এখন আমি সবার জন্য গান করতে পারছি : পিন্টু ঘোষ

নাহিয়ান ইমন
নাহিয়ান ইমন নাহিয়ান ইমন , বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:২৭ এএম, ২৫ অক্টোবর ২০১৭
ছবি : এম এ রানা

ব্যান্ডদল ‘চিরকুট’র ভোকালিস্ট হিসেবেই পরিচিতি পান পিন্টু ঘোষ। গেল বছর নভেম্বরে ‘চিরকুট’ ছেড়ে পিন্টু ঘোষ চলছেন ‘একলা চলো’ নীতিতে। গাইছেন দেশ-বিদেশের মঞ্চে। এছাড়া কয়েকটি চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করছেন। এই গায়ক-সংগীত পরিচালককে নিয়ে লিখেছেন নাহিয়ান ইমন.....

সাম্প্রতিক ব্যস্ততা কী নিয়ে?
আমি মূলত স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ত। দেশের বাইরের শো করছি বেশি। স্টেজ শো থেকে বেশি সাড়া পাচ্ছি। একটা শো এর পরে আরো কয়েকটা শো আসছে। যারা দেখছেন তারাই আবার ডাকছেন। মজার কথা বলি, প্রথমে আমাকে কেউ চিনতো না। আমি কোন পিন্টু, একা গাইতে পারবো কিনা, সবাই খুব কনফিউজড ছিল। কিন্তু শো শেষ হওয়ার পর ইভেন্ট অর্গানাজাইরা আমাকে নিয়ে নতুন করে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এছাড়া থিয়েটারে ‘হ্যামলেট’, ‘রিজওয়ান’র মিউজিক করলাম। এই কাজগুলো খুব টাফ ছিল। অন্যরকম অভিজ্ঞতার কাজ ছিল। কিন্তু যখন সবাই প্রশংসা করতে শুরু করলো সাহস পেলাম আরও ভালো কাজ করার।

কোথায় কোথায় শো করলেন?
গত ৭ অক্টোবর ফ্লোরিডায় মায়ামিতে নর্থ আমেরিকান বাংলাদেশ কনভেশনে গেয়েছি। আবার ডাক পড়েছে ওখান থেকে, আগামীতে যাবো। এছাড়া কদিন আগে বোস্টনে গেয়েছি। একই স্টেজে জিৎ গাঙ্গুলী, সারেগামার শিল্পী সবাই গেয়েছিল। জিৎ গাঙ্গুলী শো শেষে আমার গানের ভীষণ প্রশংসা করেছেন। আমি মনে করি আমার স্পেশালিটি হচ্ছে স্টেজ লাইভ শো।

সিনেমার সংগীত পরিচালনা কেমন চলছে?
‘অজ্ঞাতনামা’র সাফল্যের পর তৌকির ভাইয়ের ‘হালদা’ ছবির সংগীত পরিচালনা করেছি। পুরো কাজ শেষ। আবহ সংগীত ছাড়াও আমার গাওয়া তিনটি গান থাকবে ছবিতে। এরপর দুটো গান মানুষের মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। এছাড়া অন্তু আজাদের ‘আহত ফুলের গল্প’ ছবির কাজ করছি। ডিসেম্বরে ছবির গান আসবে। আরো কয়েকটি ছবির ব্যাপারে কথা চলছে। দেখা যাক কি হয়।

চিরকুট ছাড়ার পর আপনার ক্যারিয়ারে কী পরিবর্তন এসেছে?
পরিবর্তন তো এসেছেই। চিরকুট ছাড়ার পর অনেকগুলো দরজা আমার জন্য খুলে গেছে। আগে মানুষ আমাকে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে একটা যন্ত্র নিয়ে গান গাইতে দেখতো, এখন বিভিন্নভাবে দেখতে পাচ্ছে, পুরো স্টেজে আমি থাকছি। তাছাড়া আমার বিভিন্ন ধরণের গান করার ইচ্ছে ছিল। সেগুলো করার স্বাধীনতা পেয়েছি। যেমন ফোক গান, ভবা পাগলা, লালন সাঁইজি, শাহ আবদুল করিমের গান গাইতে পারছি।

এই মনীষীদের গান আমার ব্যক্তিগত ভালোবাসা। আগে এসব গান গাইতে পারতাম না। কিন্তু এখন আমি সবার জন্য গান গাই। মোটকথা এখন আমার গান গাইতে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, যেটা আগে ছিল। আর একটা বিষয় হচ্ছে, আগের চেয়ে আর্থিকভাবেও আমি হাজার গুণ স্বচ্ছলতা পেয়েছি। তো একজন শিল্পী হিসেবে সবকিছুতেই ভালো আছি আমি।

তারমানে চিরকুট ছাড়া আপনার ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না, তাই বলতে চাইছেন?
প্রশ্নই আসে না, আমি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেইনি। চিরকুট ব্যান্ড ছাড়া আমার ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না। বরং যারা এখন আমার গানের প্রেজেন্টেশন দেখছে তারাই বলছেন এটা ভালোই হয়েছে।

চিরকুটের এখনকার গান-বাজনা নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
চিরকুটের এখনকার গান-বাজনা ভালো। ওদের কোয়ালিটির ছন্দপতন হয়নি। চিরকুট আগের মতোই আছে। আমার কাছে মনে হয় আরো ভালো হয়েছে। কারণ, আমার গানের কনসেপ্ট ছিল একটু ক্লাসিক্যাল বেজড। পুরান ধাঁচের গান, বাপ-দাদারা পছন্দ করে এমন। কিন্তু চিরকুটের ইচ্ছে ছিল ইয়াংদের টার্গেট করে গান করা। সেই জায়গা থেকে উন্নতি করছে চিরকুট।

নতুন ব্যান্ডদল গড়ার ইচ্ছে আছে?
নাহ, কি লাভ নতুন ব্যান্ড গড়ে? দিনশেষে আবারও ভাঙবে। আমার অভিজ্ঞতা বলছে একদিন সব ব্যান্ড আলাদা হবে। সবাই একমতের হয় না। আর ব্যান্ড করলে কাজে আটকে যাওয়া হয়। সবাই নয়, একজন লিডার থাকে। আমি মনে করি, আমার সঙ্গে যে বা যারা গাইবে তারা অন্যের সঙ্গে গাইতে পারবে না, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আমি নিজে চাই সবার সঙ্গে কাজ করতে। আমার সঙ্গে ২০-২৫ থেকে ৫০ জন হলেও একসঙ্গে গাইবো। আমি মনে করি, একজন মিউজিশিয়ান যখন তার গান করার স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলে তখনই তার মৃত্য হয়।

আমাদের দেশে ব্যান্ড সংগীত চর্চার ক্ষেত্রটা কেমন?
অনেকেই তো গান করছে কিন্তু সঠিক সাপোর্ট কিংবা প্ল্যাটফর্ম পাচ্ছে না। যে মানুষটা ভাল গাইতে পারছে সে ভালো সুযোগ পাচ্ছে না। কারণ তার লিয়াজু নেই। এখন একটা মানুষ যদি সঠিকভাবে গান চর্চা করে তবে একদিন সে উঠবেই। সৃষ্টিকর্তাই তার পথ সুগম করে দেবে। আমরা যেটা দেখছি একবার যে উঠে যাচ্ছে সে শর্টকাটে আরো বড় হতে চাচ্ছে। মিউজিক জিনিসটা কখনো শর্টকাটে হয়না।

কেউ যদি চিন্তা করে আমার একটা ব্যান্ড আছে সেটাকে ব্র্যান্ডে পরিণত করবো, শ্রোতাদের মাঝে চাপিয়ে দেব এটা কখনো হয় না। আমার মনে এই জায়গায় কেউ কেউ ঠিক। তবে বেশিরভাগ ভুল পথে যাচ্ছে। অনেকে আবার বাজেটের কথা বলে থাকে। ইন্ডিয়ার গানের বাজেট বেশি ভালো হয় এটা বারবার বলে। কিন্তু গান না শিখে না জেনে ওই একই বাজেট তাকে দেয়া হলে সে কখনই ভালো করে গাইতে পারবে না।

আগামীর পরিকল্পনা?
চলচ্চিত্রের কাজ করা অনেক চ্যালেঞ্জিং। চ্যালেঞ্জ নিয়েই করেছি। এই গানের স্টাইল অনেক চেঞ্জ পাবেন। সেজন্য অনেক সময় দিয়েছি। এছাড়া অনেকগুলো গান রেডি হয়ে আছে। পরের পরিকল্পনা হচ্ছে প্রযোজক কিংবা কোম্পানি পেলে ভিজ্যুয়ালি (মিউজিক ভিডিও) আকারে গান বের করবো। গল্পের উপর ভিত্তি করে বানানো হবে। কারণ বেশিরভাগ মানুষ গান শোনার পাশাপাশি ভিজ্যুয়ালি দেখতে চায়।

অনেকেই আমাকে বলে গানটা কী চিন্তা করে বানিয়েছেন? তখন আমি ভিজ্যুয়ালি বোঝাতে পারবো কিভাবে বানিয়েছি, কী বলতে চেয়েছি। এতে আরো বেশি গান পিপাসু মানুষদের সাথে সংযুক্ত হতে পারবো বলে মনে করি।

আর মিউজিক ভিডিও নিয়ে ভাবনা আছে। কখনো মিউজিক ভিডিও যেহেতু করিনি, তাই করলে সুন্দরভাবেই করবো। আর আগামী বছর ইউকে-তে গান করতে যাবো। এগুলোই আপাতত আগামীর প্ল্যানিং।

এনই/এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।