শ্রদ্ধা মানেনি বৃষ্টির বাধা

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:০৬ এএম, ৩১ আগস্ট ২০১৭

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ বেতারে প্রথম জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয় আব্দুল জব্বারের। তারপর তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয় মহান মুক্তিযুদ্ধের কণ্ঠযোদ্ধা প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী আব্দুল জব্বারের প্রতি।

যখন তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় আকাশ তখন আহাজারি করে কাঁদছে। ঝুম বৃষ্টিতে ভেসে গেল রাজধানী। সেই বৃষ্টি উপেক্ষা করেও এলেন শোবিজের মানুষেরা তাদের প্রিয় মানুষটিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। সাধারণ জনতাও এলেন জীবন দরিয়া ছেড়ে যাওয়া কিংবদন্তি শিল্পী আব্দুল জব্বারকে শেষ দেখা দেখতে। সে এক দৃশ্য। বৃষ্টিতে ভেজা মুখগুলোতে আলাদা করা যায়নি চোখের জলকে। দৃশ্যমান জলের তো আর স্বাদ প্রকাশ হয় না। কেমন করে যাবে বুঝা নোনতা জলের স্বাদ?

শহীদ মিনারে নেয়ার পর আবদুল জব্বারকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। ঢাকা জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজুয়া আকরাম ইবনে সাজ্জাদের নেতৃত্বে গার্ড অব অনার দেয়া হয় তাকে।

আব্দুল জব্বারকে শেষ শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের জনগণ।

এখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আব্দুল জব্বারের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি রওনা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের দিকে। সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। এরপর তাকে মিরপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।

বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। আব্দুল জব্বার কিডনি, হার্ট, প্রস্টেটসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।

১৯৩৮ সালের ৭ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। আব্দুল জব্বার ১৯৫৮ সাল থেকে তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে গান গাওয়া শুরু করেন। বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত দুটি সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক (১৯৮০) ও স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৬) ছাড়াও বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক (১৯৭৩), বাচসাস পুরস্কার (২০০৩) ও আজীবন সম্মাননা (সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস-২০১১) পান।

Abdul Jobbar

কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত সালাম সালাম হাজার সালাম, জয় বাংলা বাংলার জয়সহ অনেক উদ্বুদ্ধকরণ গানের গায়ক। তার গাওয়া ‘তুমি কী দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়, সালাম সালাম হাজার সালাম ও জয় বাংলা বাংলার জয়- গান তিনটি ২০০৬ সালে মার্চজুড়ে অনুষ্ঠিত বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের বিচারে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

এর আগে সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ বেতারে প্রথম জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয় আব্দুল জব্বারের। বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে আবদুল জব্বারের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিকালে আবদুল জব্বারকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

আবদুল জব্বারের ছেলে বাবু জব্বার জানান, তার বাবার শেষ ইচ্ছে ছিল মৃত্যুর পর মরদেহ যেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে দাফন করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনার পর তাকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এর আগে বুধবার সকালে মৃত্যুর পর তার মরদেহ আল-মারকাজুলে গোসল ও কাফন সম্পন্নের পর দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে নিজ বাসভবনে নেওয়া হয়।

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।