ফিরতি টিকিটের হাহাকার : বিপাকে কর্মজীবী মানুষ


প্রকাশিত: ০৪:৩৭ এএম, ২৩ জুলাই ২০১৫

নাড়ির টানে যশোরের শার্শা ও বেনাপোলে ঈদ করতে এসে আটকা পড়েছেন শত শত কর্মজীবী মানুষ। বাসের ফিরতি টিকিট সংকটের কারণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত মানুষেরা সময় মতো তাদের কর্মস্থলে যোগদান নিয়ে রয়েছেন চরম বিপাকে।  

বেনাপোল থেকে দুরপাল্লার দিন রাতের কোনো বাসে ২৮ জুলাই পর্যন্ত কোনো টিকিট নেই। ঈদ উপলক্ষে শহর জীবনের সব ক্লান্তি আর ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে নাড়ির টানে গ্রামে আসা মানুষগুলোর টিকিট কাটতে ছোটাছুটি দেখে সকলেই যেন কষ্ট পাচ্ছে। ঈদের ছুটি শেষে সব মায়া আর নাড়ির টানকে উপেক্ষা করে তাদের কর্মস্থলে ফিরতেই হবে। স্থানীয় মানুষদের পাশাপাশি ভারত থেকে আগত শত শত পাসপোর্টধারী যাত্রীরাও পড়েছেন বিপাকে।

গাজীপুরের একটি রপ্তানিমুখী সোয়েটার কারখানার অপারেটর বেনাপোলের পুটখালি অভয়বাস গ্রামের গৃহবধূ মুনিরা খাতুন বলেন, ঈদের সময় বাড়ি আসার সময় টিকিট কাটতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। বাড়িতে সবার সাথে ঈদ উদযাপন একটু আলাদা মজা। রোববার আমাকে কাজে যোগ দিতে হবে। কিন্তুু যাওয়ার জন্য কোনো টিকিট পাচ্ছি না। একটি পরিবহনের ম্যানেজারকে অনেক অনুরোধ করেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন দেখি কি হয়?

ঢাকার একটি ব্যাংকে চাকরি করা বেনাপোলের ছোট আচড়া গ্রামের রিফাত হাসান বলেন, ঢাকার যানজট, কর্মব্যস্ততা সব মিলিয়ে এই যান্ত্রিক জীবন ছেড়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার জন্যই ঈদের ছুটিতে গ্রামে এসেছিলাম। চাকরির তাড়া খেয়ে আগে ভাগেই ফেরার জন্য দু‘দিন ঘুরেও কোনো টিকিট পাইনি। তারপরও ফিরতে হবে কর্মস্থলে।

ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসিকুল কবীর সুমন বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসেই আগেই যাওয়ার টিকিট কেটে নিয়েছি। এখন কোনো টিকিট নেই। সামনে পরীক্ষা তাই আগে ভাগেই মা বাবাকে ছেড়ে ঢাকায় চলে যাচ্ছি। যে কটা দিন বাড়ি ছিলাম সময়টা ভালই কেটেছে।  

এদিকে বেনাপোল থেকে ঢাকা চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কর্মস্থলে ফিরতে বাস মালিক ও শ্রমিকদের হাতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে হাজার হাজার সাধারণ যাত্রী।

যাত্রীদের অভিযোগ, বাস শ্রমিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে ঈদের অজুহাত দেখিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এখন ঢাকা থেকে আসার পথে খালি গাড়ি নিয়ে আসতে হয় বিধায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আগামী ২৮ জুলাই পর্যন্ত এ ভাড়া নির্ধারিত থাকবে। ওই তারিখের পর আগের রেটে ভাড়া নেওয়া হবে বলে জানান সোহাগ পরিবহনের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম।

তিনি আরো জানান, যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে অতিরিক্ত পরিবহন দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশ্বাসও পেয়েছি।   

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বেনাপোল থেকে ঢাকা, চট্রগ্রামে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যাত্রীদের কাছ থেকে নন এসি চেয়ার কোচে বেনাপোল-ঢাকার জন্য ৬৫০ ও বেনাপোল-চট্রগ্রামের জন্য এক হাজার ১০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। আগে ভাড়া ছিল ঢাকার জন্য ৫৫০ ও চট্রগ্রামের জন্য ১০০০ টাকা। এসি কোচে বেনাপোল থেকে ঢাকায় ভাড়া ১২৫০ টাকা ও বেনাপোল থেকে চট্রগ্রামে ভাড়া ২৩০০ টাকা। তবে এসি কোচের ভাড়া বাড়ানো হয়নি বলে পরিবহন সূত্রে জানা গেছে।  

এ ব্যাপারে বেনাপোল হানিফ এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম জানান, তুলনামূলকভাবে ভাড়া বাড়ানো হয়নি। বর্তমানে তেলের মূল্য, ফেরি ভাড়া বৃদ্ধি হয়েছে তারপরও ঢাকা থেকে এখন খালি গাড়ি আসছে বিধায় ঈদের আগের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে টিকিট প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এটা সাময়িক। এরপর নির্ধারিত রেটে ভাড়া নেওয়া হবে।

মো. জামাল হোসেন/এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।