বৈষম্যের সাফটায় সিনেমা আমদানি চলছেই
থামছেই না দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (সাফটা) আওতায় কলকাতার ছবি আমদানির প্রক্রিয়া। চরম বৈষম্যের মধ্য দিয়েই আসছে ছবিগুলো, মুক্তি পাচ্ছে সারাদেশের সিনেমা হলগুলোতে। কোনঠাসা হচ্ছে দেশীয় সিনেমার বাজার। বারবার এই বিষয়ে আন্দোলনে নেমেছেন চলচ্চিত্রের মানুষেরা। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না। বরং দিন দিন বাড়ছেই বিদেশি ছবি আমদানির আধিক্য।
খুব বেশি দিনের কথা নয়। চলতি বছরের মে মাসে মুক্তি পেয়েছিলো বহুল প্রতিক্ষীত ছবি ‘পরবাসিনী’। স্বপন আহমেদ পরিচালিত ওই ছবিটির মুক্তির সময় কলকাতা থেকে আমদানি করে মুক্তি দেয়া হয়েছিলো ‘ওয়ান’ নামের একটি ছবি। ওই ছবিটির সামনে হল বঞ্চিত ছিলো দেশীয় সিনেমাটি। ক্ষোভ আর অভিমান মনে নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে কেঁদেছিলেন পরিচালক স্বপন আহমেদ। তবুও টনক নড়েনি কারও, গলেনি কর্তাব্যক্তিদের মন। নমনীয় হননি বিদেশি ছবি আমদানি করা সিনেমা ব্যবসায়ীরাও।
দেশের সিনেমা চলে না বলে অপপ্রচার চালিয়ে কলকাতার ছবির বাজার তৈরি করা হচ্ছে বাংলাদেশে। অথচ, একটি ছবিও এখানে ব্যবসা করতে পারছে না। প্রসেনজিৎ, দেব, জিৎ, সোহম, অঙ্কুশ, কোয়েল, শ্রাবন্তী, শুভশ্রীসহ কলকাতার সুপারস্টারদের বিগ বাজেটের সুপারহিট ছবিগুলোও এপারে এসে লোকসানের মুখে পড়ছে। তবু কেন সাফটা চুক্তিতে কলকাতার ছবি আনা হচ্ছে সেই প্রশ্নের উত্তর মেলে না।
পাশাপাশি সাফটা চুক্তিতে সাফটা চুক্তিতে কেবলই কলকাতার ছবিগুলো আনা হচ্ছে কেন? বলিউড কিংবা সাফটা চুক্তিবদ্ধ অন্য দেশগুলোর ছবি কেন মুক্তি দেয়া হয় না? সাফটা তো কেবল কলকাতার সঙ্গেই সীমাবদ্ধ নয়, তবে অন্য দেশের বা ভারতের অন্য প্রদেশের ছবিগুলো কেন আসছে না? অনেকেই দাবি করেন, এটি হতে পারে গভীর ষড়যন্ত্রের নীল নকশা। এভাবে দিনে দিনে কলকাতার ছবি দিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে দেশীয় সিনেমাকে।
ভাষা ও সংস্কৃতিতে মিল থাকায় এই দেশের ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংসে কলকাতার ছবিকেই বেছে নেয়া হয়েছে। হল দখলে সাফটায় আমদানি করা ওপারের বাংলা ছবিগুলো এগিয়ে থাকায় দেশীয় নির্মাতারা হল না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন। তারা ছবি নির্মাণে উৎসাহ হারাচ্ছেন। একটা সময় ফাঁকা মাঠেই চলবে কলকাতার সিনেমার রাজত্ব।
পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, চলচ্চিত্রের নানা সংকট ও সমস্যা সমাধানে আন্তুরিক থাকলেও সাফটার আওতায় ছবি আমদানি রোধ করতে খুব একটা সক্রিয় দেখা যায় না চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সমিতি ও নেতাবৃন্দদের। এই বিষয়ে বারবার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও যথেষ্ট আন্তরিক নন। সাফটা চুক্তিতে সিনেমা আমদানির ব্যাপারে বিভিন্ন সম্মেলনে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তার উত্তর ছিলো, ‘এই সাফটা চুক্তির সঙ্গে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও জড়িত। তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে এর সুরাহা করতে হবে।’ কিন্তু সেই বসা আজও হয়নি, দেশীয় ছবির প্রযোজক ও নির্মাতারাও পাচ্ছেন না প্রতিকার।
এদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সাফটা চুক্তির নিয়ম রক্ষা করতে একটি ছবি আমদানির বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকেও একটি ছবি কলকাতায় পাঠানো হচ্ছে। চলচ্চিত্রপাড়ার মানুষদের দাবি, এটি কেবলই একটি আইওয়াশ। কলকাতায় যেসব ছবি পাঠানো হচ্ছে তার অধিকাংশই তৃতীয় সারির সিনেমা। যা বিদেশের বাজারে ঢাকাই সিনেমার নেতিবাচক প্রচার করছে।
সেইসঙ্গে ঢাকা থেকে যাওয়া ছবিগুলো না পায় হলের আতিথ্য না পায় কোনো রকম প্রচারণা। অথচ, কলকাতার ছবিগুলো এনে প্রায় শতাধিক হলে মুক্তি দেয়া হয়। বাজানো হয় প্রচার ঢোল।
এদিকে সাফটার আওতায় ছবি মুক্তির ধারাবাহিকতায় নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে অঙ্কুশ হাজরা ও নুসরাত জাহান অভিনীত ‘বলো দুগ্গা মাঈকি’ ছবিটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। ছবিটি আনছে ‘তিতাস কথাচিত্র’। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আবুল কালাম আজাদ বাংলাদেশে ‘বলো দুগ্গা মাঈকি’র মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মানুষদের দাবি, দ্রুতই এই বিষয়ে সমঝোতা আসা উচিত। চলচ্চিত্র বান্ধব প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন আমাদের। তার সামনে সাফটা চুক্তিতে সিনেমা আমদানির বর্তমান পরিস্থিতি, এর ভয়াবহ পরিণাম তুল ধরতে হবে। আনতে চুক্তির রদবদল যাতে করে বাংলাদেশের সিনেমা বঞ্চিত না হয়, নষ্ট না হয় সিনেমার আভ্যন্তরীন বাজার।
এলএ