ফিল্মে এখন ফিল্ম না বোঝা মানুষ বেশি : ডিপজল

নাহিয়ান ইমন
নাহিয়ান ইমন নাহিয়ান ইমন , বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৪২ এএম, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

অভিনেতা, প্রযোজক এবং ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন ডিপজল। ফাহিম শুটিং স্পট, এশিয়া ও পর্বত সিনেমা হল, জোবেদা ফিল্মস, পর্বত পিকচার্স-২, ডিপজল ট্রান্সপোর্ট ও ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী তিনি। তার মুক্তিপ্রাপ্ত সবশেষে চলচ্চিত্র ‘দুলাভাই জিন্দাবাদ’। এছাড়া তার প্রযোজিত ‌‘এক কোটি টাকা’ ছবিটি নির্মাণাধীন। টানা ৫১ দিন সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা নিয়ে গেল ৯ নভেম্বর দেশে ফিরেছেন ডিপজল। জাগো নিউজের সঙ্গে সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন তার শারীরিক সুস্থতা ও সাম্প্রতিক চলচ্চিত্র ভাবনা নিয়ে-

এখন কেমন আছেন?
সবার দোয়ায় ভালো আছি। আপাতত ডাক্তার যেভাবে বলেছে সেভাবে চলছি। শুটিংয়ে বাধা নেই। আবার ২৫ ডিসেম্বর চেকআপের জন্য সিঙ্গাপুর যাবো। সেখান থেকে ফিরে ৫ জানুয়ারি থেকে ‘এক কোটি টাকা’ ছবির শুটিং শুরু করবো।

চলচ্চিত্রের বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনার মতামত...
ফিল্ম কিভাবে চলবে, ফিল্ম কিভাবে আসবে, ফিল্মের দর্শক কিভাবে সিনেমা হলে আসবে এ বিষয়ে কারো ধারণাই নেই। ফিল্মে এখন ফিল্ম না বোঝা মানুষ বেশি। টাকা আছে সিনেমা করছে, দিন চলে যাচ্ছে। কোনো কিছুই আসে না। না টাকা, না সিনেমার সুনাম। নাটক এক জিনিস, ফিল্ম আরেক জিনিস। তাছাড়া তরুণরা ঠিকমতো চলতে পারছে না। তাদের নির্দেশনা দেয়ার মতো পাশে কেউ থাকছে না।

আপনি বলছেন তরুণরা ফিল্ম না বুঝে আসার কারণে ইন্ডাস্ট্রি পিছিয়ে যাচ্ছে। একটা সময় চলচ্চিত্রে সবাই মিলেমিশে থেকেছেন। এখন এই পরিবারের মাঝে ভাগ হয়েছে। কিভাবে দেখছেন বিষয়টি?
ফিল্মে ইজ্জত দেয়ার অভ্যাস কমে যাইতাছে। মানুষ সিনেমারে ইজ্জত দেয় না, সিনেমার মানুষদেরও ইজ্জত দেয় না। আমরা নিজেরাই নিজেদের ইজ্জত দেয়া ছাইড়া দিছি। সব চলতাছে যার যেমন মন চায় তেমন। আগে যখন কক্সবাজার যেতাম সেখানে যদি দশ গ্রুপ থাকতো দশটা পার্টি হতো। জসীম ভাইরা শুটিং করলে আমাদের ডাকতো, আমরা জসীম ভাইদের ডাকতাম। সিনিয়রদের খুব ইজ্জত করতাম। এই বিষয়টা এখন আর নেই। আমরাই কিছু শেখাতে পারছি না। আমরা এখনো কাজ করতে গেলে ডাইরেক্টর দেখলে ইজ্জত দেই। সিনিয়র হোক আর জুনিয়র হোক ওর কাজটাই ফলো করি ও কী চাচ্ছে। সিনেমার পরিচালক জুনিয়র হইলেও ইজ্জতের লোক।

সে যেটা চাচ্ছে তার চেয়ে বেটার করার চেষ্টা করি। ওরে যদি আমি বলতে যাই তাহলে কাজটা মন মতো করতে পারবে না। এখন তো শুনি নায়করা সিনিয়র পরিচালকের সাথেই ভাব লয়। এগুলা করলে শিল্পী হওন যায় না। শিল্পীকে নরম থাকতে হয়। আপনি যত বড় লোকই হন, ক্যামেরা চালু হইলে আপনি শুধু শিল্পী।

এখন যে গ্রুপিং হচ্ছে এটা সামনে থেকে মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন না কেন?
এখন এটা হবে না। কারণ সিনেমা হল মালিক হয়ে গেছে এক গ্রুপ, আর ছবির মালিক হয়ে গেছে এক গ্রুপ। এখন সরকার ঘোষণা দিয়েছে হল করবে। আমিও সিনেমা হলে ১০০ মেশিন দিব বলেছি। কিন্তু ওগুলাতো আমার চালানো সম্ভব না। আমার অন্য ব্যবসা বাণিজ্য আছে। আমি সিনেমায় অভিনয় করি, করবো মরার আগ দিন পর্যন্ত। অভিনয় ছাইড়া চইলা যাবো এইটা আমি বলতে পারবো না। সরকার হল দিবে বলেছে তাও ছয় মাস হয়ে গেল।

সরকার ৫০টা দিলে আমিও ৫০টা দিব। বাংলাদেশে ১০০ সিনেমা হল হইলে ছবি চলা সম্ভব। এগুলো সঠিকভাবে দেখাশুনা করতে হবে। আর ঝামেলা মেটানোর জন্য একটা উদ্যোগ নেওয়া হইছে। সামনে মিটিং আছে, দেখা যাক কী হয়। যদি মেনে নেয় সবাই তাহলে ভালো হবে সবার।

ভারতীয় বাংলা ছবি এসে আমাদের হলগুলোতে প্রভাব বিস্তার করছে। এই বিষয়টা কিভাবে দেখেন?
ভারতে সবগুলো ছবি এখানে চললে আমাদের একটুও ক্ষতি হবে না। ওদের সংস্কৃতি আমাদের সংস্কৃতি এক না। বেদের মেয়ে জোৎস্না ওরা বানাইলে চলবে না। একটা গ্রুপ সিনেমা হল ব্লক করে রাখছে, সিনেমা রিলিজ করতে দেয় না। এটার একটা সমাধান করা উচিত। সরকার বছরে একটা পুরস্কার দেয় জাতীয় পুরস্কার, সেটারও অনেক দোষের কথা শুনি। সরকারের যারা এটা নিয়ন্ত্রণ করে তাদের মাথা ঘামাতে হবে যাতে যোগ্য লোকের হাতে পুরস্কার ওঠে।

আসলে চলচ্চিত্র বাঁচাতে সরকারকেই ভাবতে হবে, আমরা ভাবলে হবে না। আমি পারি অনেককিছু করতে কিন্তু ঝগড়াঝাঁটি হবে। কেউ চায় না ঝগড়াঝাঁটি করতে। তথ্যমন্ত্রীর উচিৎ সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা। আমার একটা ছবি তের বছর ব্যান করা। অনেক ছবিতো সেন্সর ছাড়াই চলছে। কেন?

আমার ছবি সেন্সরে দেন আর বাইরের ছবি সেন্সর ছাড়া রিলিজ হয়ে যাবে কীভাবে? সম্ভব বাংলাদেশে। ক্ষমতার পূজা করা যদি বন্ধ হতো তাহলে সুন্দর পরিবেশ হতো। ভারতের ছবির চেয়ে আমাদের ছবি আগে ভালো চলতো। এখন নাটক ভালো চলে। তথ্য মন্ত্রণালয় যদি একটু নজর দিতো পরিবেশটা খুব সুন্দর হতো। ভারতের সিনেমা মেজর সমস্যা না।

বর্তমানে আমাদের দেশের বেশিরভাগ শুটিং দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। দেশের ভেতরে যাও হচ্ছে সেখানে দেখা যায় বাইরের লোকজন ওয়ার্ক পারমিট না নিয়েই কাজ করছে। এ বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?
এতে আমাদের টেকনিশিয়ানরা না খেয়ে মরছে। বাইরে থেকে এসে কাজ করছে আমাদের টেকনিশিয়ানরা মাইর খাচ্ছে। বাইরের যারা কাজ করছে ওরা কি আহামরি কিছু বুঝে? ওরা কীভাবে এসে বাংলাদেশে কাজ করছে? অবশ্যই আমাদের দেশে ভালো ভালো টেকনিশিয়ান আছে। তারা খুবই ফাস্ট কাজও করে দ্রুত। বিদেশ থেকে এসে ওয়ার্কপারমিট ছাড়া কাজ করছে এটা সরকারের ব্যর্থতা।

এনই/এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।