২০১৭ সালে শোবিজে যতো আলোচিত ঘটনা

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:১৫ এএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭

নতুন বছরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সবাই। এই মুহূর্তে অনেকেই ব্যস্ত ফেলে আসা দিনগুলোর হিসেবটা মিলিয়ে নিতে। সেখানে আছে দুঃখ ও আনন্দের নানা অনুভূতি। নতুন শুরুর প্রারমেভ সেইসব অনুভূতিরা থাকবে প্রেরণায়। তেমনি বিনোদনের অঙ্গন শোবিজেও একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক অতীতে। যেখান থেকে নতুন শিক্ষা নিয়ে, নতুন প্রেরণা নিয়ে, ভুলগুলো শোধরে নিয়ে সমৃদ্ধির দিকে হাঁটকে ইন্ডাস্ট্রি। ২০১৭ সালে শোবিজে ঘটে যাওয়া সেরা কিছু ঘটনা নিয়ে এই আয়োজন

প্রিয়জন হারানোর বছর
প্রথমেই উল্লেখ করতে হবে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাকের মৃত্যুর কথা। এই বছরই চলচ্চিত্রের অঘোষিত পিতা রাজ্জাক পাড়ি দিয়েছেন পরপারে। ২০১৭ সালে আরও হারাতে হয়েছে অভিনেতা নাজমুল হুদা বাচ্চু, মিজু আহমেদ, সংগীতের তিন দিকপাল লাকী আখন্দ, আব্দুল জব্বার ও বারী সিদ্দিকী এবং নন্দিত উপস্থাপক ও ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হককে।

শিল্পী সমিতির নির্বাচন
বছরের ৫ মে অনুষ্ঠিত হয় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। শাকিব খানের নির্বাচনে আসা নিয়ে নাটক, ফারুক, কবরী, সোহেল রানা, আলমগীরসহ সিনিয়র শিল্পীদের সমর্থনে তারকাবহুল মিশা-জায়েদ প্যানেল গড়ে ওঠায় বছরের শুরু থেকেই আলোচনায় ছিলো ঢাকাই চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। নির্বাচনে মিশা-জায়েদ প্যানেলে জয় হয়।

যৌথ প্রযোজনা নিয়ে আন্দোলন
গেল কয়েক বছরে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা দিন দিন বেড়েই চলছিলো। ছিলো না কোনো নিয়ম নীতির বালাই। এইসব অনিয়মের মুখে হুমকিতে পড়ে দেশীয় নির্মাণ ও সিনেমা। বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নামে চলচ্চিত্রের শিল্পী-কলাকুশলীরা। চলচ্চিত্রের ১৬টি সংগঠনকে নিয়ে চিত্রনায়ক ফারুককে আহ্বায়ক করে গঠিত হয় চলচ্চিত্র পরিবার। সেই পরিবারের আন্দোলনের বিপক্ষে প্রকাশ্যেই অবস্থান নেয় জাজ মাল্টিমিডিয়া ও পরিচালক এবং শিল্পী সমিতির নির্বাচনে পরাজিত হওয়া অনেক নেতৃবৃন্দ। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শাকিব খান, ওমর সানি, মৌসুমী, অমিত হাসান, কাজী হায়াত, জাকির হোসেন রাজু প্রমুখ। ঘটনার পরিক্রমায় চলচ্চিত্রে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয় শাকিব ও জাজের প্রধান আব্দুল আজিজকে। শেষ পর্যন্ত শাকিবের নিষেধাজ্ঞা কাটলেও আজিজ রয়ে গেছেন শাস্তির মুখেই। সেইসঙ্গে আন্দোলনের চাপে যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা সংশোধনের সিদ্ধান্তও নেয় সরকার। লাগামে টান পড়ে যৌথৈ প্রযোজনার নামে যৌথ প্রতারণার সিনেমায়।

শাকিবকে হামলার অভিযোগ দুই নায়কের বিরুদ্ধে
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়েছে। সেদিন রাতে ভোট গণনার সময় কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন শাকিব খান। সে নিয়ে আপত্তি তুলে মিশা-জায়েদ প্যানেলের নেতাকর্মীরা। তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে শাকিবকে ধাওয়া করেন ওই প্যানেলের নেতাকর্মীরা। পরদিন শাকিব তার উপর হামলা ও ধাওয়া করার অভিযোগ এনে থানায় অভিযোগ করেন তার দুই সহশিল্পী জায়েদ খান ও সাইমন সাদিকসহ আরও তিনজনের নামে। তিন নায়কের দ্বনেদ্ব জড়ানোর খবরটি বেশ আলোচনায় আসে। তবে বছরের শেষদিকে আদালত এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে শাকিবের অভিযোগের কোনো সত্যতা না পেয়ে।

ডিরেক্টরস গিল্ড নির্বাচন
২০১৬ সালে ছোট পর্দায় নাটক, টেলিফিল্মে তেমন কোনো বৈচিত্র্য পাওয়া যায়নি। তবে বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল টিভি মালিক, পরিচালক ও কলাকুশলীদের নানা আন্দোলন। উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে ছিল ডিরেক্টরস গিল্ড নির্বাচন। ২২ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় টেলিভিশন নাট্য নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের প্রথম নির্বাচন। সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন গাজী রাকায়েত এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন এসএ হক অলিক। আলোচনা-সমালোচনায় অংশ নেন সিনিয়র-জুনিয়র নির্মাতারা।

২০ বছর পর মুখ খুললেন সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান ঢাকাই ছবির অমর নায়ক খ্যাত সালমান শাহ। মৃত্যুর পর থেকেই তার পরিবার দাবি করে আসছিলো ভয়ানক পরিকল্পনায় খুন করা হয়েছে সালমানকে। এই খুনের জন্য আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ডনসহ দায়ি করা হয় সালমানের স্ত্রী সামিরা ও তার পরিবারকে। এ নিয়ে গেল ২০ বছর ধরেই পুত্র খুনের পক্ষে অনেক কথা বলে আসছিলেন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। তবে উল্লেখ করার মতো কোনো প্রমাণ তিনি পুলিশকে দিতে পারেননি। এজন্য বেশ কয়েকবার তদন্ত শেষে সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলেই সিদ্ধান্ত দিয়েছে বিভিন্ন তদন্ত বিভাগ।

তবে নীলা চৌধুরী আপীল করে করে পুত্র খুনের সঠিক তদন্ত হচ্ছে না বলে দাবি করে আসছেন। তিনি প্রায় সময়ই অভিযোগ করতেন সালমানের খুনী বলেই তার সাবেক স্ত্রী সামিরা ও তার পরিবার এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথা বলে না ধরা পড়ে যাবার ভয়ে। এরইমধ্যে সেপ্টেম্বরে ফেসবুক লাইভে এসে সামিরাকে সরাসরি খুনী বলে অভিহিত করে নতুন আলোচনার জন্ম দেন সালমান খুনের ৭ নম্বর আসামি আমেরিকা প্রবাসী রুবি।

তার কথার প্রেক্ষিতে অবশেষে চলতি বছরেই গণমাধ্যমে মুখ খুলেন সামিরা। জাগো নিউজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি ২০ বছর ধরে তাকে অভিযুক্ত করে নানা কথার জবাব দিয়ে সালমানের মায়ের বিপক্ষে নানা তথ্য তুলে ধরেন। সেইসব তথ্য চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে চলচ্চিত্রপাড়ায় এবং সালমান ভক্তদের মনে। সালমান খুনের মামলাটি নতুন করে তদন্ত করছে পিবিআই।

প্রকাশ্যে অপু
চলতি বছর ঢালিউডে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার মধ্যমণি ছিলেন নায়িকা অপু বিশ্বাস। গত বছরের মার্চ থেকে তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। বেশকিছু ছবি অসমাপ্ত রেখেই তার অন্তর্ধান হয়। এ নিয়ে নানা মুখরোচক গল্পও ডালপালা মেলতে থাকে। ফিরে এসেছেন চলতি বছরের ১০ এপ্রিল। প্রকাশ্যে এসে জানিয়েছেন, শাকিব খান তাকে বিয়ে করে ২০০৮ সালে। সেই সংসারে তাদের এক পুত্র রয়েছে, নাম আব্রাম খান জয়।

ডিভোর্সে উত্তাল শোবিজ
চলতি বছরে বেশকিছু ডিভোর্সে উত্তাল ছিলো শোবিজ। এবারে ঘর ভেঙেছে হাবিব ওয়াহিদ, তাহসান-মিথিলা, স্পর্শিয়া, নোভাসহ আরও কয়েকজন তারকার। আর প্রায় তিন বছর ধরেই নিজের বিচ্ছেদের কথা গোপন রেখেছিলেন লাক্স তারকা আজমেরি হক বাঁধন, সেটিও প্রকাশ হয় চলতি বছরে। এর আগে বেশ কয়েকবার বাঁধনের ঘর ভাঙনের খবর শোনা গেলেও বরাবরই বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন এ অভিনেত্রী। তবে চলতি বছরে বাঁধনের স্বামী মাশরুর সিদ্দিকী সনেট মুখ খুলেছেন গণমাধ্যমে। ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর তাদের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ হয় বলে জানান তিনি। সে সূত্র ধরে তাদের একমাত্র মেয়েকে নিয়ে মামলায় জড়ান এ দম্পতি।

বছরের শেষদিকে এসে অপুকে ডিভোর্স নোটিশ পাঠিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দেন শাকিব খান। চলছে ৯০ দিনের অপেক্ষা। দুই তারকা আপোষে না এলে সরকারি নিয়মেই বিচ্ছেদ হয়ে যাবে শাকিব-অপুর সংসার জীবনের।

মডেলদের আত্মহত্যা
এ বছর মডেল অভিনেত্রীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা গেছে বেশি। সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত ও একটি সিনেমার আইটেম গানে পারফর্ম করা মডেল জ্যাকলিন মিথিলা আত্মহত্যা করেছেন এ বছর। তাছাড়া একজন আরজে ও আরেকজন স্বল্প পরিচিত মডেলও আত্মহত্যা করেছেন। অতঃপর বছরের শেষের দিকে আত্মহত্যা করেন র্যাম্প মডেল রিসিলা বিনতে ওয়াজের। সঙ্গীত পরিচালক, মাইলস ব্যান্ডের কি-বোর্ডিস্ট মানাম আহমেদের বড় ছেলে জাহিন আহমেদও আত্মহত্যা করেন এ বছর। তিনি নিজেও এই প্রজন্মের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড ম্যাকানিক্সের গিটারিস্ট ছিলেন।

অনন্ত জলিলের ধর্ম প্রচার
চলতি বছর ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করে বেশ আলোচিত হন চিত্রনায়ক ও প্রযোজক অনন্ত জলিল। শুধু দেশে নয়, বিদেশে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সেখানেও ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন তিনি। পাশাপাশি স্ত্রী বর্ষার গর্ভে দ্বিতীয় পুত্রসন্তান লাভ করেও বছর জুড়েই আলোচনায় ছিলেন তিনি।

রিয়াজুল রিজু
‘বাপজানের বায়স্কোপ’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করে রীতিমত আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তরুণ নির্মাতা রিয়াজুল রিজু। চলচ্চিত্রের জন্য দেশের সর্বোচ্চ সম্মান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে বাজিমাত করেছেন এই তরুণ তুর্কি।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জিতে নিয়েছেন সেরা পরিচালকের পুরস্কার। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে তিন তিনটি পুরস্কার বগলদাবা করেছেন রিজু একাই। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে জাতীয় পর্যায়ের এই সম্মাননা গ্রহণ করেছেন তিনি।

এলএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।