সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তোপের মুখে রেলমন্ত্রী


প্রকাশিত: ০১:৫১ পিএম, ২০ মে ২০১৫

সংসদীয় কমিটির সদস্যরা অভিযোগ করে বলেছেন, রেলের খালাসী পদে মাস শেষে বেতন চার হাজার ১০০ টাকা। এই চাকরির জন্য চার লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন প্রার্থীরা। সঙ্গে মন্ত্রী-এমপিদের সুপারিশও ছিলো। তারপরও চাকরি হয়নি। আবার লাখ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে কাউকে কাউকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। এনিয়ে বৈঠকে ব্যাপক হৈ চৈ করেন কমিটির সদস্যরা। তাদের সম্মিলিত তোপের মুখে পড়েন রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক।

সদস্যরা দাবি করেন, মন্ত্রী-এমপিদের সুপারিশ উপেক্ষা করে মন্ত্রীর পিএসসহ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা এই নিয়োগ দিয়েছেন। আর এ থেকে তারা কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য করেছেন। এই নিয়োগ বাতিল করে তারা নতুন করে নিয়োগের পাশাপাশি নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনা তদন্তে সংসদীয় সাব কমিটি গঠনের দাবি জানালেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তবে আগামী বৈঠকের আগে রেলওয়ের মহাপরিচালককে সংসদীয় কমিটির সভাপতির কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নোমান। তিনি দাবি করেন, এমপিদের সুপারিশে কোনো প্রার্থীর চাকরি হয়নি। তবে মন্ত্রীর অফিস থেকে তালিকা করে অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে।

মোহাম্মদ নোমানের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে ওয়ার্কাস পার্টির ইয়াসিন আলী ও আওয়ামী লীগের মো. আলী আজগর বলেন, মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিলেও তাদের সুপারিশে কারো চাকরি হয়নি। আলোচনার এক পর্যায়ে এনিয়ে হৈ চৈ শুরু করেন উপস্থিত সদস্যরা।

এসময় রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বলেন, অনেকের সুপারিশই রাখা হয়েছে। সভাপতির সুপারিশ অনুযায়ী তিনজনের চাকরি হয়েছে। তখন সভাপতি আপত্তি জানিয়ে বলেন, তার তালিকা থেকে শেষের দিকের তিন জনের চাকরি হলেও মন্ত্রণালয় থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারপর চাকরি দেওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী চাকরি হলে প্রথম তিন জনের চাকরি হতো।
এরপর কমিটির সদস্যরা সম্মিলিতভাবে মন্ত্রীকে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন। তারা বলেন, ৪ লাখ টাকা দিয়েও চাকরি হয়নি। যারা আরো বেশী টাকা দিয়েছেন তাদেরকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। আগেও এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে কালো বিড়ালের সৃষ্টি হয়েছিলো। যা সরকার ও মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। তাই এবিষয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি। এসময় তারা ওই নিয়োগ বাতিল করে নতুন নিয়োগের ব্যবস্থা করার দাবি জানান। একইসঙ্গে তারা মন্ত্রীর একান্ত সচিব কিবরিয়া মজুমদারসহ নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি তোলেন।

সূত্র জানায়, এনিয়ে তুমুল হট্টগোলের এক পর্যায়ে কমিটির সরকার দলীয় সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী পরিস্থিতি সামাল দেন। তিনি বলেন, ঘটনা যাই হোক এনিয়ে সংসদীয় তদন্ত কমিটি হলে তা নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হবে। যা আমাদের মন্ত্রী ও সরকারের ভাবমূর্তির উপর আঘাত হানবে। তাই এটা না করাই ভালো। পরে মন্ত্রী রেলের মহাপরিচালককে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেন। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর কমিটির বৈঠকে আলোচনা সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক শেষে কমিটি সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। রেলের ডিজিকে আগামী বৈঠকের আগে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এরপর আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া বৈঠকে রেলওয়ের অবৈধ বিলবোর্ড আগামী এক মাসের মধ্যে উচ্ছেদ ও রেলওয়ে একটি হেল্প লাইন চালুর সুপারিশ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এইচএস/একে/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।