শোকের সাগরে সান্ত্বনা মেলেনি!

লিমন আহমেদ
লিমন আহমেদ লিমন আহমেদ , বিনোদন প্রধান
প্রকাশিত: ০৮:০৪ এএম, ২২ আগস্ট ২০১৭
ছবি : মাহবুব আলম

নায়করাজ রাজ্জাক আর নেই। গতকাল সোমবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যার পর থেকে সবচেয়ে উচ্চারিত বাক্য। শোকে মুহ্যমান পুরো জাতি। মৃত্যুর অমোঘ নিয়মে চিরদিনের মতো নিরব হয়ে গেলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় অভিনেতা রাজ্জাক।

শেষবারের মতো আজ তার মরদেহ নিয়ে আসা হয়েছিল তার প্রিয় কর্মস্থল এফডিসিতে। এখানের ইট-পাথরে মিশে আছে রাজ্জাকের শরীরের ঘ্রাণ। এখানেই এক্সট্রা শিল্পী থেকে মহানায়ক হয়ে উঠেছেন তিনি। শোকে তাই বুঝি নিথর সবকিছু। সকালে ছিল বৃষ্টির ঝমঝমানি। পাঁচ যুগেরও বেশি সময়ের স্বজনকে হারিয়ে যেন কাঁদছে এফডিসিটাও। কিন্তু নায়করাজের মরদেহ এফডিসিতে পৌঁছাতেই রোদের আলোয় হেসে উঠল প্রকৃতি। বুঝি বা এফডিসির সঙ্গে তার বোঝপড়া হলো, প্রিয় মানুষটির শেষ বিদায়ে একটু হাসিমুখে থাকার।

Razzaj 1

কিন্তু ভারি ছিল এফডিসির প্রাঙ্গণ, আকাশ-বাতাস। ঘরের বাইরে মরে যাওয়া মানুষের লাশটা যখন ঘরে ফিরিয়ে আনা হয় তখন প্রতীক্ষায় থাকা স্বজনরা লাশের মুখ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এমনই এক দৃশ্য দেখা গেল আজ বেলা ১১টায়, এফডিসিতে। সকাল থেকেই ভিড় করছিলেন সবাই। বাড়ছিল সেই ভিড়।

সবার চোখে মুখে উৎকণ্ঠা, কখন আসবেন নায়করাজ। তিনি এলেন, একেবারে শোকের পাথর ভাসিয়ে দিয়ে গেলেন কান্না আর আহাজারিতে। সবাই যেন একে অপরকে জড়িয়ে কেঁদে কেঁদে হালকা হওয়ার চেষ্টা করলেন। কেউ নেই সান্ত্বনা দেয়ার। কে দেবে কাকে সান্ত্বনা?

Razzak 2

তিনি কার প্রিয়জন ছিলেন না! জনপ্রিয়তা আর গ্রহণযোগ্যতার আকাশ ছোঁয়া মানুষটির মধ্যে অহংকার ছিল না। সব প্রজন্মের চলচ্চিত্র অভিনয় শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক, সাংবাদিক থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের কাছেই তিনি নন্দিত। সবাইকেই তিনি পিতৃতুল্য আশ্রয় দিয়েছেন ভালোবাসায়। তাই তার বিরহে কান্নার বৃষ্টি থামাতে পারেনি কেউ।

এফডিসিতে অ্যাম্বুলেন্সেই রাখা ছিল রাজ্জাকের লাশ। লাইনে দাঁড়িয়ে একে একে সবাই শেষ দেখাটা দেখে নিলেন। সবার চোখে জল। কাঁদছেন লুকিয়ে। কিন্তু চাপা সেই কান্না বুক ভেঙে বেরিয়ে এলো যখন শাবনূর এলেন বাবার মতো শ্রদ্ধা করা রাজ্জাকে দেখতে। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তার কান্না সংক্রমিত হয়ে গেল সবখানে।

দীর্ঘদিনের বন্ধুকে দেখতে এসে আবেগের বাঁধ ভাঙলেন ঢাকাই ছবির মিষ্টি নায়িকা কবরীও। হু হু করে কাঁদলেন ঢাকাই ছবির তিনকন্যা সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা। ছিলেন দিলারা, মিনু রহমান, সুজাতা, রোজিনা, অঞ্জনা, নূতন, সৈয়দ হাসান ইমাম, আলমগীর, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, রুবেল, ওমর সানি, সাইমন, শাহনূর, জায়েদ খান, আলীরাজ, উজ্জ্বল, জাভেদ, আহমেদ শরীফ, শাকিব খান, অমৃতা, বুবলী, পপি, আমিন খান, ফেরদৌস, বদিউল আলম খোকন, আজাদ রহমান, ছটকু আহমেদ, মনতাজুর রহমান আকবর, শান আরাফ, কায়েস আরজু, ডি এ তায়েব, শিবা শানু, নাসরিন, তমা মির্জা, মাসুম বাবুল, দেবাশীষ বিশ্বাস, ড্যানিরাজ, হেলাল খানসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট পাঁচ শতাধিক মানুষ।

Razzak 4

রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্যসচিব, এফডিসির পরিচালকসহ আরও অনেক কর্মকর্তা। আর রাজ্জাকের পরিবারের মধ্যে ছিলেন তার দুই পুত্র বাপ্পারাজ ও সম্রাট।

সেখানেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল নায়করাজের প্রথম জানাজা। বলা হচ্ছে, স্মরণকালের মধ্যে এত বড় জানাজা আর কোনো অভিনেতার বেলায় দেখা যায়নি। আর এজন্যই তিনি মহানায়ক, যার শেষযাত্রাও হলো মহা আয়োজনে।

যেখানেই থাকুন অদেখা ভুবনে, ভালো থাকুন আমাদের নায়করাজ। সর্বত্রই আজ উচ্চারিত হচ্ছে, ‘বড় ভালো লোক ছিল’ এই অভিনেতা। স্রষ্টা তাকে তার যোগ্য সম্মান দান করুন।

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।