নজাল আমাদের গল্পের ছবি, আমাদের ছবি। এই ছবির শিল্পী, ক্যামেরাম্যান সবকিছুই বাংলাদেশের। আমি মনে করি, এই ছবি বাংলাদেশি ছবি হিসেবেই কলকাতায় ভাল ব্যবসা করবে।'

এলএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।