শুভ্র চরিত্রে সাইমনকে পছন্দ করেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:২৪ এএম, ১৯ জুলাই ২০১৭

ঢাকাই ছবির জনপ্রিয় নায়ক সাইমন সাদিক। ‌‘পোড়ামন’, ‘ব্ল্যাকমানি’, ‘পুড়ে যায় মন’সহ বেশ কিছু ছবি দিয়ে তিনি পরিচালক ও প্রযোজকদের আস্থা অর্জন করেছেন। কাজ করছেন ‘জান্নাত’, ‘নদীর বুকে চাঁদ’, ‘বাহাদুরি’সহ প্রায় হাফ ডজন ছবিতে।

সাইমন হুমায়ূন সাহিত্যের গুণমুগ্ধ একজন পাঠক। এই লেখকের নতুন বইগুলো গোগ্রাসে গিলতেন তিনি। বহুবার হিমু হয়ে ঘর ছেড়ে বেড়িয়েছেন জোছনা ভাসা রাতে, খালি পায়ে নেমেছেন খোলা আকাশের নিচে, বরষার স্নানে। মুগ্ধ হয়েছেন বাকের ভাই, মিসির আলী, রুপা, মোনা, মাজেদা খালা- চরিত্রগুলোতে। নন্দিত নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে জাগো নিউজকে এমনটাই জানালেন এই নায়ক।

আজ ১৯ জুলাই হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাইমন। সেখানে তিনি বলেছেন, মৃত্যুর আগে হুমায়ূন আহমেদ আরও একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন ভাবছিলেন। সেটি হবে তারই সৃষ্ট চরিত্র শুভ্রকে নিয়ে। সেই চরিত্রের জন্য জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজের মাধ্যমে সাইমনকে দেখতে চেয়ে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। পছন্দও করেছিলেন তিনি।

কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে সেই চরিত্রে আর নিজেকে দাঁড় করাতে পারেননি সাইমন। সেই আফসোস নিয়ে চমৎকার স্ট্যাটাসটি দেন তিনি।

সাইমন তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ইন্ডাস্ট্রিতে আমি একেবারেই নতুন। সবকিছু থেকেই শিখছি, জানছি। নিজেকে গড়ে তুলছিলাম চলচ্চিত্রের জন্য। আমার প্রথম ছবি ‘জ্বি হুজুর’ সবেমাত্র মুক্তি পেয়েছে। ঠিক এমনি সময় জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আব্দুল আজিজ ভাই বললেন আমাকে নিয়ে ছবি করবেন। কী ছবি হবে সে নিয়ে আলাপ চলতে লাগলো। একদিন চমকপ্রদ এক খবর দিলেন।

বললেন, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ তার ‘শুভ্র গেছে বনে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র বানাতে যাচ্ছেন। সেজন্য একজন ছেলেকে খুঁজছেন শুভ চরিত্র করবে বলে। উনি হুমায়ূন আহমেদ স্যারকে আমার কথা বলেছেন। আমাকে নিয়ে যাবেন স্যারের সঙ্গে দেখা করাতে। আমি তো একেবারেই হতবাক। এতবড় গুণী মানুষের সঙ্গে কাজ করার চেয়ে বেশি উত্তেজিত ছিলাম উনাকে সামনে থেকে দেখতে পাবো এই আনন্দে।

আব্দুল আজিজ ভাইয়ের মুখ থেকে শোনার পর আর অপেক্ষা করতে পারছিলাম না। কবে স্যারের সঙ্গে দেখা হবে সেটাই শুধু ভাবতাম। তখন হুমায়ূন স্যার খুবই অসুস্থ। নিউইয়র্কে চিকিৎসা নিয়ে মাঝে মাঝে দেশে আসেন। সেবার শেষবারের মতো এলেন। কে জানতো জোছনা, বর্ষার জন্মভূমিতে সেটাই স্যারের শেষ সফর হবে।

তারিখটা মনে পড়ছে না। আব্দুল আজিজ ভাই আমাকে নিয়ে গেলেন নন্দিক চলচ্চিত্র সংগীত পরিচালক সত্য সাহার স্টুডিও ‘সত্যগীত’-এ। স্টুডিওতে সেদিন ইমন সাহা ছিলেন না। অন্য কোনো একজন গানের কাজ করছিলেন। স্টুডিওর একপাশে বসে থাকতে দেখলাম মেহের আফরোজ শাওনকে। আর অন্যপাশে চুপচাপ বসে মিউজিক শুনছেন সেই মহামানব, বাংলা সাহিত্যের আশির্বাদ, ঢাকাই সিনেমার অনন্য পুরুষ হুমায়ূন আহমেদ। আমরা সালাম দিলাম। জবাব দিয়ে তিনি বসতে ইশারা করে মিউজিক শুনতে লাগলেন। একপর্যায়ে আব্দুল আজিজ ভাই বললেন, ‘স্যার আপনার শুভ্র চরিত্রের জন্য এই ছেলের কথাই বলেছিলাম। ওর নাম সাইমন।’

স্যার শুনলেন। আনুমানিক পাঁচ মিনিট আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। কোনো রকম ভাবান্তর ছাড়াই বললেন, ‘এই ছেলের চেহারা অনেক হার্ড। শুভ্র তো কোমল চরিত্র। ঝামেলা হবে। তবে সমস্যা নেই। শুভ্র তো অনেক পাওয়ারের মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে। ওকে মানিয়ে নেয়া যাবে।’

আমাকে মানিয়ে নেয়া যাবে শুনেই বুকের মধ্যে কেমন যেন একটা কম্পন অনুভূত হলো। আমি কিছুই বলতে পারছিলাম না। কেবল তাকিয়ে রইলাম কিংবদন্তির দিকে। তিনি তখন বলছেন, ‘আমাকে তো নিউইয়র্ক ফিরে যেতে হচ্ছে শিগগিরই। আরেকবার এসে ছবির কাজ শেষ করে যাবো। তখন ওকে নিয়ে বসতে হবে।’

এটুকুই। তিনি থেকে গেলেন। আমরা চলে এলাম। দিন গুনছিলাম স্যার আসবেন। তার শুভ্র হয়ে আমি নিজেকে ঋদ্ধ করবো অভিনয়ের আঙ্গিনায়। দিন ফুরালো। স্যার এলেন। কিন্তু তার এমন প্রত্যাবর্তন কেউ আশা করেনি এই বাংলার। তিনি এলেন চিরতরে সব অপেক্ষার অবসান ঘটাতে। শুভ্র হয়ে আমার আর দর্শকের মন জয় করা হলো না। স্যারের সঙ্গে কিছুটা সান্নিধ্য পাবো পাবো করেও পেলাম না।

স্যারের শোকে কোটি মানুষের কান্না দেখে নিজের কষ্ট ভুলে গেলাম। দিন যায় দিন আসে। তার সঙ্গে সাক্ষাতের স্মৃতি আমি ভুলতে পারি না। ঘুরে ঘুরে তার প্রয়াণ দিবস আসে। আর তার প্রতি কোটি ভক্তের শ্রদ্ধার মিছিলে দাঁড়িয়ে আমি এই হার্ড চেহারার শুভ্র আজও বলি, ‘ভালো থাকুন স্যার অদেখা নন্দিত ভুবনে.......’

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।