ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখর নরসিংদীর বাবুরহাট


প্রকাশিত: ০৪:০৬ এএম, ১৩ জুলাই ২০১৫

নরসিংদীর বাবুরহাটের পরিচিতি দেশজোড়া। প্রতিবারের মতো এবারও ঈদের আমেজ আর বেচাকেনার ব্যস্ততায় বাবুরহাটের পরিবেশ সরগরম। রমজানের শুরুর দিকে বিক্রি নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও শেষ মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের মুখে ফুটে উঠেছে তৃপ্তির ছাঁপ।

বাজারের ব্যবসায়ীরা জানায়, নরসিংদী শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে সদর উপজেলার শীলমান্দি ইউনিয়নে অবস্থিত দেশের অন্যতম প্রধান পাইকারি কাপড়ের বাজার বাবুরহাট। ১৯৩৪ সালে জমিদার হলধর সাহা প্রায় ১১ একর জমির উপর হাটটি প্রতিষ্ঠা করে। অল্প সময়ের মধ্যেই বাবুরহাট দেশব্যাপি খ্যাতি অর্জন করে।

বর্তমানে এ হাটে ৫ হাজারেরও অধিক দোকান আছে। এক সময় কেবল রোববারে হাট বসত। এখন সপ্তাহে দুইদিন শুক্র ও শনিবার হাট বসে। তবে ঈদ সামনে রেখে পুরো সপ্তাহ জুড়েই চলছে কেনাবেচা। এখানে বিক্রি হওয়া থান কাপড়, পপলিন কাপড়, ভয়েল কাপড়, সুতি, শাড়ি, লুঙ্গি ও থ্রী-পিছ উৎপন্ন হয় স্থানীয় তাঁত ও সহায়ক শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে।

একই সঙ্গে অন্যান্য স্থান থেকে উৎপাদিত নাইট কুইন, দেশি জর্জেট, লেজার জর্জেট, জাপানি সিল্ক, টাঙ্গাইলের শাড়ি, জামদানি, কাতানসহ বিভিন্ন প্রকারের কাপড়ের সম্ভারে বাবুরহাট এখন বৈচিত্রময়। হাট থেকে কেনা কাপড় চলে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, খুলনা, বগুড়া, হবিগঞ্জসহ দেশের প্রায় সব জেলায়। এই হাট ঘিরে নরসিংদী জেলাসহ নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে গড়ে উঠেছে কয়েক লাখ তাঁতকল।

norsingdi

সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা ভিড় জমিয়েছে বাবুরহাটে। ফলে হাটের সরু গলিগুলোতে সারাক্ষণ ভীড় লেগেই রয়েছে। হাটের দোকানগুলোতে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন প্রকারের কাপড়। পাইকারি ক্রেতারা রঙ ও ডিজাইন দেখে পছন্দমত কাপড় আলাদাভাবে জড়ো করছেন। ক্রেতা-বিক্রেতাদের যুক্তি তর্কে মিলছে বিকিকিনির সমাধান।

এক যুগ ধরে বাবুরহাটে আসছেন হবিগঞ্জের কাপড় ব্যবসায়ী সাজু মিয়া। তিনি বলেন, নিরাপদ পরিবেশ ও এক স্থানে সকল কাপড় পাওয়া যাওয়ায় আমরা এই হাটে আসি। এখান থেকে কাপড় নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত ব্যবসা করছি। এবারের ঈদের মৌসুমও তার ব্যতিক্রম নয়। রোজার প্রথম দিকে নেওয়া চালানের কাপড় প্রায় শেষ কিন্তু ঈদের এখনো বাকী। তাই আবার কাপড় কিনতে হাটে এসেছি।

কাপড় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সাশ্রয়ী মূল্যে কাপড় কিনতে হাটে ভিড় করছে সাধারণ ক্রেতারাও। ঢাকার বাসাবো থেকে আসা গৃহবধূ মেহনাজ বেগম বলেন, ঈদে নিজের পরিবার ও স্বজনদের জন্য অনেক কাপড়ের প্রয়োজন হয়। গত কয়েক বছর ধরে আমি বাবুরহাটে ঈদের কেনাকাটা করছি। এক স্থানে অনেক প্রকারের কাপড় পাওয়া যাওয়ায় সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হয়।

দেশের নামি দামি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঈদের মৌসুমে বাবুরহাটের ব্যবসায়ীরাও কাপড়ে এনেছেন আধুনিকতার আঙ্গিক। জে এম ক্লাসিক ফ্যাশনের ফ্যাশন ডিজাইনার শেখ সাদী বলেন, এবারের ঈদে আমরা উজ্জ্বল রঙকে প্রাধান্য দিয়ে থ্রী পিছ, পাঞ্জাবি ও শাড়িতে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করেছি। এ সকল পোশাকে আমাদের নিজস্ব উৎপাদিত ফ্রেবিক্স ব্যবহার করেছি যা গুণগত মান সমৃদ্ধ ও আরামদায়ক।

রমজানের প্রথম থেকে শুরু হওয়া ঈদের বিকিকিনি শেষ পর্যায়ে চলে আসায় পাইকারি ক্রেতা বেশি থাকলেও অধিকাংশ দোকানেই কমে গেছে কাঁপড়ের পরিমাণ। রমজানের শুরুর দিকে বেচা-বিক্রি কম হলেও ঈদের আগে বিক্রি বাড়ায় খুশি ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ী দিলীপ সাহা বলেন, এবারের ঈদে কিরণ মালা, জারা গোল্ড ও মাছরাঙ্গা থ্রী-পিছের চাহিদা বেশি। বাজারে পাইকারি ব্যবসায়ীর আগমন বেশ তাই বিক্রিও ভাল হচ্ছে।

ঈদ উৎসবে অন্যান্য পোশাকের সঙ্গে চাই নতুন লুঙ্গী। তাই অন্যান্য বছরের মতো এবারও ঈদে লুঙ্গির ভাল বিকিকিনি হচ্ছে। পাকিজা লুঙ্গি কালেকশনের ব্যবস্থাপক মেরাজুল হক বলেন, ক্রেতাদের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে আমরা লুঙ্গীতে নতুনত্ব এনেছি। যা ৩৩০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এদের মধ্যে বাটিক ও হুইপ জ্যাকেট লুঙ্গীর ভাল সাড়া পাওয়া গেছে।

norsingdi

বাবুরহাট মানে কাপড়ের ভাজে ভাজে রঙের গন্ধ। বেশি ক্রেতা বেশি বিক্রি। তবে এবারের ঈদ বাজার নিয়ে সন্তুষ্ট নয় ব্যবসায়ীরা।

জজ ভূঞা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার ফায়জুর রহমান ভূঞা জুয়েল বলেন, এবার সুতার দাম কম হওয়ায় ঈদ বাজারের কাপড়ের দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। মূলত ঈদকে সামনে রেখে ৩ মাস ধরে চলে বাবুরহাটের বেচাকেনা। এবার রোজার মধ্যে ভাল বেচাকেনা হলেও শুরুতে ততটা হয়নি। এতে করে আমাদের ঈদের লক্ষমাত্রা পূরণে ঘাটতি থাকতে পারে।

নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, শিল্প এলাকা নরসিংদীর হৃদপিণ্ড হলো বাবুরহাটই। পুরো জেলার ব্যবসায়ীরাই তাকিয়ে রয়েছে বাবুহাটের ঈদ বেচাকেনার দিকে। কারণ বেচাকেনা ভাল হলেই ভাল থাকবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত জেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষ।

এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।