খুনের গল্প বিশ্বাস করাতেই পরকীয়ার গল্প ছড়ানো হয়েছে : সামিরা

লিমন আহমেদ
লিমন আহমেদ লিমন আহমেদ , বিনোদন প্রধান
প্রকাশিত: ১১:২৫ এএম, ১৪ আগস্ট ২০১৭

ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের অমর নায়ক সালমান শাহ। রহস্যজনক সেই মৃত্যুর জট আজও খুলেনি। সালমানের মৃত্যুর দিন থেকেই তার পরিবার দাবি করে এসেছে সালমানকে খুন করা হয়েছে। সেই খুনের সঙ্গে জড়িত সামিরা ও তার পরিবার।

সালমানের পরিবার থেকে একটি মামলাও হয়। সেখানে ১১ জন আসামির একজন ডন। সালমানের মা নীলা চৌধুরীর বরাতে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছিলো, বেশ কয়জন পুরুষের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিলো সামিরার। তাদের মধ্যে অভিনেতা ডন, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ আরও কিছু নাম এসেছে। বলা হয়েছে সামিরার বর্তমান স্বামীর সঙ্গেও আমার পরকীয়া ছিলো।

কিন্তু এই অভিযোগকে বানোয়াট ও অপপ্রচার দাবি করলেন সালমানের স্ত্রী সামিরা। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‌‘সালমানের মা নীলা চৌধুরী সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত আক্রোশে আমাকে সারাটাজীবন হয়রানি করে গেলেন। পুত্র হারানোর শোককে কাজে লাগিয়ে সালমানের জনপ্রিয়তাকে হাতিয়ার বানিয়েছেন তিনি। শুরু থেকেই আমাকে খুনী হিসেবে সবার কাছে প্রমাণ করতে তিনি নোংরা কিছু অপপ্রচার চালিয়েছেন। তারমধ্যে একটি আমি একাধিক লোকের সঙ্গে পরকীয়া করেছি। তারমধ্যে তিনি ডনের নাম ছড়িয়েছেন। অথচ তিনি নিজেও জানেন এবং বিশ্বাস করেন যে ডন ছিলো আমার ছোট ভাইয়ের মতো।’

ডনের সঙ্গে সালমানের সখ্যতা নিয়ে সামিরা বলেন, ‘একটু ঘাঁটলেই বুঝা যাবে ডনকে কতোটা পছন্দ করতো সালমান। ওর সব ছবিতেই ডনকে নেয়ার জন্য পরিচালকদের বলতো সে। অসংখ্য স্টিল ছবিতে ডনকে সে নিজে ডেকে এনে দাঁড় করিয়েছে। বন্ধুর মতো মিশলেও ডন সালমানকে সম্মান করতো। আমাকে ভাবি বলে ডাকতো। আমি তাকে ছোটভাইয়ের মতোই দেখতাম। আর আজ সেই ডন ও আমাকে জড়িয়ে বিব্রতকর একটা গল্প ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

ডনের সঙ্গে আমার যেসব ছবি প্রকাশ করা হয়েছে সবই ফটোশপ। এইসব ছবি নিয়েও তদন্ত হয়েছে। সব মিথ্যে প্রমাণ হয়েছে। যে ছবিটাতে ডন বসা আর আমি ম্যাগাজিন দেখছি সেইটা সালমান নিজেই তুলে দিয়েছিলো। আর আজিজ মোহাম্মাদ ভাইয়ের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক কোনোদিনই ছিলো না। সালমানসহ তাকে মাত্র একবার দেখেছিলাম আমি। সালমান খুন হয়েছে এই গল্পকে টুইস্ট দিতেই এই লোকের নাম এখানে জড়ানো হয়েছে। আর কিছুই নয়।

পাশাপাশি কথা উঠেছে আমার বর্তমান স্বামীর সঙ্গেও নাকি আমার পরকীয়া ছিলো। একেবারেই হাস্যকর ব্যাপার এটি। আমার স্বামী মোস্তাক ছিলো সালমানের ছোটবেলার খুবই ক্লোজ ফ্রেন্ড। একসাথে তারা একই এলাকায় বেড়ে উঠেছে। পড়াশোনা করেছে। সালমান নিজেই ওর সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো। সালমান যখন ফিল্মে ব্যস্ত হয়ে উঠলো তখন আর ওর সঙ্গে আমাদের দেখা হতো না। সালমানের মৃত্যুর এক বছর পর সালমানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে মোস্তাকের সঙ্গে আমার নতুন করে আলাপ হয়।

বেশ কিছুদিন পর সে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ইমন (সালমান) ছাড়া আর কাউকে স্বামী ভাবা সম্ভব নয় জানিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেই আমি। সে আমাকে ইমনের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকার জন্যই তাকে বিয়ের কথা বলে। তবুও আমি ফিরিয়ে দিলে সে পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। পরিবারের চাপে ও সম্মতিতে আমি সালমান মৃত্যুর তিন বছর পর বিয়ে করি। এই সমাজে একটি ২২-২৩ বছরের মেয়ের বৈধব্য তার বাবা মা মেনে নেয় না। সবাই চায় তাদের মেয়ে আনন্দে বাঁচুক। আমার বাবা-মাও চেয়েছে। এটা দোষের নয়। এজন্য মোস্তাককে দোষারোপ করাটা অন্যায়।

মোস্তাক ও সালমানের অনেক বন্ধু এখনো বেঁচে আছে। আঁখি আলমগীর তাদের খুব ভালো বন্ধু ছিলো। আগুনও তো সালমানের ভালো বন্ধু। তাদের কাছ থেকে তথ্য নিলেই সব সন্দেহ দূর হয়ে যাবে। মোস্তাক সালমানের বন্ধু। তারই মতো সেও উদার আর বড় মনের বলেই একটি বিধবা মেয়েকে যে কী না স্বামী খুনের জন্য দেশজুড়ে সমালোচিত, তাকে বিয়ে করেছে। আমি ওর কাছে কৃতজ্ঞ।

তারচেয়েও বেশি কৃতজ্ঞ সে কোনোদিন আমাকে খোঁটা দেয়নি অন্যের স্ত্রী ছিলাম বলে। বরং তার বন্ধুর প্রতি সে শ্রদ্ধাশীল। তার কাছ থেকেও সালমানের অনেক অজানা কথা আমি শুনেছি। প্রতি বছর সালমানের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে সে আমাকে খুশি করার জন্য মিলাদের আয়োজন করে। সে খুব ভালো করেই জানে, সালমানের স্ত্রীর পরিচয় আমি আজও ভুলিনি। সেই ভালোবাসাও কমেনি। বন্ধু হয়ে সালমানের প্রতি মোস্তাকের যে টান ও ভালোবাসা আমি দেখেছি সালমানের মায়েরও সেটা আর অবশিষ্ট নেই বলে মনে করি। তিনি ছেলের মৃত্যুকে পণ্য বানিয়ে ফেলেছেন। উনার তো উচিত ছেলের জন্য দোয়া করা।’

সামিরা আরও বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আমি বিচার দিয়ে রাখলাম, মা হয়ে ছেলেকে এভাবে ছোট করার শাস্তি তিনি যেন পান। ছেলের বউয়ের নামে তিনি মিথ্যাচার করেই চলেছেন। সালমান বেঁচে থাকতে তাকে একদন্ড শান্তি দেননি নীলা চৌধুরী। তার মৃত্যুর পর বেছে নিয়েছেন আমাকে। কেন তিনি সালমান বেঁচে থাকতে এসব কথা বললেন না। তিনি কী বোবা ছিলেন? এত পরকীয়াবাজ মেয়ে আমি যে একসঙ্গে দুনিয়ার লোকের সঙ্গে পরকীয়া করে বেড়িয়েছি? কী করে সম্ভব?

ফিল্মের অনেকেই জানেন, আমি সালমানের শুটিংয়ের সময় অধিকাংশ দিন তার সঙ্গে থাকতাম। আউটডোর, ইনডোর- সবখানেই আমি সালমানের সঙ্গী হয়েছি। এক পরকীয়া করার সময়টা কোথায় পেলাম? তাছাড়া সালমান বেঁচে থাকতে ও পরে আমার শ্বশুর (সালমানের বাবা) তো কোনোদিন এই বিষয়ে একটা কথাও বলেননি যে তার ছেলের বউ খারাপ। তিনি নিজেই ছেলের মৃত্যুর পর লাশের সুরতহালের সাক্ষী। নিজে দুইবার সালমানের পোস্টমর্টেম করিয়েছেন।

তেমন কিছু পেলে তিনি নিশ্চয় প্রমাণ হিসেবে দেখাতেন। ছেলে কী শুধু সালমানের মায়েরই গেছে, বাবার যায়নি? তার তো আরেকটা ছেলে ছিলো। আমার তো আর একটা সালমান ছিলো না। স্বামীকে হারানোর শোকের উপর এই মহীলা স্বামী খুনের দায় আমার উপর চাপিয়ে দিয়েছে।’

সামিরা আরও জানান, ‘সবাই ২১ বছর ধরে একপেশে কথা শুনে তাই বিশ্বাস করেছেন। কিন্তু সবার জানা উচিত সালমানের সঙ্গে তার মায়ের সম্পর্কটা কেমন ছিলো। একটু খোঁজ খবর করলেই সেগুলো তারা জানতে পারবে। প্রতি মাসে মাকে ৭০ হাজার টাকা দিতো সালমান। এক মাসে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সরি বলেছিলো। সেই টাকা নীলা চৌধুরী সালমানের মুখে ছুঁড়ে মেরেছিলো। সালমান কাঁদতে কাঁদতে আমার হাত ধরে বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো।

সালমানের মায়ের সঙ্গে তার কেমন সম্পর্ক ছিলো সেগুলো তদন্ত করা হোক। পাড়া প্রতিবেশিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। সব বেরিয়ে আসবে। সালমানের মৃত্যুর জন্য তার মায়ের আচরণ, ব্যবহারই অন্যতম কারণ ছিলো। উনার জন্যই সালমানের বাবারও চাকরি চলে গিয়েছিলো। তিনি তো ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। রিটায়ার্ড করেছিলেন কী। খোঁজ নিন। অবশ্যই আসল ঘটনা জানতে পারবেন। নীলা চৌধুরীর টাকার যোগান দিতে গিয়ে উনি ক্রাইম করতে বাধ্য হয়েছিলেন।’

সামিরা দাবি করেন, ‘সালমানের পরিবারের লোকজন, প্রতিবেশি, ফিল্মের লোক, সবাই আমার ও সালমানের সুখের দাম্পত্য জীবনকেই দেখেছে। সালমানের মামাতো-খালাতো ভাইবোনেরা আমাকে খুবই পছন্দ করতো। সালমানের এক খালাতো বোন চট্টগ্রামে থাকতো। সেখান থেকে সে তার বিয়ের আগে আমাকে চিঠি লিখেছিলো ‘ডার্লি ভাবি’ সম্বোধন করে। সেই চিঠি আমার সংগ্রহে আছে। আমি যদি খারাপ ভাবি হতাম তবে এভাবে আমাকে চিঠি লিখতো না। সত্যি কথাটা হলো, সালমানের পরিবারে আমি খুবই জনপ্রিয় ছিলাম। এটাও নীলা চৌধুরী মেনে নিতে পারতেন না। তিনি আমাকে সবকিছুতেই প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতেন।

‘সালমান আবেগ প্রবণ দাবি করে সামিরা বলেন, ‘ঝগড়া কোন সংসারে না হয়? কিন্তু মিটমাটও হয়। সালমান আমার গায়ে হাতও তুলেছে এই নীলা চৌধুরীর জন্যই। তবু আমরা নিজেদের ঝামেলা মিটমাট করে নিয়েছি। সুখী হবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সালমানের আবেগ প্রবণতা ওকে গ্রাস করেছে।’

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।