অজয়ের খেয়ালে বেখেয়ালে ডুবল সবাই

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৩৪ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭
ছবি : মাহবুব আলম

রজনীর শেষ বেলাতেও চাঁদ ছিল আকাশে। জ্যোৎস্না থাকলেও তাতে মধুমাখা আলো ছিল না। পৌষের কুয়াশা চাঁদের আলো জমিনে ফেলতে বিড়ম্বনা সৃষ্টি করছিল মধ্যরাত থেকেই। ভোর ঘনিয়ে আসতেই একেবারে কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় পুরো আকাশ।

রাজধানীর আবাহনী মাঠজুড়ে তখন কুয়াশার খেল। সোডিয়াম বাতিগুলো ব্যর্থ চেষ্টা করছিল কুয়াশা তাড়াতে। তাতে অবশ্য অন্যরকম এক আবহ তৈরি হলো। খানিক দূর থেকেই পরিচিত মুখগুলোও অপরিচিত ঠেকছিল। মাঠের মধ্যে মধ্যে জায়ান্ট স্কিনে (বড় প্রজেক্টর) নানা রংয়ের ঝলক। তাতেই ধ্যনমগ্ন শ্রোতারা। যেন বরফ গলে মাথায় পড়ছে, তাতে অবশ্য খেয়াল নেই। চোখের পাতাগুলোয় শিশির কণারা বাসা বাঁধছে, তা ভাঙতে পলক ফেলছে না কেউই। মধুমাখা খেয়ালের সুরে সবাই তখন বেখায়ালি। এমন সুরের আবেশে শ্রোতাদের বেখেয়ালি করতেই যেন প্রকৃতির এত আয়োজন। অজয় চক্রবর্তীর খেয়ালে নানা রাগের পসরা বসিয়ে প্রকৃতিও মাতাল হয়ে থাকল যেন।

Bangol-Fest-1

ভোরের আভা ফুটছে তখন। অজয়ের কণ্ঠে রাগ ভৈরবীতে ভজন গান শেষ বেলায়। আহা! যেন বাতাসও কান পেতে রইল। রাতের নীরবতা আবাহনী মাঠে আরও গেড়ে বসল এ বেলায়। আর এমন নীরবতা সুরে সুরেই দখলে রাখল অজয়ের খেয়াল।

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব ২০১৭-এর তৃতীয় দিনের শেষ পরিবেশনাটি ছিল পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর খেয়াল। যে বেলায় মঞ্চে উঠলেন অজয়, সেবেলায় পেছনের স্কিনে রক্তিম সূর্য ভেসে উঠল। রাঙা প্রভাতের বেলাটির খানিক অংশ জল ছুঁয়ে আছে তখনও। সম্ভবত শরতের ভোর। নদী তীরের কাঁশফুলগুলোই তার প্রমাণ দিচ্ছে। আর সারারাত ভোজন শেষে পালক ঝাপটিয়ে দুটি বালিহাঁস মিলে যাচ্ছে দূর অজানায়। খানিক রক্তিম বটে, অথচ সোনালি কিরণ ফেলছে নদী বক্ষে ভোরের সূর্য।

Bangol-Fest-2

অজয় চক্রবর্তী শুরুতেই প্রার্থনাস্বরূপ রাগ গুণকেলি দিয়ে খেয়াল শুরু করেন। এরপর যোগিয়া রাগে বাংলা গান। শেষে ভজন। শিল্পীকে তবলায় সঙ্গত করেন পণ্ডিত যোগেশ শামসি, হারমোনিয়ামে ছিলেন অজয়ের ছেলে গৌরব চ্যাটার্জি। তানপুরায় মধুসুর ঢালেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল কুমার মালাকার ও অভিজিৎ দাশ।

এর আগে বেহালায় হাসি-কান্নার ঝড় তোলেন বিদুষী কলা রামনাথ। রাগ নট ভৈরব এবং রাগ বসন্তে বিদুষী প্রাণে প্রাণে টান ধরান। শিল্পীকে তবলায় সঙ্গত করেন যোগেশ শামসি এবং তানপুরাতে সঙ্গত করেন জ্যাতাশ্রী রায় চৌধুরী ও চন্দ্রা সাহা স্মৃতি।

Bangol-Fest-3

এদিনের আরেকটি অনবদ্য পরিবেশনা ছিল গ্র্যামি বিজয়ী পদ্মভূষণ বিদ্বান ভিক্ষু বিনায়করাম ঘাটম ও কাঞ্জিরা। মাটির ভাণ্ডারে যেন সুর ভরে নিয়ে আসেন মঞ্চে। সঙ্গে তার পুত্র সেলভাগনেশ বিনায়করাম ও পৌত্র স্বামীনাথনও ছিলেন। এবারে এক মঞ্চে এই তিন প্রজন্মের পরিবেশনা একসঙ্গে উপভোগ করার সৌভাগ্য পান দর্শকরা। তাদের সঙ্গে মরসিংয়ে ছিলেন এ. গনেশন। নিজেদের পরিবেশনার শুরুতেই তারা ঘাটমে শিব তাণ্ডব, সেভেন অ্যান্ড হাফ বিট কম্পোজিশন বাজান। পরে তারা গুরুবন্দনা ও গণপতি তাল বাজিয়ে দর্শকদের মাতিয়ে তোলেন।

আসরের শুরুতেই দলগত সেতার বাদন পরিবেশন করেন বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর ড. ফকির শহীদুল ইসলাম ও জি এম সাইফুল ইসলামের পরিচালনায় খেয়াল পরিবেশন করে সরকারি সংগীত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা পরিবেশন করেন রাগ মালকোষ।

Bangol-Fest-4

খেয়ালের পর সরোদ পরিবেশন করেন শিল্পী আবির হোসেন। তার সঙ্গে তবলায় ছিলেন যোগেশ শামসি, এবং তানপুরায় অভিজিৎ দাশ। শিল্পী পরিবেশন করেন রাগ আভোগী।

সরোদ পরিবেশনার পর বাঁশি বাদন নিয়ে মঞ্চে আসেন গাজী আবদুল হাকিম। তিনি দেশ রাগ, পিলু ঠুমরীসহ কয়েকটি ধুন পরিবেশন করেন। বাঁশির পর ধ্রুপদ সংগীতে দর্শকদের মন কাড়েন শাস্ত্রীয় সংগীতের সনাতন ধারার বিশিষ্ট পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকর।

এএসএস/এমবিআর/জেএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।