শপথ গ্রহণ করল চলচ্চিত্রগ্রাহক সংস্থার নতুন কমিটি
শিল্পে আজকের দিনে যত কিছু দৃষ্টিনন্দন, চমৎকার, অপূর্ব পরিবেশনা দেখি তার অনেকটা প্রযুক্তির অবদান। কিন্তু এর নেপথ্যে এগুলো পরিচালনার যে কারিগররা থাকেন তাদের অন্যতম হলেন ক্যামেরাম্যান। এখন পর্যন্ত অসংখ্য চিত্রগ্রাহক ঢাকাই চলচ্চিত্রকে আজকের অবস্থানে নিয়ে আসতে ভূমিকা রেখেছেন।
একটি সিনেমার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম চিত্রগ্রহণ। একজন শিল্পীকে কীভাবে হাজির করা হবে সেটা ভাবেন চিত্র নির্মাতা, কিন্তু তাকে কেমন করে উপস্থাপন করা যাবে সেই সিদ্ধান্ত থাকে চিত্রগ্রাহকের হাতে। কিন্তু এ ক্যামেরাম্যানরা সবসময়ই থেকে গেছেন আলোচনার বাইরে।
অবশ্য এ নিয়ে তাদের ক্ষোভও নেই। দিন দিন অনেক কিছুই আগের চেয়ে বদলেছে। সামনে আরও অনেক ইতিবাচক কিছু হবে। এমনটাই প্রত্যাশা করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্রগ্রাহক সংস্থার নবনির্বাচিত সভাপতি আব্দুল লতিফ বাচ্চু।
গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টায় চলচ্চিত্রগ্রাহক সংস্থার নবনির্বাচিতরা শপথ পাঠ করে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাদের শপথ পাঠ করান পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন। এসময় উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা ফারুক।
গেল ১৯ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়েছে নির্বাচন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রগ্রাহক সংস্থার নতুন মেয়াদে সভাপতি হয়েছেন আব্দুল লতিফ বাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মজনু।
প্রসঙ্গত, ঢাকাই ছবিতে চিত্রগ্রাহক নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই চলে আসে চিত্রগ্রহণের প্রতিষ্ঠাতা পঞ্চখুঁটির কথা। এই পঞ্চখুঁটি হলেন বেবী ইসলাম (১৯২৭-২০১০), কিউ এম জামান (১৯৩১-১৯৯৭), সাধন রায় (১৯১৪-১৯৮৮), আফজাল চৌধুরী (১৯৩১-বর্তমান) আর আব্দুস সামাদ (১৯৩৭-২০০৪)। পাঁচ জনই হচ্ছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণের মূল ভিত্তি। এদের হাত ধরেই বিকশিত হয়েছে ক্যামেরাম্যানদের ইতিহাস।
ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে নতুন দিগন্তে ডানা মেলেছিলো ঢাকাই ফিল্মের ইন্ডাস্ট্রি। বাড়ছে শিল্পী ও কলাকুশলী। বাড়ছে ছবির সংখ্যা। স্বভাবতই বাড়ছিলো ক্যামেরাম্যানদের ব্যস্ততা ও চাহিদা। নবীন প্রবীনের সমারোহে ক্রমেই বড় হতে থাকলো ক্যামেরাম্যানদের তালিকা। বাধ্য হয়েই নিজেদের জন্য একটা স্থায়ী আশ্রয় অনুভব করলেন তারা।
সেই অনুভবের হাত ধরে ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র গ্রাহক সংস্থা। সংস্থার প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন আব্দুস সামাদ এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মাসুদুর রহমান। এর পরেরবার মাসুদুর রহমান সাধারণ সম্পাদক বহাল থাকলেও সভাপতিত্ব নেন কিউ এম জামান। তিনি একটানা ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
তার শাসনামলকে ক্যামেরাম্যানরা সংস্থার সোনালী যুগ মনে করেন। কিউ এম জামান নিজের টাকা দিয়ে দুটি ক্যামেরা কিনে দেন সংস্থাকে। সেগুলো থেকে অর্জিত আয় দিয়েই চলতো সংস্থার মোটা অংকের খরচ।
ধারাবাহিকতায় এই সংগঠনটির সভাপতি হয়েছেন রেজা লতিফ তিনবার, আফজাল চৌধুরী একবার এবং সর্বোচ্চ ছয়বার এই পদ অলংকৃত করেছেন আব্দুল লতিফ বাচ্চু।
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মাসুদুর রহমান দুইবার, আবু হেনা বাবলু একবার, এম এ মবিন তিনবার, আব্দুল লতিফ বাচ্চু একবার, রেজা লতিফ চারবার, জেড এইচ মিন্টু তিনবার। সর্বশেষ এই পদে দায়িত্ব নিলেন আসাদুজ্জামান মজনু।
পথচলার ধারাবাহিকতায় গ্রাহক সংস্থার নতুন করে কমিটিতে এসেছে বেশ কিছু পরবির্তন। দুই বছর মেয়াদে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হয় নতুন কমিটি। একটানা দুই মেয়াদ ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তি আর কখনো সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থি হতে পারবেন না। বর্তমান কমিটিতে সর্বমোট ৫৮ জন ক্যামেরাম্যান সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এই সদস্যদের ভোটেই নির্বাচিত হন তাদের প্রতিনিধিরা।
এলএ