শুয়া চান পাখিকে আর ডাকবেন না তিনি

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:১৬ এএম, ২৪ নভেম্বর ২০১৭

‘শুয়া চান পাখি আমার/আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’। শুয়া চান পাখি নয়, ঘুমিয়েছেন বারী সিদ্দিকী। শুয়া চান পাখিকে আর দরদভরা কণ্ঠে ডাকবেন না তিনি। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মাত্র ৬৩ বছর বয়সে চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে গেছেন জনপ্রিয় এ সঙ্গীত শিল্পী।

‘এই পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে/সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে’- নিজের গাওয়া এ গানের মতোই অগণিত ভক্ত-অনুরাগীদের কাঁদিয়ে চলে গেলেন তিনি। গান দিয়ে সমানভাবে সকল প্রজন্মকে তিনি যেভাবে গভীর করে ছুঁয়ে দিয়েছেন; তার মৃত্যুও তেমন গভীর করে ছুঁয়ে গেছে ভক্তদের মনে।

বারী সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলায় এক সঙ্গীতজ্ঞ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম আবদুল বারী সিদ্দিকী। শৈশবে পরিবারের কাছে গান শেখায় হাতেখড়ি হয়। মাত্র ১২ বছর বয়সেই নেত্রকোনার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষ সহ অসংখ্য গুণীশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন।

ওস্তাদ আমিনুর রহমান একটি কনসার্টের সময় বারি সিদ্দিকীকে অবলোকন করেন এবং তাকে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন। পরবর্তী ছয় বছর ধরে তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন। সত্তরের দশকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাথে যুক্ত হন। ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ক্লাসিক্যাল মিউজিকে পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন ও বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সাথে ক্লাসিক মিউজিকের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন।

বংশী বাদক বারী সিদ্দিকী কথাসাহিত্যিক ও চিত্রনির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের প্রেরণায় নব্বইয়ের দশকে সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন এবং অল্পদিনেই বিরহ-বিচ্ছেদের মর্মভেদী গনের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নেন। এক সাক্ষাৎকারে সিদ্দিকী বলেছিলেন, 'হুমায়ূন আহমেদ আমার গাওয়ার পেছনে যথেষ্ট উত্সাহ দিয়েছিলেন। মূলত তার সাহস নিয়েই সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস পেয়েছি।'১৯৯৫ সালে বারী সিদ্দিকী প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘রঙের বাড়ই’ নামের একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে জনসমক্ষে প্রথম সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এরপর ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত শ্রাবণ মেঘের দিন চলচ্চিত্রে ৭টি গানে কণ্ঠ দেন। এর মধ্যে ‘শুয়া চান পাখি’ গানটির জন্য তিনি অতিদ্রুত ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ১৯৯৯ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেন। বারী সিদ্দিকী বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ও গানের কথা লিখেছেন। ২০১৩ সালে সিদ্দিকী ফেরারী অমিতের রচনা ও পরিচালনায় পাগলা ঘোড়া নাটকে প্রথমবারের মত অভিনয় করেন।

তার জনপ্রিয় হওয়া গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘শুয়া চান পাখি আমার/আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’, ‘পূবালি বাতাসে’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’।

একটি বিখ্যাত গানে বারী সিদ্দিকী গেয়েছিলেন ‘রজনী হইস না অবসান/আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচাঁন।’ আর কোন নিশিতে বারী সিদ্দিকী দেখা না মিললেও এই উপমহাদেশের অগণিত ভক্ত-অনুরাগীদের মাঝে প্রতি নিশি বেঁচে থাকবেন বারী সিদ্দিকী।

এনই/এআরএস/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।