নবাব ও বস টু মুক্তি না পেলে সিনেমা হল বন্ধ করে দেয়ার হুমকি


প্রকাশিত: ০৮:০২ এএম, ১৯ জুন ২০১৭

যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‌‘নবাব’ ও ‘বস ২’ ছবি দুটি ঈদে মুক্তি না পেলে দেশের সিনেমা হল মালিকরা বড় ধরণের লোকসানের মুখোমুখি হবেন। এমনটাই আশঙ্ক্ষা করছেন হল মালিকদের সংগঠক চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি ও চলচ্চিত্র বুকিং এজেন্ট সমিতি।

সংগঠন দুটির নেতারা এবং জাজ মাল্টিমিডিয়া রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীরর একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। সেখানে নেতারা বলেন, ‘গেল বছর রমজানের ঈদে দুটি ব্যবসাসফল ছবি শিকারি ও বাদশা আমরা পেয়েছিলাম। ছবি দুটিতে আশাতীত ব্যবসা করায় সিনেমা হল মালিক, বুকিং এজেন্ট, প্রযোজক-পরিবেশক সকলেই লাভবান হয়েছিলাম।

এবার আসছে ঈদে ‘নবাব’ এবং ‘বস ২’ নামে দুটি ছবি মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে অগ্রিম অর্থ বিনিময় করেছি। কিন্তু এবার যৌথ প্রযোজনার ছবির বিরোধিতার নামে একটি মহল এফডিসি-কে কেন্দ্র করে নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। যার কারণে আমরা আতংকিত ও ক্ষুব্ধ।’

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি ও বুকিং এজেন্ট সমিতির নেতারা মনে করেন, ‘এবার সম্পূর্ণ ব্যক্তিস্বার্থে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে যৌথ প্রযোজনার সম্ভাব্য ব্যবসাসফল ছবির বিরোধিতা করে এগুলি মুক্তি দেয়ার ক্ষেত্রে বাঁধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এছাড়া আগামী ঈদে ছবির ব্যবসা নষ্ট করে দেয়ার গভীর ষড়যন্ত্রের সৃষ্টি করছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। তাই চলচ্চিত্রে দুর্দিনে আসন্ন ঈদে ভালো ব্যবসা করতে না পারলে সম্ভাব্য ব্যবসাসফল (নবাব, বস ২) ছবি দুটি চালাতে না পারলে সারা দেশের সিনেমাহল বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন তারা।

তারা এ বিষয়ে বলেন, ‘এই মন্দার বাজারে যদি সিনেমা হল একবার বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে পুনরায় আর কখনোই চালু করা সম্ভব হবে না।’

নিজের বক্তব্য দিতে গিয়ে জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রধান আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমি দেশের চলচ্চিত্রের ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছি। হলে হলে মেশিন দিয়েছি। সিনেমাকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছি। অথচ কিছু অযোগ্য লোক আমাদের বিরুদ্ধেই উঠে পড়ে লেগেছে। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, যদি ‘নবাব’ ও ‘বস টু’ মুক্তি না পায় তবে আমার নিজের ১২টি হল আছে। সেগুলো আমি বন্ধ করে দেবো।’

এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন প্রদর্শক সমিতির নেতা ইফতেখার আহমেদ নওশাদ। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন আপনারা এখানে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন সিনেমা হল বাঁচলে সিনেমা বাঁচবে শিরোনামে। তবে যৌথ প্রযোজনার নিয়ম না মানার অভিযোগে আটকে থাকা দুটি ছবি মুক্তি না পেলে হল বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হচ্ছে কোন নীতিত? আসছে ঈদে ‘রাজনীতি’ ও ‘রংবাজ’ নামে আরও দুটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে। সেগুলোতে কোনো সমস্যা নেই। হল বন্ধ হয়ে গেলে ওই দুটি ছবির কী হবে? এই ছবির প্রযোজক যে টাকা লগ্নি করেছেন তার কথা ভাববেন না?

এর জবাবে প্রদর্শক সমিতির নেতা ইফতেখার আহমেদ নওশাদ বলেন, ‌‘দেখুন ওই দুটি ছবির সঙ্গে আমরা কোনোভাবেই জড়িত নই। আমরা ‘নবাব’ ও ‘বস টু’ ছবির ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত। ছবি দুটোর জন্য বুকিং দিয়ে আমাদের অনেক টাকা লগ্নিও করেছি।’

আপনারা হল মালিক বা বুকিং এজেন্ট। সিনেমার ব্যবসায়ের সঙ্গে আপনারা কেন জড়াবেন? আপনাদের তো উচিত মুক্তির অপেক্ষায় থাকা সবগুলো ছবির সুন্দর ডিস্ট্রিবিউট করা। সব পরিচালক ও প্রযোজকদের পাশে থাকা- এই পাল্টা প্রশ্নের জবাবে হল মালিকদের নেতা নওশাদ বলেন, ‘এইসব প্রশ্ন অবান্তর। হল মালিকরা যেখানে ব্যবসা পাবে সেখানেই যাবে। ‘নবাব’ ও ‘বস টু’ বিগ বাজেটের ছবি। যৌথ প্রযোজনার বিগ বাজেটের ছবি। এগুলো ব্যবসা করবেই। লোকাল ছবিগুলো ব্যবসা করতে পারছে না গেল কয়েক বছর ধরেই।’

আপনি মনে হয় জানেন না গেল বছরের ঈদে ‘বসগিরি’ ও ‘শুটার’ সুপারহিট হয়েছে। সেগুলো কিন্তু লোকালই ছিলো। তবে এই কথা আপনি কেমন করে বলেন? লোকাল ছবি ব্যবসা করে না? শাকিব খানের লোকাল ছবি দেশে চলে না? যদি তাই হতো ‘বসগিরি’ ও ‘শুটার’ কেমন করে হিট করলো। আর ‘রাজনীতি’ ও ‘রংবাজ’ বিগ বাজেটের ছবি। তারমধ্যে ‘রংবাজ’ও যৌথ প্রযোজনার। দুটি ছবিই শাকিব খানের। এই ছবিগুলোর কথা না ভেবে আপনারা সবাই কেবলমাত্র ‘বস টু’ ও ‘নবাব’র মুক্তি নিয়ে এত সিরিয়াস কেন?

অভিজ্ঞতা বলে, এই দুটি ছবি চালিয়েও তো আপনাদের মুনাফা উঠে আসবে। তবে সিনেমা হল বন্ধ করার ঘোষণা দিচ্ছেন কী করে? আপনাদের কী মনে হয় না এই দুটি ছবি নিয়ে আপনাদের বিশেষ অবস্থান বা পক্ষপাতিত্ব রয়েছে? কারণ, হল মালিকরা ও বুকিং এজেন্টরা ইন্ডাস্ট্রির সবার কাছে সমান।

সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে প্রদর্শক সমিতির নেতা ইফতেখার আহমেদ নওশাদ বলেন, ‘ঈদে চারটি ছবি আসবে। যে ছবিতে আমরা স্বস্তিবোধ করবো সেই ছবিই চালাবো।’

যদি তাই হয় আপনাদের নীতি বা সিস্টেম তবে ব্যানারে ‌‘সিনেমা হল বাঁচলে সিনেমা বাঁচবে’ এমন মিথ্যে মানবিকতার স্লোগান আমাদের কেন দেখান? সিনেমা সেন্সর পাওয়ার আগেই আপনারা কিছু ছবি নেয়ার জন্য বুকিং দিয়ে ফেলেন। এবং এটা দেখা যায় যৌথ প্রযোজনা বা সাফটা চুক্তিতে আসা ভারতীয় ছবির ক্ষেত্রে। অথচ লোকাল ছবির প্রতি আপনাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখা যায় না। সেটা শাকিব খানের ছবি হলেও আপনারা এড়িয়ে যান। শাকিব খানকে তারই বিপক্ষে দাঁড় করিয়ে দেন। এটা কি ঠিক?

সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে ক্ষেপে যান হল মালিক নেতা। তিনি সাংবাদিকদের তথাকথিত চলচ্চিত্র পরিবারের হয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করছেন বলে দাবি করেন। এই মন্তব্যে সাংবাদিকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করে অনুষ্ঠান ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে আব্দুল আজিজ, নাদের চৌধুরী ও শিবা সানুর মধ্যস্থতায় সাংবাদিকরা অনুষ্ঠানে পুনরায় যোগ দেন।

এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রদর্শক সমিতির নেতা ইফতেখার আহমেদ নওশাদ, নাদের চৌধুরী, শাকিব খান, প্রযোজক আবদুল আজিজ, মোহাম্মদ ইকবাল, চিত্রনায়ক ফেরদৌস, অমিত হাসান, আরেফিন শুভ, রোশান, চিত্রপরিচালক কাজী হায়াত, চিত্রনায়িকা মিষ্টি জান্নাত, বিপাশা কবির, পিয়া বিপাশা ও প্রমুখ।

এনই/এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।