সঙ্কট নিয়েই চলছে খুলনার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো
খুলনার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো থেকে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না জনগণ। চিকিৎসকসহ বিভিন্ন চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সঙ্কটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। তবে আগের তুলনায় এখন চিকিৎসক সঙ্কট মোটামুটি কমে এসেছে। এদিকে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগীদের ছুটতে হচ্ছে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে নেই পর্যাপ্ত ওষুধ ও জনবল।
খুলনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর সবকটি এক্সরে মেশিন দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট ছিল। সম্প্রতি এসব এক্সরে মেশিন মেরামতের জন্য টেন্ডার দেয়া হয়েছে। মেশিনগুলো মেরামতে কাজ চলছে। কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্সরে মেশিনটি এখনও দরপত্র হয়নি বলে জানিয়েছে সিভিল সার্জন অফিস।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, খুলনার উপজেলা পর্যায়ে এখনো চিকিৎসক সংকট আছে। তবে তা আগের মত নয়। বর্তমানে দাকোপ উপজেলায় প্রথম শ্রেণির ডাক্তার সংকট রয়েছে ৩ জন, বটিয়াঘাটায় ২ জন, তেরখাদা উপজেলায় ৪ জন, দিঘলিয়ায় ১ জন, ডুমুরিয়ায় ১ জন, পাইকগাছায় ১০ জন ও কয়রায় ৬ জন। ১৮২ পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ২৯টি। ২য় শ্রেণির নার্সিং সুপারভাইজার ও সিনিয়ার স্টাফ নার্স পদে মোট ১২০ পদের মধ্যে ২৭টি পদ ফাঁকা। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি মিলে প্রায় সাড়ে ৫শ’ পদ শূন্য রয়েছে। এ অবস্থায় চিকিৎসা সেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি করেছে রোগীরা।
কয়রা থেকে খুলনায় চিকিৎসা নিতে আসা শামীমা নাসরিন বলেন, কয়রা উপজেলায় যে হাসপাতাল রয়েছে সেখানে মানসম্মত চিকিৎসা পাওয়া যায় না। সময়মত ডাক্তার পাওয়া যায় না। নার্সরা রোগীদের সাথে ভাল ব্যবহার করেন না। যে কারণে বাধ্য হয়ে চিকিৎসা নিতে আসতে হয় জেলা সদরে।
পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ফাহমিদা মানসুর এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এখানে ডাক্তাররা আসেন অনিয়মিত। অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ডাক্তার পাওয়া যায় না। ডাক্তার না থাকলে নার্সরাই তখন চিকিসা দেন। একটি উপজেলায় একটি হাসপাতালের কারণে রোগীর ভিড় থাকে বেশি। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদেরও দুর্ভোগে পড়তে হয়।
এদিকে সেবার পাশাপাশি ঘাটতি থাকে সরকারি ওষুধেও। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর বহির্বিভাগে রোগীদের দেয়া ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করার কথা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা পায় না। এছাড়া অবকাঠামোগত সমস্যা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, চিকিৎসা উপকরণ ও পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মচারী না থাকায় কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হয় এখানকার জনগণ।
এসব কমপ্লেক্সে মা ও শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সেবা অপ্রতুল। চালু করা হয়নি টেলিমেডিসিন ব্যবস্থাও। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর বাজেট বৃদ্ধি করে জনবল সংকট দূরীকরণ ও মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছেন এসব এলাকার সুধীজনেরা।
তবে এসব সংকট নিরসনে চেষ্টা চলছে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. মো. ইয়াসিন আলী সরদার। তিনি বলেন, খুলনার এই হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন হাজারেরও বেশি সাধারণ রোগী। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতেও অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসক সংকট এখন অনেকটাই কমে গেছে। সবগুলো ক্লিনিক থেকে মানসম্মত সেবা যাতে জনগণ পায় সেজন্য চেষ্টা চলছে।
এসএস/আরআইপি