বাংলাদেশের গীতিকারদের আমি স্যালুট জানাই : জিৎ গাঙ্গুলী

লিমন আহমেদ
লিমন আহমেদ লিমন আহমেদ , বিনোদন প্রধান
প্রকাশিত: ০৮:২৯ এএম, ১৫ জুলাই ২০১৭
ছবি : মাহবুব আলম

রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ান। একঝাঁক সাংবাদিক অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় উপমহাদেশের নন্দিত অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর আসবেন, সবার উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন। এটিএন টেলিভিশন স্টেশন এটিএন বাংলার ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চ্যানেল লাইভ এন্টারটেইনমেন্ট আয়োজিত ‘শর্মিলা ঠাকুর-জিৎ গাঙ্গুলী লাইভ ইন ঢাকা'-পাওয়ার্ড বাই ভিশন কনসার্টে অংশ নিতে এসেছেন শর্মিলা। দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর আয়োজকরা জানালেন, সুদূর লন্ডন থেকে বাংলাদেশে উড়াল দিয়ে এসেছেন এই অভিনেত্রী। এসেই ভ্রমণের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছেন। তার ম্যানেজার বলেছেন, ‘শর্মিলা জি আজ দেখা দিচ্ছেন না। তিনি আগামীকাল (শনিবার) অনুষ্ঠান শুরুর এক ঘণ্টা আগেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন।’ বাধ্য হয়েই এই কনসার্টের আরেক অতিথি ভারতের জনপ্রিয় সংগীত পরিচালক ও গায়ক জিৎ গাঙ্গুলী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন।

২০০০ সালে ‘তেরে লিয়ে’ চলচ্চিত্র দিয়ে বলিউডে সংগীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন জিৎ গাঙ্গুলী। এরপর ‘হামারি আধুরি কাহানি’, ‘আশিকি-২’, ‘খামোশিয়ান’, ‘সিটিলাইটস’, ‘রাজ রিবোট’, ‘অ্যালোন’ এবং ‘সিংগাম রিটার্নস’র মতো বলিউডে অনেক চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেছেন। আর ২০০৪ সালে ‘প্রেমী’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে টালিগঞ্জ অভিযাত্রা শুরু করেন ৪০ বছর বয়সী এই সংগীত পরিচালক। একে একে ‘সাথী’, ‘বাপি বাড়ি যা’, ‘পাগলু’, ‘পাগলু-২’, ‘বস’, ‘রংরাজ’, ‘চিরদিন তুমি যে আমার-২’, ‘হান্ড্রেড পার্সেন্ট লাভ’, ‘জোশ’, ‘হিরো’, ‘অমানুষ’সহ অসংখ্য সুপারহিট চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেন তিনি।

তারপরও কাটলো প্রায় আধাঘণ্টা। অবশেষে দেখা মিললো প্রত্যাশিত অতিথির। সুদর্শন চেহারায় চমৎকার এক বিনয় মাখা হাসি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন কক্ষে প্রবেশ করলেন জিৎ গাঙ্গুলী। তিনি সবার উদ্দেশ্যে হাত নাড়লেন ‘হ্যালো বাংলাদেশ’ বলে। শুরু হলো আলোচনা ও পরিচয় পর্ব। পরিচয় দেয়া শেষে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসতে পেরে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন তিনি। প্রশ্নোত্তর পর্বে জিৎ জানালেন অনেক কথা-

প্রশ্ন : প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফর করছেন। এখন পর্যন্ত অনুভূতি কী?

জিৎ : অবশেষে প্রতীক্ষা শেষ হলো। কতোদিন আমি বাংলাদেশে গান করা অপেক্ষা করেছি। বাংলাদেশের প্রতি আলাদা টান আছে আমার। এখানে আসার অনুভূতিও এককথায় অসাধারণ। আমি যখন ঢাকায় পা রাখলাম মনেই হয়নি কলকাতার বাইরে এসেছি। শুধু যে ভাষার সাদৃশ্য এজন্য নয়; পোশাক, যানবাহন, পথ ঘাট ও মানুষজনে তেমন কোনো পার্থক্য চোখে পড়ছে না। বিশেষ করে আতিথেয়তায় মুগ্ধ আমি। মুম্বাইয়েই থাকি আমি নিয়মিত। সেখান থেকেই কাজ করি বলিউড ও টালিউডে। আমার কাছে ঢাকাকে মুম্বাইয়ের থেকেও কাছের মনে হয়েছে। সেটা যেমন দূরত্বে তেমনি ভালো লাগার জায়গা থেকেও। তাছাড়া, বাংলাদেশের সঙ্গে আমার অনেক যোগাযোগ। পূর্ব পুরুষের যোগাযোগ আছে, গানের যোগাযোগ আছে। সুযোগ হলে বারবার আসতে চাই।

প্রশ্ন : শর্মিলা ঠাকুর ভারতের একজন কিংবদন্তি অভিনেত্রী। উনি বাঙালি। আপনিও বাঙালি। দুজনেই চলচ্চিত্রের মানুষ। উনার সঙ্গে আপনার প্রথম পরিচয়, কোনো মজার ঘটনা এবং আপনার ভাবনায় শর্মিলা ঠাকুর সম্পর্কে জানতে চাই-

জিৎ : শর্মিলা ঠাকুর একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। তাকে আমরা প্রচণ্ড সম্মান করি। বাঙালি মেয়ে হয়ে তিনি বাংলাকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ২০০৯ সালে অরূপ দ্ত্ত পরিচালিত ‘মর্নিং ওয়াক’ সিনেমার সংগীত পরিচালনার সময় শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ। কিন্তু সেদিন কথা বলার সুযোগ হয়নি। পরে অন্য সময় আলাপ হয়েছে। চমৎকার একজন মানুষ তিনি। প্রথমবারের মতো তার সঙ্গে একমঞ্চে উপস্থিত হতে যাচ্ছি। এটা আমার জন্য চিরস্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকবে। আমি এক্সাইটেড হয়ে অপেক্ষা করছি উনার সঙ্গে স্টেজ শেয়ার করার জন্য।

প্রশ্ন : বাংলাদেশি গান শোনা হয়? এপারের গান নিয়ে আপনার ভাবনার কথা শুনতে চাই-

জিৎ : বাংলাদেশি গান নিয়মিতই শোনা হয়। বিশেষ করে এপারের ব্যান্ড গানের দারুণ জনপ্রিয়তা রয়েছে কলকাতায়। তাছাড়া দুই বাংলার সংগীতের যোগাযোগটা বেশ পুরনো এবং অনেকদিনের। আজকাল অনেকের গানই ভালো লাগে। আইয়ূব বাচ্চু লিজেন্ডারি একজন গানের মানুষ। খুব ভালো লাগে তার গান। এছাড়া অর্ণব আমার বন্ধু মানুষ। চমৎকার গান করে সে। আর নতুনদের অনেক গান শোনা হয়েছে। ভালো লাগে। তবে এপারের গান নিয়ে বলতে গেলে আমি যে বিষয়টি বিশেষভাবে বলতে চাই সেটা হলো এখানকার গীতিকারেরা অসাধারণ। তাদের লেখা গানগুলোতে কী দারুণভাবে গল্পকে উপস্থাপন করা হয়। আমি শুনতে শুনতে অভিভূত হয়ে যাই। বাংলাদেশের সকল গীতিকারকে আমি স্যালুট দিচ্ছি। আমি উনাদের সঙ্গে যদি গান করতে পারতাম খুব ভালো লাগতো।

প্রশ্ন : বাংলাদেশে কাজ করা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে আপনার?

জিৎ : অবশ্যই, কেন নয় বলুন তো। দুই বাংলাতেই দুই বাংলার গানের জনপ্রিয়তা আছে। আমি খুব করে চাই বাংলাদেশে কাজ করতে। এখানকার গীতিকারদের সঙ্গে গান করতে মুখিয়ে আছি আমি। সেটা দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনার অ্যালবাম হতে পারে, এখানকার গীতিকারদের আয়োজনে লোকাল অ্যালবাম হতে পারে, চলচ্চিত্রে হতে পারে। মোট কথা, আমি বাংলাদেশে কাজ করতে চাই।

প্রশ্ন : কলকাতার অনেক শিল্পীরা এইদেশে এসে অভিনয়, গান করছেন। আমরা তাদেরকে যথেষ্ট সম্মান, আতিথেয়তা দিয়ে থাকি। কলকাতার শিল্পীরাও সেটা বিনয়ের সঙ্গে স্বীকার করেছেন বহুবার। কিন্তু আমাদের শিল্পীরা যখন কলকাতায় যায় তাদের নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা বা গণমাধ্যমে কোনো সাড়া দেখি না। এর কারণ কী আপনি বলতে পারেন?

জিৎ : দেখুন আমি আসলে মুম্বাই বেসড কাজ করি। সেখানে আমার স্টুডিও। ওখানেই হিন্দী ও বাংলায় গান করি আমি। কলকাতার ইন্ডাস্ট্রিতে অতিথিদের যাওয়া আসা সম্পর্কে ততোটা জানি না। তবে অতিথির আপ্যায়ন, মূল্যায়ণ করা উচিত। আমি তো বাংলাদেশে এসে এই কয়েক ঘণ্টাতেই মুগ্ধ হয়েছি। তবে এটুকু শুনিছি এপার থেকে অনেকেই টালিগঞ্জে গিয়ে গান করছেন এবং বেশ ভালো করছেন। এই সম্পর্কটা মজবুত রাখতে হবে। আমি গানের মানুষ; আমার মতে দুই দেশের মানুষের মন জয় করার অন্যতম থেরাপি হল মিউজিক। কোনো দেশ বা সম্প্রদায়কে আলাদা করে আমি গান করছি না। আমি গান করতে চাই সবার জন্য।

প্রশ্ন : গান করতে গেলে অনেকেই একটা অনুভবে থাকেন। কেউ তার প্রিয় মানুষকে মনে করেন, কেউ কোনো দুঃখ বা কষ্টকে স্মরণ করেন। আপনার ক্ষেত্রেও কোন অনুভূতিগুলো বেশি কাজ করে? প্রেম, নারী নাকি জীবনের কোনো গল্প?

জিৎ : হা হা হা..... আসলে প্রেমের গান করতে গেলে প্রেম করতে বিষয়টি এমন নয় বলেই মনে করি আমি। যখন কাজ করি, তখন কাজটাকেই প্রাধান্য দেই। মিউজিক ক্রিয়েটর হিসেবেই আমার আনন্দ। এ এক অন্যরকম ফিলিংস আমার। ডিরেক্টরের পছন্দ তো থাকেই, তারপর আমি ভাবি শ্রোতার পছন্দের কথা। 

প্রশ্ন : সংগীতে দুই বাংলাতেই বিভিন্নরকম রিয়েলিটি শো’র জনপ্রিয়তা আছে। কিন্তু দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় দেখা যায় এখান থেকে খুব বেশি শিল্পীরা টিকে থাকতে পারছেন না। আপনাার মতে এর কী কারণ আছে বলে মনে হয়?

জিৎ : রিয়েলিটি শো আপাতত একটি প্ল্যাটফর্ম দেয়। কিন্তু অধ্যবসায় আর সাধনাই সংগীতের ভুবনে টিকে থাকার ‘একমাত্র প্ল্যাটফর্ম’ বলে মনে করি আমি। ভারতে বা বাংলাদেশে এ মুহূর্তে প্রচুর রিয়েলিটি শো হচ্ছে। শ্রেয়া ঘোষাল, কুনাল গাঞ্জাওয়ালাদের মতো শিল্পীরাও উঠে আসছেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা হচ্ছে- ল্যাক অফ প্র্যাকটিস। একদমই চর্চা করে না আর ওরা। রিয়েলিটি শোর এই প্ল্যাটফর্ম পেয়ে ওরা সো লাকি, কিন্তু ওদের তো চর্চা ধরে রাখতে হবে। আর সেটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ শিল্পীদের উদ্দেশ্যে বলবো- সবসময় কিন্তু ভাগ্য, চ্যানেল হাতে থাকবে না, হাতে যা থাকবে তা হল চর্চা। সেটা চালিয়ে যেতে হবে।

প্রশ্ন : জিৎ গাঙ্গুলী নিজেকে কোন পরিচয় দিতে বেশি ভালোবাসে? গায়ক না সংগীত পরিচালক?

জিৎ : আমি গান করি। বেশ কিছু গান শ্রোতারা গ্রহণও করেছেন। তবে সংগীত পরিচালক হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি আমি।

প্রশ্ন : আগামীকাল (শনিবার, ১৫ জুলাই) কনসার্টে কী গাইবেন বলে প্ল্যান করেছেন?

জিৎ : হিন্দী ও বাংলায় আমার সংগীত পরিচালনা এবং গায়কীতে জনপ্রিয় সব গানই গাইবো। বাংলাদেশে আমি প্রথম গাইতে এসেছি। এখানকার শ্রোতা সম্পর্কে সরাসরি কোনো অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু গানের দেশের মানুষদের সঙ্গে আমার গানের আসর জমে ওঠবে বলেই প্রত্যাশা করছি। 

এলএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।